ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগে শতাধিক, বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী ৬৫

ঘরের আগুনে পুড়ছে বড় দুই দল

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

ঘরের আগুনে পুড়ছে বড় দুই দল

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে ঘরের আগুনে পুড়ছে বড় দুই দল। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের রীতিমতো ছড়াছড়ি। দলের হাইকমান্ড থেকে বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়ার পরও অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে প্রচারে মাঠে আছেন, আছেন অনড় অবস্থানে। এ কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন ভোটার ও সমর্থকরা। দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহীর সংখ্যা বেশি। দুই সিটি মিলিয়ে ১২৯ সাধারণ ওয়ার্ডে দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা পৌনে দুইশ’র বেশি। এরমধ্যে কমপক্ষে ৭৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় শতাধিক। আর বিএনপিতে ৪৬ ওয়ার্ডে ৬৫ বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সিটি নির্বাচনে যারা দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাদের অনেকে এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। আবার গতবার যারা বিদ্রোহী হয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ এবার মনোনয়ন পেয়েছেন। বড় দুই দলেই এমন নজির রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সাংসদের পুত্রও হয়েছেন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী। ক্যাসিনোকা-ে কারাকারে থাকা বরখাস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার সমর্থকরা। ইসি সূত্রে বলছে, মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৭৫৮ জন। মেয়র পদে লড়ছেন ১৩ জন। দুই সিটির ৫৯ ওয়ার্ডে পাঁচ থেকে ১০ জন পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থী যতই থাক শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যেই। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিলেও মেয়র পদে শুধুমাত্র দক্ষিণে প্রার্থী আছেন। সব মিলিয়ে ৪০ জন কাউন্সিলরও এখন মাঠে নেই দলটির। এবারের সিটি নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৭৫৮ জন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনে এবার মোট প্রার্থী সংখ্যা ৭৫৮ জন। এরমধ্যে মেয়র প্রার্থী ১৩ জন। উত্তরে ৫৪ পদে ২৫১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। ১৮ সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী ৭৭ জন। দক্ষিণে ৭৫ পদে প্রার্থী সংখ্যা ৩৩৫। ২৫ নারী সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী সংখ্যা ৮২ জন। ৫৯ ওয়ার্ডে প্রার্থী সংখ্যা ৫-১০ জন এবারে দুই সিটির ৫৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সংখ্যা ৫ থেকে ১০ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী বেশি। প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দক্ষিণে ৭৫ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতে পাঁচ থেকে-১০ প্রার্থী আছেন। উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ডেও ২৯টিতে আছে পাঁচ থেকে নয়জন করে। ৪৬ ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী ৬৫ প্রার্থী সর্বশেষ ২০০১ সালে এক অক্টোবর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি তথা চার দলীয় জোট। এরপর ২০০৮ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সিটি নির্বাচন নিয়ে দলটি বিদ্রোহ সামাল দিতে পারছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছাড়াছড়ি। দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬৮টিতে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। উত্তরে ৫৪টির মধ্যে ৫১টিতে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে দুই সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬টিতে বিএনপির বিদ্রোহীর সংখ্যা ৬৫ জন। উত্তরে ৫৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ২২ ওয়ার্ডে ৩৫ জন, দক্ষিণে ৭৫ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টি ওয়ার্ডে ৩১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটিতে ভোট হবে। দুই সিটিতে মেয়র ছাড়াও ১২৯টি সাধারণ ও ৪৩টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ১৭২ জন নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে ৫৪টি সাধারণ ও ১৮টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড আর ডিএসসিসিতে ৭৫টি সাধারণ ও ২৫টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড। আওয়ামী লীগে শতাধিক বিদ্রোহী গত ৪ জানুয়ারি রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় বিদ্রোহীদের সাংগঠনিক শাস্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৭৭টিতেই আওয়ামী লীগের শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর আছেন ৯ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের ৩৫টিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। তারা সবাই নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে ঘাটে বিদ্রোহী কমবেশি সব ওয়ার্ডেই বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। তাই বলা চলে মাঠে ঘাটে সবখানেই বিদ্রোহীদের ছড়াছড়ি। ফলে দলীয় সমর্থকরা আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মঞ্জুরের নির্বাচনী প্রতীক মিষ্টি কুমড়া। একই ওয়ার্ডে মাঠে আছেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীও। এই ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। দলের বিদ্রোহী হিসেবেও নির্বাচন করছেন আরও তিনজন। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আরও দুজন প্রার্থীর মধ্যে আছেন, আওয়ামী লীগের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি মীর আশরাফ উদ্দিন খান। নির্বাচনী মাঠে আরও আছেন ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মোকছেদ আলী মোল্লা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মোকছেদ আলী মোল্লা বলেন, দলের সমর্থন চেয়ে আবেদন করেছিলাম, পাইনি। পরে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। আওয়ামী লীগের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রুস্তম আলী বলেন, এই ওয়ার্ডে একক প্রার্থী নির্ধারণে বিদ্রোহীদের নিয়ে একাধিকবার বসেছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করি নির্বাচনের আগেই তারা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন আরো দুজন। তারা হলেন হাসেম মিয়া ও শেখ জিয়াউর রহমান। শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, আমি নাখালপাড়ার স্থানীয়। আমার পরিবারেই প্রায় ২ হাজার ভোটার। তাদের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এখন নির্বাচনী মাঠ ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর শামীম হাসান। বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে আছেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন প্রচার চালাচ্ছি। শামীম হাসান বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন মাসুদ রানা। তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছে মহানগর কমিটি। কিন্তু তা তিনি আমলে নেননি। