ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তিপ্রেমীরা ফাইভ-জি’র সত্যিকার স্বাদ নিলেন ডিজিটাল মেলায়

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

প্রযুক্তিপ্রেমীরা ফাইভ-জি’র সত্যিকার স্বাদ নিলেন ডিজিটাল মেলায়

কাওসার রহমান ॥ পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা ফাইভ-জি সত্যিকারের গতির স্বাদ নিলেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। ফোর-জির চেয়ে অন্তত ২০ গুণ বেশি গতির হবে ফাইভ-জি। দেশে ফাইভ-জি চালু হওয়ার আগেই প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে অভিভূত প্রযুক্তিপ্রেমীরা। দেশে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবার প্রদর্শনী করেছে হুওয়ায়ে ও চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেডটিই কর্পোরেশন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠিত তিন দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ‘ফাইভ-জি’ নামে পরিচিত পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তির উদ্ভাবন, ব্যবহারিকসহ পণ্য এবং সেবার দেখা মিলছে জেডটিই প্যাভিলিয়নে। আর হুওয়ায়ের ‘ফাইভ-জি’তে ১.৬ জিবিপিএস গতির সাক্ষী হয়েছে ঢাকা। ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের মানুষের কাছে ‘ফাইভ-জি’ প্রযুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় গত এক দশকে সরকারের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ মেলায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আয়োজিত প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য বিষয়ও ছিল ‘প্রযুক্তির বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় প্রযুক্তির মহাসড়ক।’ মেলা প্রাঙ্গণে নয়টি স্ট্যান্ড নিয়ে বড় পরিসরে নির্মিত ‘জেডটিই বুথ’ প্রাঙ্গণে ব্যবসায় সমাধান, টার্মিনাল অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ‘সিস্টেম সলিউশন’ প্রদর্শনী এলাকায় ‘সহজীকরণের মাধ্যমে বড় কিছু’ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও ফাইভ জি প্রদর্শনীর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে নেটওয়ার্ক একসিলারেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ চাহিদাভিত্তিক পরিবহন নেটওয়ার্ক, স্বয়ংস্ক্রিয় চিপসেটের পাশাপাশি ‘কমন কোর’ নামে সেবা তুলে ধরা হচ্ছে ভবিষ্যত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে। ফলে উন্নত ও ভবিষ্যত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে দর্শনার্থীরা ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে জেডটিই প্যাভিলিয়নে ভিড় করেছে। মেলায় ‘ফাইভ-জি’তে ১.৬ জিপিএস গতির সাক্ষী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে মেলার টাইটেনিয়াম সহযোগী ‘হুয়াওয়ে’। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশে ‘ফাইভ-জি সেবা পরীক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড। তখন ৮০০ মেগাহর্স স্পেকট্রাম ব্যবহার করে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৪ জিবি পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে এখন মাত্র ১০০ মেগাহর্স স্পেকট্রাম (গতবারের ৮ ভাগের এক ভাগ) ব্যবহার করেই প্রতি সেকেন্ডে ১.৪ জিবি থেকে ১.৭ জিবি পর্যন্ত গতিতে ডেটা ট্রান্সফার করা সম্ভব হবে। দর্শনার্থীরা মেলার উদ্বোধনী দিনেই সেকেন্ডে ১.৬ জিবি গতিতে ডেটা ট্রান্সফারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ‘ফাইভ-জি’র উন্নয়ন ও গবেষণায় হুয়াওয়ের দীর্ঘদিনের অবিরাম প্রচেষ্টার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। ‘ফাইভ-জি’র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় গত ১০ বছর কাজ করছে হুয়াওয়ে আর এর মধ্যেই এ জন্য ব্যয় করেছে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেংজুন বলেন, ‘প্রযুক্তিগত সুবিধাকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গত ২১ বছর ধরে এদেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি, টেলিকম অপারেটর ও স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। এখন ‘ফাইভ-জি চালু হয়েছে এবং হুয়াওয়েও প্রস্তুত। ‘ফাইভ-জি’র গবেষণা ও উন্নয়নে আমরা এক দশক ধরে কাজ করছি, যেখানে গত ১০ বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘ফাইভ-জি গবেষণা ও উন্নয়নে আমরাই শীর্ষস্থানীয় এবং ২১ হাজারেরও বেশি থ্রি জিপিপি ‘ফাইভ-জি এনআর সমেত ‘ফাইভ-জি পেটেন্টও আমাদের সবচেয়ে বেশি।’ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে দর্শনার্থীদের ফাইভ-জি অভিজ্ঞতা দিতে সব আয়োজনই করে তাদের প্যাভিলিয়নে। ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে কত দ্রুত ‘হিউম্যান টু মেশিন’ বা ‘মেশিন টু মেশিন’ কমিউনিকেশন সম্ভব তা তুলে ধরতে এই আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছে হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি পে-জোনে ফাইভ-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ভি-আর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) উপভোগ করেছেন দর্শনার্থীরা। ফাইভ-জি ভি-আর পরলে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যাবে স্কি-রত অবস্থায়। এছাড়া প্যাভিলিয়নে ছিল বিশেষ একটি রোবট, যাকে হাতের ইশারায় পরিচালনা করে ফুটবল খেলানো গেছে। মেলায় ৩৫ থেকে ৪০টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল পে (এক ক্যাবলে ল্যান্ডফোনের লাইন, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ, মোবাইল এ্যাপস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও প্রযুক্তি) ইত্যাদি প্রদর্শন করেছে। এ ছাড়াও ওয়ালটন, স্যামসাং, সিম্ফনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করেছে, দেশী সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করেছে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা (ভ্যাস) দেখিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ১০০টি স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়ন ছিল। এতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ডিজিটাল অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। মেলায় ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃথক কর্নার। ওই কর্নারে প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা ছিল নতুন প্রজন্মের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন একটি দারুণ উদ্যোগ বলে মনে করছে প্রযুক্তিপ্রেমীরা। নতুন প্রযুক্তি এলে জীবনে ওপর কী প্রভাব পড়বে, কতটা সহজ হবে জীবন তার নিতে পেরেছে তহারা। হুয়াওয়ে প্যাভিলিয়নই মূলত বুঝিয়ে দিয়েছে ভবিষ্যতে কতটা দ্রুত হবে মানুষের কাজ।
×