ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চৌগাছায় খালের পাটা উচ্ছেদ করলেন ইউএনও

প্রকাশিত: ০২:৪২, ২১ জানুয়ারি ২০২০

চৌগাছায় খালের পাটা উচ্ছেদ করলেন ইউএনও

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের চৌগাছায় সরকারি খালের অবৈধ পাটা উচ্ছেদ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর খালের দখলদার হিসেবে গ্রামবাসির নামে মামলা করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার কালিয়াকুন্ডি গ্রামে সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করায় বোরো ধান চাষ করতে পারছেন না গ্রামবাসী। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম গত ২ জানুয়ারি আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ওই খালের অবৈধ বাঁধ তুলে দেন। বাঁধ তুলে দেয়ার পর মাছ লুটের অভিযোগে খালের দখলদার মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী জুল হোসেন ৬ জানুয়ারি গ্রামের ৫ জনের বিরুদ্ধে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন। মামলায় আসামিরা হলেন, কালিয়াকুন্ডি গ্রামের মৃত সোলাইমানের ছেলে আব্দুল মজিদ, মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আয়ুব হোসেন, হেরমত আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার, সৈয়দেল হক কাজীর ছেলে ওমর আলী কাজী ও মানিক মন্ডলের ছেলে আলী হোসেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কালিয়াকুন্ডি গ্রামে রাজারকাটা খাল থেকে বারো মাসের খাল পর্যন্ত সরকারি খালে অবৈধভাবে বাধ দিয়ে পানি আটকিয়ে মাছ চাষ করছে ৩ ব্যক্তি। খালের পানি বের হওয়ার পথও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে খাল পাড়ের ৮ গ্রামের পানি বের হতে পারছে না। এতে কয়েকশ’ বিঘা জমিতে চলতি বছর বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়ে। কালিয়াকুন্ডির সুলাইমান হোসেন জানান, খালের পাড়ে তার জমি আছে। আগে ওই জমিতে তিনি বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল ফলাতে পারতেন। কিন্তু এখন তারা কোন আবাদ করতে পারছেন না। গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মুজিদ বলেন, তার গ্রামের অনেক মানুষের জমি রয়েছে খালের পাশে। প্রভাবশালী মহল মাছ চাষ করায় তারা এখন ধান চাষ করতে পারছেন না। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানান, অবৈধ খালের বাধ উচ্ছেদ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অথচ খালের দখলদার জুল হোসেন গ্রামবাসির নামে মামলা দিয়েছেন। এ নিয়ে রবিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ে মামলার বাদী এবং আসামি পক্ষকে নিয়ে মীমাংসায় বসেন। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজ বলেন, বৈঠকে বাদী জুল হোসেন ও গ্রামবাসী উভয় পক্ষ থেকে গ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় একমত হয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই আর কোন মামলা করবেন না। জুল হোসেন তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। মামলার বাদী জুল হোসেন বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা পাটা তুলে দেয়ায় এলাকাবাসী আমার ৩৫ লাখ টাকার মাছ লুট করেছে। এজন্য তাদের নামে মামলা করেছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২ জানুয়ারি অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদের সময় মামলার বাদী জুল হোসেন তার মাছ চাষের সম্পত্তি বিভিন্নজনের কাছ থেকে লিজ নেয়া দাবি করলেও নিজের পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, এই ১/১ তফসীলভূক্ত সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করতে যাচাই বাছাই পূর্বক রেকর্ড সংশোধনী মামলা (মিস কেস) করে সরকারের অনুকূলে ফিরিয়ে আনা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, কালিয়াকুন্ডি মৌজায় ৬২২ নং দাগ ১/১ খাস খতিয়ান হিসেবে সরকারি রেকর্ডভূক্ত ছিল। যেখানে জমির পরিমান ৭.৭৭ একর (প্রায় ২৫বিঘা)। ২০১৬/১৭ সালে উপজেলা ভূমি অফিস হতে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।
×