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরান। এই ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান। ঘুড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক। বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আবেদ আলী। বিএনপির বড় কোন পদ নেই তার। আনোয়ারুজ্জামান বলেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছে। এ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ মতিউর রহমান মোল্লাকে কাউন্সিলর পদে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে, বিএনপি থেকে কাফরুল থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান রাব্বীকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ডটিতে দলীয় প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগের তিনজন ও বিএনপির একজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অপরদিকে এই ওয়ার্ড থেকে থানা যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান রাব্বি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলেও কাফরুল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক একরাম হোসেন বাবুল বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। ক্যাসিনো সাঈদ ভোটের মাঠে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ছয়জন ভোটে আছেন। এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। ক্যাসিনোকা-ে আলোচিত এই ওয়ার্ডের বরখাস্ত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ভোটের মাঠে না থাকলেও তার সমর্থকরা তার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়া সাঈদের স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ বৈশাখীও কাউন্সিলর পদে ভোট করছেন। মোজাম্মেল বলেন, আমি দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছি। আমার সমর্থন জানিয়ে আওয়ামী লীগের দুইজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও আওয়ামী লীগেরই অন্তত তিনজন এখনও ভোটের মাঠে আছেন। নিজেকে যুব মহিলা লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে সাঈদপতœী বৈশাখী বলেন, আমি দলীয় প্রার্থী না হলেও স্বতন্ত্র হিসেবে এলাকার মানুষের চাপে ভোটের মাঠে আছি। আমার স্বামীর ভোটের কোন খবর আমি রাখছি না। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোন সিদ্ধান্ত নেবে কি না জানতে চাইলে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, দল থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের জন্য আমরা কাজ করছি, আর যারা দলের বাইরে নির্বাচন করছে তাদের নিয়ে ভাবছিই না। কারণ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া মানেই সে দলের কেউ না। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের দলের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন, তাদের ব্যাপারে আমাদের শৃঙ্খলা কমিটি নির্ধারিত সময়ে যারা প্রত্যাহার করেননি তাদের প্রত্যাহার করানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে সুর নরম করলেন দলটির ওবায়দুল কাদের। দলীয় প্রধানের ধানম-ি কার্যালয়ের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিদ্রোহীদের জন্য আওয়ামী লীগ শেষ ও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এমন তো না। এটা হয়েই আসছে। আমরা ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় আছি, এত বড় দলে বিদ্রোহী প্রার্থীর মতো বিষয়গুলো থাকে। আমরা নির্বাচন করছি, এসব ছোটখাটো সমস্যাকে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা নির্বাচনেও বিজয়ী হচ্ছি এবং বিরোধী দলের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করছি। এটা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয় মন্তব্য করে কাদের বলেন, এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন না। আমরা আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি বা না পারি তাতে আপনাদের অসুবিধা কী? এখানে বিদ্রোহী থাকলে আপনাদের অসুবিধা কী? তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসাতে দলের দায়িত্বশীল নেতারা সক্রিয় আছেন বলে জানান কাদের। গত ২৯ ডিসেম্বর দুই সিটির কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থনের তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। পরে সাতটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। দলীয় হুঁশিয়ারির পর অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও শেষ পর্যন্ত ১১০টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজী মোঃ সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমও রয়েছেন। তিনি ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ হাসান, যিনি হাজী সেলিমের ভাগিনা। মোঃ হাসান বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যেতে ইরফানকে একাধিক চিঠি দিয়েছে দল। কিন্তু তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না। বিদ্রোহী ৯ কাউন্সিলর গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন এমন ৩৬ জন এবার দলীয় সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে উত্তরে তিনজন ও দক্ষিণে ৬ জন দলীয় সিদ্ধান্ত উপলক্ষে করে প্রার্থী হয়েছেন। উত্তরের বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জহিরুল ইসলাম। সেখানে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পল্লবী থানার সহসভাপতি জিন্নাত আলী মাদবর। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহসভাপতি হুমায়ুন রশিদ। সেখানে দলীয় প্রার্থী হলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মইজ উদ্দিন। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ সফিকুল ইসলাম। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন করে তাকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে আওয়ামী লীগের সাঁতারকুল ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মতিনকে দল থেকে সমর্থন দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। তাই এখন আবদুল মতিন সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আনিছুর রহমান ওরফে নাঈম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। সেখানে দলীয় সমর্থন পান দক্ষিণখান ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিউদ্দিন মোল্লা। ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তারিকুল ইসলাম, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল শাহ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নুল হক ওরফে মঞ্জু, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন খান, ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বহিষ্কৃত কাউন্সিলর মমিনুল হক ওরফে সাঈদ বিদ্রোহী প্রার্থী। তাদের মধ্যে চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে আছেন ময়নুল হক। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও গত পাঁচ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এলাকাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ মুক্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে দলীয় সমর্থন পেয়ে নির্বাচন করেছি। এবার প্রথমে দল সমর্থন দেয়নি। তবে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্বাচন করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম দলের এই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৫ সালে দলের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এবারও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং জয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও উত্তর সিটির সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাছাই কমিটির সমন্বয়কারী মোঃ শাহজাহান বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর এখনও কিছু কিছু ওয়ার্ডে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়ে গেছেন। দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তাদের নির্বাচনে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, দক্ষিণ সিটির কয়েকটি ওয়ার্ডে আমাদের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাদের বুঝিয়ে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছি।
×