ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেছাল সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২১ জানুয়ারি ২০২০

পেছাল সিটি নির্বাচন

পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচন তথা জনগণের ভোট একটি উৎসব। যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত ও সভ্য দেশেও ব্রেক্সিট নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। যুক্তরাষ্ট্রেও শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তোড়জোড়। বাংলাদেশেও যে ব্যতিক্রম হবে তা আশা করা বাতুলতা। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হোক, কিংবা সিটি নির্বাচন অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন-প্রায় সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায় প্রবল উৎসবের আমেজ ও আবহাওয়া। রাজধানীর দুই সিটি নির্বাচনেও লেগেছে তুমুল নির্বাচনী উত্তাপ। স্বস্তির কথা এই যে নির্বাচনী পরিবেশ এখনও পর্যন্ত বেশ ভাল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। ছোট দলগুলোর কথা বাদ দিলেও বড় দুটো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে একেবারে আদাজল খেয়ে। এ যেনÑ ‘কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান।’ ব্যক্তিগত ক্ষোভ বিদ্বেষ কুৎসা রটনা পোস্টার ছেঁড়াছেঁড়ি অদ্যাবধি সীমা ছাড়িয়ে যায়নি। তবে একগুঁয়ে মনোভাব বজায় রাখলেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর আন্দোলন, রাজপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সমর্থন এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর পর সিটি নির্বাচন একদিন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণে বাধ্য হয়েছে ইসি। অবশ্য এর জন্য জায়গা করে দিতে এসএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে দিতে হয়েছে, যা শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। মহান একুশে গ্রন্থমেলাও একদিন পিছিয়ে শুরু হবে ২ ফেব্রুয়ারি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যাই দিক না কেন বাস্তবতা হলো, ইসি যখন নির্বাচনের দিন তারিখ চূড়ান্ত করে তখন তাদের সামনে ইংরেজী ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলা পঞ্জিকা থাকা অপরিহার্য ছিল। হিন্দু ধর্মের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা যেহেতু শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রিক এবং ভোটকেন্দ্রেগুলোও তাইÑ সেহেতু একইদিনে দুটো উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করা মোটেও সহজ ছিল না। যা হোক, নির্বাচনের দিন পিছিয়ে নিয়ে ইসি সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে। এখন দেখার অপেক্ষা বাকি কাজগুলো যেন সম্পন্ন হয় ভালয় ভালয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় একাধিক নালিশ নিয়ে হাজির হচ্ছে বিএনপি মেয়রপ্রার্থীদ্বয় অথবা তাদের প্রতিনিধিরা নিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে। অথচ নিজেরাই তারা প্রতিদিন সেই বিধি ভঙ্গ করে চলেছে অবলীলায়। যেমন, রাস্তাঘাট বন্ধ করে বা যানচলাচল ব্যাহত করে পথসভা ও জনসভা করা যাবে না। এর বাইরেও রয়েছে পোস্টার ছাপানো, মাইক বাজানো ইত্যাদি। কিছুটা দৃষ্টিকটু ও পীড়াদায়ক হলেও নির্বাচন উৎসবকে কেন্দ্র করে এসব কমবেশি থাকবে। আওয়ামী লীগও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে শেষ পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকা অত্যাবশ্যক নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে। আর বিএনপিকেও ইভিএম নিয়ে অহেতুক ভীতি দূর করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হয় সারা বিশ্বে। সর্বাগ্রে সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, রাজধানীর সমস্যা কম নয়। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির প্রমাণ দিতে গিয়ে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার বড় বড় সুউচ্চ দালানকোঠা, সুপার মল, সুপার মার্কেট, বহুতল হাউজিং কমপ্লেক্স। বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার, হাইওয়ে, আন্ডারপাস, মেট্রোরেল এবং ততোধিক বস্তি। এক হিসাবে জানা যায়, ঢাকায় ৩৫ শতাংশ মানুষ বস্তিবাসী। প্রায় দুই কোটি অধিবাসী অধ্যুষিত রাজধানীতে নেই পর্যাপ্ত আবাসন, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সর্বোপরি গ্যাস-পানি-বিদ্যুত, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তদুপরি মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি-বাস, ট্রাক, টেম্পো, লরি, মাইক্রো, প্রাইভেটকার, লেগুনা ইত্যাদি। সেই অনুপাতে নেই খোলা জায়গা, মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্ক, গাছপালা, নদী-নালা। সুতরাং ঢাকার বায়ুদূষণ যে বিশ্বে সর্বাধিক মাত্রায় হবে, তাতে আর বিচিত্র কি? শুধু নেই মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান ও ব্যবস্থা। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে নবনির্বাচিত মেয়রদ্বয় ও কাউন্সিলরদের এসব সমস্যার সমাধানে আন্তরিক মনোনিবেশ করতে হবে। রাজধানীর যানজট সমস্যা, জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন, মশকনিধন, ফুটপাথ ও বস্তি উচ্ছেদ সর্বোপরি ডেঙ্গুর ভীতি থেকে রক্ষা করতে হবে রাজধানীবাসীকে। বিজয়ীরা যেন এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কখনই ভুলে না যান।
×