ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মৃতদেহের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আটজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে’

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২১ জানুয়ারি ২০২০

‘মৃতদেহের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আটজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হলে অনেক মরণাপন্ন মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেন, একটি মৃতদেহের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আটজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। মৃতদেহের ফুসফুস, হৃৎপিন্ড , যকৃৎ, মূত্রগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও খাদ্যনালির নিম্নাংশ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মৃতদেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন এখনো শুরু হয়নি। ধর্মীয় দিক চিন্তা করে মানুষ এটা করেন না। এ জন্য সচেতনতা দরকার। এটাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। যারা মরণোত্তর অঙ্গ দান করবেন, তাদের উচ্চ মর্যাদায় স্থান দিতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মরণোত্তর দেহদান ও সংযোজন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন। কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন, সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন ও ইউরোলজি এ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম , কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এ্যান্ড ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হারুন আর রশিদ, ইউরোলজি এ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন,বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এম এ সালাম, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বিএসএমএমইউর অধ্যাপক এ কে এম আক্তারুজ্জামান, অধ্যাপক এ কে এম খুরশিদুল আলম প্রমুখ। মরণোত্তর অঙ্গ দানে উৎসাহিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি একটি জীবন বাঁচানোর সঙ্গে জড়িত। এটি অত্যন্ত গুরুত্বিপূর্ণ একটি বিষয়; যদিও অনেক দেরিতে এটি শুরু হচ্ছে। মরণোত্তর দেহদান নিয়ে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সচেতনতা তৈরির কাজ করতে পারেন। এ জন্য সবার প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা দরকার। মরণোত্তর দেহদানবিষয়ক আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, আমরা এত দিন জীবিত মানুষ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছি। এখন মৃতদেহ থেকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছি। উন্নত বিশ্বে ৯০ ভাগ কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে। মৃতদেহ থেকে অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপনের জন্য মরণোত্তর দেহদানবিষয়ক আইনের আলোকে ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কিছু প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে, যাতে মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ে। এটি কার্যকর হলে স্বল্প খরচে একটি মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে। অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, একটি মৃততদেহের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আটজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। মৃতদেহের ফুসফুস, হৃৎপি-, যকৃৎ, মূত্রগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও খাদ্যনালির নিম্নাংশ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মৃতদেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন এখনো শুরু হয়নি। ধর্মীয় দিক চিন্তা করে মানুষ এটা করেন না। কিন্তু এ জন্য সচেতনতা দরকার। এটাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। যাঁরা মরণোত্তর অঙ্গ দান করবেন, তাঁদের উচ্চ মর্যাদায় স্থান দিতে হবে। মরণোত্তর অঙ্গদান বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা। যারা অঙ্গ দান করবেন, তাদর জাতীয়ভাবে মর্যাদা দেওয়া হলে এটি আরও মানুষের মধ্যে উৎসাহ বাড়াবে।
×