ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পুরস্কার প্রদানে সমাপ্তি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২০ জানুয়ারি ২০২০

  পুরস্কার প্রদানে সমাপ্তি আন্তর্জাতিক  চলচ্চিত্র উৎসবের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ হলো দেশ-বিদেশের সিনেমা দেখার অনন্য আয়োজন অষ্টাদশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। নয়দিনের উৎসবের দর্শকরা উপভোগ করলেন ৭৪ দেশের ২২০ চলচ্চিত্র। বিভিন্ন বিভাগের এসব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। সেসব চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে বিচারকদের রায়ের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে শেষ হলো উৎসব। ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নয় দিনব্যাপী উৎসবের শেষদিন ছিল রবিবার। এদিন বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান উৎসবটির আয়োজন করে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিপ্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণের পাশাপাশি গান গেয়ে শোনা ভারতের নির্মাতা, গায়ক ও অভিনেতা অঞ্জন দত্ত। সমাপনী আয়োজনে উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্রসহ পাঁচটি শাখার মোট ১১ বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছে ইরানী ছবি ‘ক্যাসেল অব ড্রিম’। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগের নির্মাতা রেজা মিরকারিমি নির্মিত ছবিটি পেয়েছে এক লাখ টাকার পুরস্কার। বাংলাদেশ প্যানোরমা ফিপ্রেসি জুরি এ্যাওয়ার্ড জিতেছে তানিম রহমান অংশ নির্মিত ছবি ‘নডরাই’। সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগে দর্শকের রায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত ভারতের অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ছবি ‘ফাইনালি ভালোবাসা’। উইমেন্স ফিল্ম মেকার সেকশনে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে মেক্সিকোর সান্ড্রা রাইনোসো নির্মিত ছবি ‘ভিডিও টেপ’ জিতে নিয়েছে বিশেষ পুরস্কার। একই বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে পুরস্কার জিতেছে রাশিয়ার দারিয়া বিনেভসকায়া নির্মিত ছবি ‘মাই নেম ইজ পিতায়া’। একইভাবে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে পোল্যান্ডের ম্যালগোরজাতা ইমিয়েস্কা নির্মিত ছবি ‘অল ফর মাই মাদার’। স্পিরিচুয়াল বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য পুরস্কার জিতেছে লুভরো মেরডেন নির্মিত ছবি ‘দ্য স্ট্যাম্প’। একই বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার জিতেছে চীনের ইয়েসির নির্মিত ছবি ‘কোয়ালি এ্যান্ড রাইস’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকের পৃথিবীতে ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষগুলোও যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে! মানুষ যাতে ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্র না হয়, মানুষ যেন মানুষ থাকে, মানুষের মানবিকতা যেন লোপ না পায়, মানুষের মধ্যে যেন মনুষত্ব হারিয়ে না যায়, সেক্ষেত্রে চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চাই। শুধুমাত্র উন্নত রাষ্ট্র গঠন করে উন্নতি করা সম্ভব নয়, এজন্য মানুষের মানবিকতারও উন্নতি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেএম খালিদ বলেন, চলচ্চিত্র সমাজকে পরিবর্তন করা সবচেয়ে বড় এবং সহজ মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। কেন না চলচ্চিত্র খুব সহজে মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসতে পারে। একটা সময় ছিল চলচ্চিত্র পারিবারিক সম্পর্কে দৃঢ় করার মাধ্যমও ছিল চলচ্চিত্র। যা সকলের মাঝে সম্পর্কের একটা সেতু বন্ধন তৈরি করত। ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ না হওয়া এখন আমরা সেই চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। ভাল কলাকুশলীও তৈরি হচ্ছে না। হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে চলচ্চিত্রকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। উৎসব পরিচালক আহমদ মুজতবা জামাল বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্র ও শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে আমাদের এই উৎসব আয়োজন। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক প্লাটফরম তৈরি করারও একটা উদ্দেশ্য কাজ করে। শুধু তাই নয়, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রর দর্শক বা চলচ্চিত্র প্রেমীদের ভাল কিছু দেয়ার চেষ্টা করে আসছি।
×