ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাওনা পেয়েছেন ১১৩৭ জন

মালয়েশিয়ায় মামলা করে তিন কোটি টাকা আদায়

প্রকাশিত: ১০:২০, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  মালয়েশিয়ায় মামলা  করে তিন কোটি  টাকা আদায়

ফিরোজ মান্না ॥ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির একটি বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে কর্মীদের ৩ কোটি টাকার বেশি বকেয়া বেতন আদায় করেছে। বিদেশে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। বৃহত্তর কোম্পানি ‘ডব্লিউ আরপি’ দেশটির হাইকোর্ট দেউলিয়া ঘোষণা করে ‘লিকুইডিটর’ নিয়োগ করে দেয়। ওই কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার কর্মী কাজ করতেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার কর্মী ছিলেন। দীর্ঘদিন তারা কোম্পানি থেকে কোন বেতন ভাতা পাননি। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য মামলা দায়ের করে। মামলার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ কর্মীদের পাওনা পরিশোধ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে পাওনা টাকা পেয়েছেন ১১৩৭ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা সম্প্রতি জনকণ্ঠকে জানান, মালয়েশিয়ায় আমরা একটি যুগান্তকারী কাজ করেছি। দেশটিতে ডব্লিউ আরপি নামের একটি কোম্পানিতে বাংলাদেশের ২ হাজারের মতো কর্মী কাজ করতেন। হঠাৎ করে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের কয়েক হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েন। পরে দেশটির সরকার ওই কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আমরা হাইকমিশনের মাধ্যমে কর্মীদের বকেয়া বেতন ভাতা আদায়ের জন্য কোর্টে যাই। কোর্ট সব কর্মীদের বেতন ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। এরপর বাংলাদেশের ১১৩৭ কর্মী এ পর্যন্ত তাদের সমস্ত বেতন ভাতা পেয়ে গেছেন। বাকিরাও তাদের পাওনা পেয়ে যাবেন। বিদেশে কর্মীদের বকেয়া বেতন ভাতা আদায় করার এটাই প্রথম ঘটনা। এ পর্যন্ত ৩ কোটি টাকার বেশি টাকা কর্মীরা পেয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার বৃহত্তর এই কোম্পানিকে দেশটির হাইকোর্ট দেউলিয়া ঘোষণা করে লিকুইডিটর নিয়োগ করে বেশ কয়েক মাস আগে। ফলে কারখানায় বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েন। বেকার কর্মীরা বেতনের দাবিতে প্রায়ই কারখানা ঘিরে রাখতেন। পরে দেশটির আদালত হস্তক্ষেপ করে। ওই কোম্পানিতে সরকার মনোনীত একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। পরে কিছু কর্মীর বেতন পরিশোধ করার উদ্যোগ নেয়। এতে উল্টো ফল দেখা দেয়। সম্প্রতি ‘টায়েল পার্টনার্স’ নামক একটি কোম্পানি ২২ মিলিয়ন রিঙ্গিত বিনিয়োগ করে ডব্লিউ আরপি গ্রপের দায়িত্ব নিয়ে কর্মীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার কর্মী ওই কারখানায় কাজ করতেন। সেখান থেকে ১১৩৭ জনের বেতন ভাতা পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। বাকিদেরও বেতন ভাতা পরিশোধ করা হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, লিকুইডিটরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ও লেবার ডিপার্টমেন্ট, কোম্পানি এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মিশন নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী মাসে মালয়েশিয়ার লেবার মিনিস্ট্রির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে নিযুক্ত আইনী সংস্থার থমাস ফিলিপ জানিয়েছেন, কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘এল পার্টনার্স’ কোম্পানির সব দায়িত্ব নিয়েছে। আইনজীবী ম্যাথিউ থমাস ফিলিপ জানান, এটি কোম্পানির জন্য একটি ভাল সিদ্ধান্ত। এখন বন্ধ কারখানা সচল করবে এবং কর্মী, পাওনাদার এবং অন্য সংস্থার বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারবে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় সব রফতানি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষা করে ১ জানুয়ারি ২০২১ সালের মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। ফলে আর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে না। সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের শুরুতে ২ হাজার নেপালী কর্মী বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানা অবরোধ করলে বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্ট সরেজমিন তদন্ত করে জানতে পারে কর্মীদের সময়মতো বেতন না দেয়া, বেতন আটকে রাখা, ওভার টাইম না দেয়া, অযৌক্তিকভাবে বেতন থেকে কর্তন, অন্যায়ভাবে সরকারী ছুটির দিনে বা বন্ধের সময় কাজ করিয়ে নেয়াই ছিল ওই কোম্পানির কাজ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী কর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টরা লিকুইডিটরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশীসহ সকল বিদেশী কর্মীদের মানবিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আইনগতভাবে সহায়তা প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছে কোম্পানিটি। বর্তমানে কোম্পানিটিতে নতুন প্রধান নির্বাহী নিয়োগও দেয়া হয়েছে।
×