ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক পরিচালনাকারীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২১ জানুয়ারি ২০২০

 ব্যাংক পরিচালনাকারীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার॥ ঋণখেলাপীদের পুনর্তফসিল সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা বহাল রেখে হাইকোর্ট যে রায় ঘোষণা করেছিল তার পূর্ণাঙ্গ রায় বের হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, টেকসই অর্থনীতি রাখতে পরিচালনা পর্ষদসহ ব্যাংক পরিচালনকারীদের অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করতে হবে। এটি মনে রাখতে হবে যে সমস্ত ব্যাংক আমানতকারীদের ও পাবলিক অর্থ নিয়ে ব্যবসা করছে এবং তাই পরিচালনা পর্ষদসহ তাদের পরিচালনা অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহি করতে হবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ নবেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। সম্প্রতি ওই মামলার ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে তা দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট তার রায়ে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে খেলাপী ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করে তার মেয়াদ তিন মাস ( ৯০ দিন) বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে এসব ঋণ খেলাপীদের নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১২ সালের ‘মাস্টার সার্কুলার অন লোন রিসিডিউলিং’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ৩ নবেম্বর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। এরপর রিটকারীদের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ২৪ জুন এ স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ানো হয়। পরে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপীল বিভাগে আবেদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ জুলাই আপীল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানোর আদেশ দেন। চেম্বার জজ আদালত ৮ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে। ৮ জুলাই এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ানো হয়। আপীল বিভাগ তখন বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চকে রুল নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপীর তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রুল জারি করে। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ২৪ জুন হাইকোর্টে ঋণখেলাপীদের তালিকা দাখিল করা হয়। এ রিটের সঙ্গে সম্পূরক আবেদন হিসেবে ঋণখেলাপীদের সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছিল তা স্থগিতে আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। ২০ অক্টোবর ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে খেলাপী ঋণ পরিশোধের যারা সুযোগ গ্রহণ করবেন তারা অন্য কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশের মেয়াদ আরও এক মাস অথবা এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যেটা আগে শেষ হয়। শেষ পর্যন্ত আগেই শুনানি শেষ হয়েছে। অবশেষে ৩ নবেম্বর রায়টি ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্টের রায়ে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুরবস্থা নিরসনে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। সেখানে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে বিশেষজ্ঞদের এই কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের এমডি থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ পদে নিয়োগের বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×