ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে কলেজছাত্রীকে অবরুদ্ধ রেখে নির্যাতন ॥ শ্বশুর-দেবর গ্রেফতার, রিমান্ড আবেদন

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০২০

মুন্সীগঞ্জে কলেজছাত্রীকে অবরুদ্ধ রেখে নির্যাতন ॥ শ্বশুর-দেবর গ্রেফতার, রিমান্ড আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের রামপাল কলেজের ছাত্রী লাবণী আক্তার আঁখিকে অবরুদ্ধ রেখে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় শ্বশুর ও দেবর গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ সোমবার সকালে হাতিমারা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর রুহুল আমিন ভূইয়া (৫৫) ও দেবর রিফাত ভূইয়াকে (২১) গ্রেফতার করেছে। পরে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে পিতা ও পুত্রকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে নির্যাতনের কারণে অন্ধ হয়ে যাওয়া কলেজছাত্রী আঁখি সোমবার রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। শ্বাসনালীতে সমস্যা হওয়ায় তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক পরবর্তীতে আঁখিকে ঢাকায় রেফার্ড করে দেয়। রাতের বেলায় এই রোগী নিয়ে কোথায় যাবে? দরিদ্র পরিবারটি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে রেফার্ড বাতিল করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আঁখিকে ভর্তি রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সিভিল সার্জনকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সাধ্য অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করবেন। সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় এই সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। মামলা নং ৪৮ (০১)২০। যৌতুকের জন্য মারপিট করে গুরুতর জখম করার অপরাধে মামলাটি রুজু করা হয়। মামলার বাদী হয়েছেন আঁখির পিতা আব্দুর রহিম। এই মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান জানান, এর মধ্যে প্রধান আসামি আঁখির স্বামী হৃদয় ভূইয়া (২৪) ও তিন নম্বর আসামি মাহফুজা বেগমকে (৫০) পুলিশ গ্রেফতারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আত্মগোপনে রয়েছে। ওসি জানান, গত ১৪ জানুয়ারি আঁখির পিতা আব্দুর রহিম বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করার আদেশ প্রদান করেন। ওসি জানান, কিন্তু আদেশটি থানায় পাঠানো হয়নি। কোন কারণে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে সোমবার সকালে থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা গিয়ে হাতে হাতে আদেশটি এনে তারপর মামলাটি গ্রহণ করা হয়। মুন্সীগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দিন জানান, আদালতের মাধ্যমে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। সদর থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মুন্সীগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের ১৪ জানুয়ারির আদেশ ১৯ জানুযারি পর্যন্ত কেন কয়েক শ’ গজ দূরের থানায় পৌঁছেনি। পরে পত্রিকায় রিপোর্ট দেখে থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা এসে আদেশ গ্রহণ করতে হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আদেশ পৌঁছতে কেন এই বিলম্ব ? উত্তরে কোর্ট ইন্সপেক্টর বলেন, এই ঘটনায় কোর্ট পুলিশের কোন ব্যর্থতা নেই। এটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে এই অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতা চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
×