ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক উপশাখায় নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

ব্যাংক উপশাখায় নতুন সম্ভাবনা

ব্যাংকিং সেবায় এবার যুক্ত হচ্ছে উপশাখা। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং প্রভৃতির পর এবার উপশাখার অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন দেশের ব্যাংকগুলো লেনদেনের জন্য শাখা খুলে ব্যবসা করত, এবার এই ব্যাংকগুলো উপশাখাও খুলতে পারবে। তবে যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে ‘ব্যাংকিং বুথ’ নামে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছে, সেই কেন্দ্রগুলোকে ‘উপশাখা’ নামে অভিহিত করতে হবে। এ বিষয়ে গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, এখন থেকে ‘ব্যাংকিং বুথ’ নামের ব্যবসা কেন্দ্রগুলো ‘উপশাখা’ নামে পরিচিত হবে। একইসঙ্গে ‘ব্যাংকিং বুথ’ শব্দগুচ্ছ এবং ‘ব্যাংকিং বুথ’ বোঝাতে ব্যবহৃত সব শব্দ/শব্দগুচ্ছ ‘উপশাখা’ শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। উপশাখা হলো ব্যাংকের শাখার আদলে ছোট পরিসরের ব্যবসাকেন্দ্র। কম খরচে আর্থিক সেবার জন্য একটি শাখার অধীনে কাজ করে উপশাখা। উপশাখায় সর্বোচ্চ ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করবেন। কম লোকবল ও সাজসজ্জার কারণে খরচও কম। এসব উপশাখা থেকে বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছাড়া সবধরনের সেবা দেয়া সম্ভব। ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তার মতো উপশাখার নগদ টাকা জমা ও ক্যাশে থাকা টাকার পূর্ণ বিমা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে উপশাখায় ভল্ট স্থাপন করা যাবে। ওই ভল্ট নিয়ন্ত্রণকারী শাখার ভল্ট হিসেবে গণ্য হবে। ব্যাংকের কোন পূর্ণাঙ্গ শাখার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত স্বল্পব্যয়ী ‘ব্যবসা কেন্দ্র’ এখন থেকে উপশাখা নামে পরিচালিত হবে। ব্যাংকের শাখার মতো উপশাখাগুলোতেও বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। এসব ব্যবসা কেন্দ্র চালু করতে হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া উপশাখার আকার এক হাজার বর্গফুটের বেশি ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই জন কর্মকর্তা নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। ব্যয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং আউটলেট বিবেচনায় প্রচলিত শাখা স্থাপনের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ব্যয়সীমার চেয়ে উপশাখা স্থাপনের ব্যয় এবং প্রচলিত শাখা থেকে দেয়া ব্যাংকিং সেবার জন্য নির্ধারিত ফি, চার্জ, কমিশনের চেয়ে উপশাখার সেবা দেয়ার ফি, চার্জ, কমিশন সবই কম হবে। সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, উপশাখায় কি কি ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাবে তা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। উপশাখার মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার চাহিদাকৃত সবধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। সার্কুলারে উপশাখার জন্য ভাড়াকৃত বাড়ির আকার এবং কতজন কর্মকর্তা কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। উপশাখার সার্ভিস চার্জ এবং অন্যান্য ব্যয় প্রচলিত শাখার তুলনায় কম হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিংসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবার দাবি রাখে। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বেসরকারী এবং বিদেশী মিলিয়ে মোট ৬২টি ব্যাংক ব্যবসায়রত রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশের সব এলাকায় ব্যাংকিংসেবা সম্প্রসারিত করা সম্ভব হয়নি। নানা কারণেই ব্যাংকগুলো গ্রামীণ এলাকায় শাখা খুলতে খুব একটা আগ্রহী হয় না। ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনও ব্যাংকিংসেবার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। প্রতিবেশী দেশ বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারতেও বাংলাদেশের মতো এত বিপুলসংখ্যক ব্যাংক নেই। বিশ্বব্যাংকিং ইতিহাসে দু’ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায়। এর একটি হচ্ছে ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং। ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কমসংখ্যক ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয় তারা বিপুলসংখ্যক শাখা স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুক্তরাজ্যের ব্যাংকিং ব্যবস্থা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে ইউনিট ব্যাংকিং হচ্ছে অল্প কয়েকটি শাখা নিয়ে এক একটি ব্যাংক স্থাপিত হয়। এভাবে জনগণের ব্যাংকিং চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুরসংখ্যক ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইউনিট ব্যাংকিংয়ের চমৎকার উদাহরণ। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদ্যমান ব্যাংকগুলো পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে আধুনিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে বোধগম্য কারণেই ইউনিট ব্যাংকিং সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু আছে তা ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং বলা যেতে পারে। কিন্তু ব্যাংকগুলো গ্রামীণ জনপদে তাদের শাখা খোলার ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহী হয় না। এ কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা বাধ্য হয়ে আর্থিক কার্যক্রমের জন্য এনজিওদের নিকট ধরনা দেয়। এনজিওরা এ সুযোগে উচ্চসুদ চার্জ করে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে তাদের মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে উপশাখা ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেকটাই সহায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
×