ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

নাটোরে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২২ জানুয়ারি ২০২০

 নাটোরে আওয়ামী লীগ নেতার  বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ২১ জানুয়ারি ॥ সিংড়া উপজেলার লালোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার নামে বেকার তরুণ-তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণা করে অর্থ আত্মাত এবং অধ্যাপক না হয়ে নিজেকে অধ্যাপক পরিচয় দেয়ায় এলাকাবাসী তার নাম রেখেছেন ‘ভেজাল কালাম’। ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তার শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর গণআবেদন করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার লালোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক থাকাকালে আবুল কালাম আজাদকে টাকা দিয়ে দুই চারজনের চাকরি হয়েছে। আবার চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে পাচ্ছেন না, এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা অন্তত ১০ জন যারা মৌখিকভাবে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। পাঁচ ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে, যারা অনেক দেনদরবারের পর আংশিক টাকা ফেরত পেয়েছেন। আবার সিংড়া থানায় মুচলেকা দিয়েই টকা পরিশোধ না করে উল্টো পাওনাদারকে হুমকি ধামকি এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানির করার অভিযোগ রয়েছে কালামের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০১২ সালে লালোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু শিক্ষক ও দফতরি নিয়োগ হয়। এ সময় শিক্ষক দফতরি নিয়োগ দেয়ার নামে স্থানীয় আবেদনকারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দেন। কিন্তু চাকরি দিতে পারেননি। কালামে সত্তরোর্ধ হাজী সদর উদ্দীন ২০১২ সালে ছেলের বউকে ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরির জন্য জমি বিক্রি করে কালামকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। দুই বছর তার পেছনে ঘোরার পর চাকরি দিতে না পারলেও টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে। পরে ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি সিংড়া থানায় প্রতারণার অভিযোগ করলে কালাম এক মাসের মধ্যে সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দেবে বলে স্বহস্তে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তিনি টাকা ফেরত পায়নি। টাকা ফেরত চাইলে ভেজাল কালাম এবং তার অনুগতরা হুমকি ধামকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি। বৃদ্ধ সদর উদ্দীনসহ পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার পর্যন্ত করানো হয়েছে। একইভাবে উপজেলার নগর মাঝগ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক আমির চাঁদের ছেলে আহসান হাবিবকে ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৬ লাখ টাকা নেন । নলবাতা গ্রামের জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মধ্যস্থতায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত পেলেও এখনও ৫০ হাজার টাকা পায়নি। একই কায়দায় ডাকমন্ডপ গ্রামের কাউছার হোসেনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা, হাঁপানিয়া গ্রামের আমির হোসেনের কাছ থেকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এতদিনেও চাকরি হয়নি কারও। ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে টাকা ফেরত পাওয়া তো দূরের কথা উল্টো হুমকি ও অপদস্তের শিকার হয়েছেন তারা। সম্প্রতি কালাম এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী ডাকমন্ডপ কালীমাতার মন্দির মার্কেটে গিয়ে জনসম্মুখে ব্যবসায়ীদের গিয়ে হুমকি দেন এখানে কোন দোকান থাকবে না এবং মন্দির রাখা হবেনা। সব কিছু গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যবসায়ীরা মার্কেট বন্ধ করে দেয়। পরে সিংড়া থানায় সমঝোতায় বসলে কালাম মন্দিরের সেবায়েত এবং নাটোর আদালতের সিনিয়র আইনজীবী বিলাস চন্দ্র সরকারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তারপর থেকে লালোর ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে দাবি করেন ডাকম-প কালীমন্দিরের সভাপতি ও আইনজীবী বিলাস। লালোর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, ‘টাকা দিয়ে চাকরি না পাওয়া, টাকা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে চাকরি দেয়ার অভিযোগ অনেকেই করেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের ভেতরে ক্ষোভ আছে। বিষয়টি দলের উর্ধতনদের জানানো হয়েছে।’ আবুল কালাম আজাদ জানান, দলেরই একাংশ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
×