ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত হবে এটি

পর্যটন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বদলে যাবে দেশের চেহারা

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২০ জানুয়ারি ২০২০

  পর্যটন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বদলে যাবে দেশের চেহারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পর্যটনের মহাপরিকল্পনা তৈরির পর সেটার বাস্তবায়ন ঘটালে বদলে যাবে দেশের চেহারা। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে মানুষ চিনবে নতুন রূপে। শুধু কক্সবাজার আর সুন্দরবনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না পর্যটনের গন্তব্য, সেটা ছড়িয়ে পড়বে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিম-লের বিশাল ক্ষেত্রে। এই মহাপরিকল্পনাটি শুধু সরকারই ব্যবহার করবে না। বেসরকারী অপারেটরসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই গাইড লাইন অনুযায়ী পর্যটন খাতে কাজ করার সুযোগ পাবেন। তখন সত্যিকার অর্থেই দেশের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে পর্যটন শিল্প। পর্যটনের জন্য আগামী ২০ বছরের মহাপরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে এসে আমন্ত্রিত অতিথিরা এ ধরনের মতামত প্রকাশ করেন। রবিবার সিরডাপ মিলয়াতনের এ অনুষ্ঠানে মহাপরিকল্পনার ওপর বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন পরামর্শক কোম্পানি আইপিই গ্লোবাল লিমিটেডের প্রধান বেঞ্জামিন কেরী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, মহাপরিকল্পনায় বদলে যাবে দেশের পর্যটন শিল্পের চিত্র। ২০২১ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের নতুন যুগে প্রবেশ করবে। এ খাতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপক সম্ভাবনার সূচনা হবে, বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে পর্যটন উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতে হবে, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। গতানুগতিক কাজ করে পর্যটনের উন্নয়ন করা যাবে না। আমরা চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন। মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন মহাপরিকল্পনা একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এতে সকলের অংশগ্রহণ জরুরী। মহাপরিকল্পনাটির অংশীদার সমগ্র জাতি। সরকারী-বেসরকারী সব স্টেকহোল্ডারকে এ কাজে আন্তরিকভাবে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছি। কেননা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটনে উন্নত দেশগুলোর সমকক্ষ হতে হলে আমাদের সুচিন্তিতভাবে কাজ করতে হবে। পর্যটকদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যটক বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণ নির্ণয় করা জরুরী। আমাদের ট্যুরিজম মাস্টার প্লানে সেই নির্দেশনা থাকবে, একই সঙ্গে এ থেকে উত্তোরনের পথও চিহ্নিত করা হবে। পর্যটন উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের অনেক সেক্টরের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পর্যটন উন্নয়ন হলে পরিবহন সেক্টর, হোটেল মোটেল, রেস্টুরেন্ট, কারুপণ্য বিকশিত হবে। কর্মসংস্থান হবে বিপুলসংখ্যক মানুষের। তিনটে পর্যায়ে এই মহাপরিকল্পনার কাজ আগামী বছরের জুনের আগেই শেষ হবে বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব বলেন, প্রথম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এর শক্তি কতটুকু, দুর্বলতা কোথায়, সম্ভাবনা কেমন, কোন ধরনের সঙ্কট রয়েছে। দেশের পর্যটন উন্নয়নের জন্য সব পর্যটন আকর্ষণ ও পর্যটন সম্পদ চিহ্নিত করা হবে। তদুপরি বেসরকারী অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করা হবে এবং মতামত নেয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে- বাংলাদেশের পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস এবং লিংকেজ। এ পর্যায়ে বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়ন, প্রমোশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩, ৫ এবং ১৫ বছর মেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। প্রোডাক্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হবে। অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। বিপণন ও প্রমোশনাল কৌশল নির্ধারণ করা হবে। বিশেষ অতিথি সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান মাত্র ২ শতাংশ। আসছে বছরগুলোতে একে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে পর্যটন মহাপরিকল্পনা সহায়ক ভূমিকা রাখবে। মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকা থেকে। পর্যটন মহাপরিকল্পনার কাজ অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে যাতে সবাই তা জানতে পারে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পর্যটন মহাপরিকল্পনার উপর আরও বক্তব্য রাখেন পরামর্শক দলের প্রধান বেঞ্জামিন কেরি ও ডেপুটি টিম লিডার অধ্যাপক নুরুল ইসলাম নাজেম।
×