ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘খাই আর খাই’ খেতে খেতে ব্লগিং

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২০ জানুয়ারি ২০২০

  ‘খাই আর খাই’  খেতে খেতে ব্লগিং

আমাদের দেশে তরুণ-তরুণীরা ব্লগ লেখা শুরু হয় ২০০৫ সালের দিকে। ব্লগিং যে কোন বিষয়ের ওপর হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দেশে ফুড ব্লগিং হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়। যদিও এর শুরুটা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে ২০১৩-১৪ সালের দিকে। এই ফুড ব্লগিংকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ধরনের কমিউনিটি। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজন নিজেদের একত্রে করেছেন এই ফুড ব্লগিংয়ের মাধ্যমে। আমাদের দেশের এই ফুড ব্লগিং সম্পর্কে জানতে আড্ডা দিয়েছিলাম এই প্রজন্মের একজন ফুড ব্লগার রাইয়ান খাদিজা সিদ্দিকের সঙ্গে। আড্ডার একেবারে শুরুতেই প্রশ্ন ছিল, কিভাবে এই ফুড ব্লগিংয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করল? উত্তরে ঢাকার মেয়ে রাইয়ান খাদিজা সিদ্দিক জানান, রেস্টুরেন্টে প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হয় আমার। তখন ভাবলাম ভিন্নকিছুর চেষ্টা করা যাতে পারে। ভাবতে ভাবতে ২০১৯ সালের নবেম্বর মাসের শেষের দিকে হঠাৎ করেই মনে হলো ফুড ব্লগিং শুরু করি। ‘খাই আর খাই’ নামে ফেসবুকে পেজ খুলে সেখানে ফুড রিভিউ এবং ভিডিও আপলোড করা শুরু করি। আর ইউটিউবে ‘খাই আর খাই’ নামে একটি চ্যানেলও আছে আমার। সেখানে আমরা প্রতিনিয়ত ভিডিও আপলোড করছি। রাইয়ান আমেরিকান ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী। এই কাজে সহযোগিতা করে থাকে তার বন্ধু সৌমিক। বিভিন্ন খাবারের ছবি নেয়া, ভিডিও ফুটেজ নেয়া এবং এডিটিংয়ের কাজ সৌমিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে কিভাবে শুরু হলো এই ফুড ব্লগিং? প্রশ্নের জবাবে রাইয়ান বলেন, ‘শুরুতে ফেসবুককে প্লাটফর্ম হিসেবে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে শুরু হয় ফুড ব্লগিং। মূলত একই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের খাবার সম্পর্কে জানা, এর দাম, মান, স্থানভেদে খ্যাতি এবং সুস্বাদু খাবারের বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে একদল খাবারপ্রেমী মানুষ ফেসবুকের একটা গ্রুপের মাধ্যমে শুরু করে ফুড ব্লগিং। যদিও প্রথমে এটা ফুড ব্লগিং হিসেবে পরিচিত ছিল না। আস্তে আস্তে এখানে যুক্ত হয় লেখা ও ছবিপ্রেমী মানুষজন। নান্দনিক লেখা ও রুচিশীল ছবির মাধ্যমে মানুষজন তুলে ধরে খাবারের স্বাদকে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে ফুড ব্লগিং, যা এখন ফেসবুককে ছাড়িয়ে ইনস্টাগ্রামেও বেশ সাড়া ফেলছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে কেন্দ্র করেও গড়ে উঠছে ফুড ব্লগিং। এতে করে নতুন জায়গায় খাবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে কারও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। ফলে অর্থ, সময় দুটোই সাশ্রয় হওয়াতে এই ফুড ব্লগিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফুড ব্লগাররা সাধারণত ক্রেতার মতোই যান রেস্তরাঁয়। খাওয়া-দাওয়া করেন এবং খেয়াল রাখেন কর্মীরা রেস্তরাঁর নিয়মকানুন মেনে চলছেন কি-না! তারপর নিজেদের মতো করে রিপোর্ট তৈরি করেন তারা। তার মতে, ‘এই কাজে যুক্ত হওয়ার সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো, নজর রাখার ক্ষমতা। শুধু খাবারের স্বাদ যাচাই করলেই হবে না। রেস্তরাঁ যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন কি-না, কর্মীরা ঠিকমতো সেবা দিচ্ছেন কি-না, খেয়াল করতে হবে সবই। ঢাকাকে যদি আমরা উদাহরণ হিসেবে ধরি তাহলে দেখতে পাব ঢাকায় বেশিরভাগ বিদেশী খাবারের কিংবা ফাস্ট ফুডের দোকান। পুরান ঢাকায় খুঁজে পাওয়া যায় বাকরখানি, বিরিয়ানি, লাচ্চি, পান ইত্যাদির মতো মোগলীয় খাবারের দোকান। আর এই ফুড ব্লগিংয়ের মাধ্যমে সকলের মাঝে একটা কালচারাল বদল হচ্ছে বলেই আজ পুরান ঢাকায় পাওয়া যায় নানা বিদেশী খাবারের রেস্টুরেন্ট। নতুন ঢাকাতে পাওয়া যাচ্ছে ট্রাডিশনাল সেই খাবারগুলো। শুধু ঢাকা নয়, অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও এই খাবারের বদল হচ্ছে। ফুড ব্লগিংকে অনেকেই পেশা বলে মনে করেন। তবে এটাকে পেশা হিসেবে না বলা গেলেও তা ফুড ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয় অংশ। খাবারের রেসিপি, রেস্তরাঁর রিভিউ, ফুড স্টোরি সবই থাকতে পারে ফুড ব্লগে। এ ছাড়া খাবারের ছবি হতে হবে এমন যা চোখে দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে! এই দায়িত্বটাই পালন করেন ফুড ব্লগাররাই। ফুড ব্লগার হতে গেলে শুধু খেতে ভালবাসলে হবে না। খাবার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। বিভিন্ন খাবার সম্পর্কে জানাটাও জরুরী।
×