ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শার্শায় গৃহবধূ ধর্ষণে এসআই খায়রুলের সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২১ জানুয়ারি ২০২০

শার্শায় গৃহবধূ ধর্ষণে এসআই খায়রুলের সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের শার্শায় গৃহবধূ ধর্ষণে পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) খায়রুল আলমের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আটক এক আসামির জবানবন্দি, ডিএনপি টেস্টের ফলাফল ও তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। আটক এক আসামির ধর্ষণে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। খুব শিগগির আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন তদন্ত কর্মকর্তা। জানতে চাইলে পিবিআই যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তদন্তে ধর্ষণের ঘটনায় এসআই খায়রুল আলমের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এজাহারে নাম না থাকলেও এসআই খায়রুল আলমের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সেখানেও প্রমাণ মেলেনি। আটক এক আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। শিগগির চার্জশিট দেওয়া হবে। তখন অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের মাদক মামলায় গ্রেফতার এক আসামির বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শার্শা থানায় মামলা হয়। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত একজনকে আসামি করা হয়। এই মামলার আসামি শার্শার লক্ষণপুর গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে আবদুল কাদের, আবদুল কাদেরের ছেলে আবদুল লতিফ, চটকাপোতা গ্রামের হামিজ উদ্দিনের ছেলে কামরুলকে। এই ঘটনায় স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুল আলমের নাম ভিকটিম বললেও মামলায় অজ্ঞাত দেখানো হয়। মামলা প্রথমে শার্শা থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হুসাইনের আদালতে আসামি আব্দুল লতিফ আদালতে গৃহবধূ ধর্ষণের স্বীকারোক্তি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শেখ মোনায়েম হোসেন জানান, তদন্তকালে মোবাইল কললিস্ট পর্যালোচনা, সন্দেহভাজন অন্যান্য ব্যাক্তিদের সাথে ফোনের যোগাযোগ এবং অফিসিয়াল অন্যান্য নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে ঘটনার দিন বাদীর উল্লেখিত ঘটনাস্থলে এসআই খায়রুল আলম ছিলেন না। এছাড়া এসআই খায়রুল আলম ও তার কথিত দুইজন সোর্সের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় এসআই খায়রুল আলমের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় নাই। আটক আসামিদের একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, বাদীর দায়েরকৃত অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তিন আসামিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদশেষে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। তাদের মধ্যে একজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এছাড়া গ্রেফতার তিন আসামির ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামি বাদীর পূর্ব পরিচিত এবং পারিবারিকভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক হয়। ঘটনার পূর্বেও তাদের মাঝে একাধিকবার শারীরিক মিলন হয় মর্মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায়। ডিএনএ পরীক্ষায় স্বীকারোক্তি দেওয়া অভিযুক্ত ব্যাক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। অন্য দুইজন আসামি তারাও বাদীর পূর্ব পরিচিত। উভয়ের সাথেই বাদীর একাধিক বিষয় নিয়ে আগে থেকেই শত্রুতার ছিল। স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামি বাদীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বাদীর স্বামীকে মাদক মামলা হতে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য প্রলোভন দেয়। বাদী জেলখানায় তার স্বামীর সাথে ঘটনার একদিন আগে দেখা করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী তদন্তে দেখা যায়, ঘটনার দিন বাদী স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামীকে ফোন করে এবং পূর্বপরিকল্পনানুযায়ী উভয়ে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হন। বাদী নিজ মোবাইলে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে ঘটনার দিন ফোন করেন। যা সিডিআর পর্যালোচনায় সত্যতা পাওয়া যায়। ঘটনার রাত্রে বাদীর সাথে একই ঘরে তার বড়ভাইয়ের মেয়ে অবস্থান করছিল। বাদীর মোবাইল থেকে ভিকটিমের ভাইয়ের মেয়ে তার স্বামীর সাথে একাধিকবার মোবাইলে কথোপকথনে প্রমাণিত হয়। এছাড়া বাদীর স্বামী মাদক মামলায় জেলখানায় থাকার পর হতেই তার বড়ভাইয়ের মেয়ে তার সাথে একই ঘরে রাত্রিযাপন করতেন।
×