ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসক্লাবের কোনার টেবিলটি ॥ অনৈতিহাসিক

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

প্রেসক্লাবের কোনার টেবিলটি ॥ অনৈতিহাসিক

প্রেসক্লাবের কোনার টেবিলটি এখন অনেকেরই জানা হয়ে গেছে সকাল-বিকাল আড্ডা বসে রাত দশটা অবধি গরম চা কফির ধোঁয়ায় রাজনীতি সংস্কৃতি স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা উত্তর প্রজন্ম এইসব আলোচনার চেয়ে বেশি পছন্দ কারা কারা রাজাকার হয়েছিল এখনো রাজাকাররা প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। শামসুদ্দিন পেয়ারা আতিউর রহমান জাহিদুজ্জামান ফারুক ইকবাল চৌধুরী মোজাম্মেল হোসেন (গেদুচাচা) জাফর ওয়াজেদ এবং আমার জায়গা তো একটাই হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল সূর্যসেন হল কখনোবা জহুরুল হক হল নেতারা সব সেখানেই থাকতেন থাকতেন চিশতী শাহ হেলালুর রহমান অসম্ভব তেজি ছাত্রলীগ কর্মী ছিল ২৫ মার্চের পরেও হলে থেকে গিয়েছিল ২৬ মার্চ সকালে পাকিরা গুলি করে হত্যা করল একটি হিন্দু মেডিক্যাল ছাত্রীর সাথে প্রেম করেছিল দেখতে সুন্দরী ময়মনসিং থেকে মাঝে মাঝে ঢাকা আসত আবার চলে যেত মুক্তিযুদ্ধের মাঝে বেঁচে গিয়েছিল এবং বার কয়েক জহিরুল হক হলেও এসেছে চিশতীর খোঁজে মৃণাল কৃষ্ণ চক্রবর্তী তরুণ তপন চক্রবর্তীর এক ভাই ও এক বোন হারিয়ে জীবন চলছে কোন কমপ্লেন নেই কারো কাছে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সন্তান প্রজন্ম শাহনাজ সোমা এলিস তন্ময় মেহেদী খোকন আশরাফ ফরাজী শরিফ শাহাবুদ্দিন হারুন হাবিব নাসিমুন আরা হক মিনু মোল্লা জালাল আবু জাফর সূর্য কুদ্দুস আফ্রাদ গোলাম মহিউদ্দিন খান কামরুল ইসলাম চৌধুরী শামীম সিদ্দিকী মান্নান খাজা শ্যামল দত্ত মধুসূদন মন্ডল কামাল জলিল ভূঁইয়া খোকন সিদ্দিক আরজু পিয়ার বিশ্বাস কবি মোশাররফ মনজুরুল আহসান বুলবুল ইশতিয়াক রেজা দুলাল আচার্য প্রায় প্রতিদিন আসেন বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অনেকেই অফিসের কাজ শেষ করে রিলাক্স মুডে ক্লাবের বেল বয় মুসলিম অর্ডার দিতে হয় না কখনো সিংগাড়া কখনো সমোচা কখনো আন্ডা পুরী (পুরো ডিম) কখনো ডিম পুরি (হাফ ডিম) কিংবা দিনের মেনু শীতের পিঠা একটার পর একটা টেবিলে সার্ভ করতেই থাকে নিষেধ করলেও শোনে না হাসে ও জানে যত বেশি খাওয়াতে পারবে যত বেশি বিল হবে ওর টিপস হবে তত বেশি ওর রোজগার একেবারে কম না কথা উঠে বাঙালি জাতি নিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এত রক্ত এত ত্যাগ এত জীবন তবু এতোটুকু চরিত্র পাল্টায় না এখনো মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে রাজাকার এখনো অসহায় বিধবা ভিটে ছাড়া হয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দাপট সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধা বয়সের ভারে ন্যূব্জ সরকারের টাকা খায় মেম্বার চেয়ারম্যান নেতা পাতিনেতা আমলা পুলিশতো দেশের রাজা সরকারী দল তবু দলের ক্যাসিনো সম্রাট সম্রাট যুবলীগ চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাসেবক লীগ চেয়ারম্যান ছাত্রলীগ সভাপতি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক কাউকে ছাড় দেননি দেবেনও না কাউকে ইনভেস্টিগেশন চলছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিহ্নিত করে করে মানুষ প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে এবার চিনতে শুরু করেছে যখন দুর্নীতি মাদক জঙ্গিবাদ যেদিন জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী টেবিলের বন্ধুরা বললেন প্রধানমন্ত্রী তো কত কিছুই বলেন সব কি হয়? আমি মিটিমিটি হাসলাম বললাম না কিছু মনে মনে বললাম, একটু অপেক্ষা করো বাবারা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজ গুনে বিশ্ব নেতা অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক তিনি এমনি কিছু বলেন না। টেবিলের অভিমত হল রাজাকাররা এখনো বাংলা ছেড়ে যায়নি বরং সহযাত্রী কতিপয় অশিক্ষিত মূর্খ দল মূর্খ তারেক রহমানের মত লন্ডন নিউইয়র্ক বসে প্রতিনিয়ত কুৎসা রটাচ্ছে ইউটিউব বাহন শুনেছি একটা আছে নারী হিন্দুও না মুসলিমও না বলা যায় হিজড়া তার মুখে এত দুর্গন্ধ আমরা দূরে আছি বলে বেঁচে গেছি ইউটিউবে বেশকিছু মোল্লা ওয়াজ করেন মানুষ বিভ্রান্ত হন একজন আছে আজহারী বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প-িত কথায় কথায় বলে ঠিক কিনা পাবলিক বলে ঠিক ঠিক এই ভদ্রলোক যখন ঘরে ঘরে রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর কথা বলেন তখন আর ঠিক কিনা বলে না কে না জানে এই সাঈদী কে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে জেলে আছে অপরাধ হিন্দু নারী ধর্ষণ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা গণহত্যায় সহযোগিতা পাকিস্তানীদের গণহত্যার সহযোগী গোলাম আযমের দুই নম্বর আমাদের সাংবাদিকরা সব জান্তা ঔধপশ ড়ভ ধষষ ঃৎধফব বললেন এবার মাংসের উৎপাদন অনেক বেশি পিয়াজের খরচও বেশি এক সময় হিন্দুরা পিয়াজ খেতো না এখন খাওয়া শুরু করেছে খাওয়া তো খাওয়া না দেখলে বোঝা যাবে না যে কোনদিন ইউনিভার্সিটি মাড়ায়নি কলেজ ড্রপআউট কেউ কেউ হাই স্কুল ড্রপআউট এখন ডাকসাইটে সাংবাদিক টহফবৎ সবঃৎরপ মৎধফঁধঃব লাফ দিয়ে চেয়ারের উপর পা তুলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিটাই এখন পিয়াজনির্ভর বলে চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন সবাই ভাবল তার পা ভেঙেছে দেখা গেল তার পা নয় চেয়ারের পা দেখুন কথায় কথায় সরকারের দোষ খোঁজেন আচ্ছা পিয়াজ মন্ত্রী কি বিবাহ করেছেন যে পিয়াজের দাম বাড়বে তা তো করেননি তবু কোন একটা জায়গায় ব্যারিকেড দেয়া আছে এরই মধ্যে লম্বা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি ফর্সা ব্যাকব্রাশ করা কালোর মাঝে দু-একটি সাদা চুল কালো মোটা ফ্রেমের চশমা মোটা গোঁফ সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট হাতে পাইপ সবাই ওঠে দাঁড়ালাম তার বসার কোন জায়গা নেই দেখতে এসেছি সব ঠিক আছে মনে হচ্ছে কেবল রাজাকার আর মুনাফিকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিন দিন কেউ কি নেই ওদের থামাতে দেখলাম গোটা শিক্ষাব্যবস্থা রাজাকার জামায়াত শিবিরের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে শিক্ষক নিয়োগে অবকাঠামো উন্নয়নে পরিবেশের সৌন্দর্য বর্ধনে এমপিওভুক্তিতে সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে জামায়াত-শিবিরের প্রাধান্য এখনতো সরকার আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা পক্ষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের তবে কি অর্থের কাছে স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে শুনেছি ওদের নাকি অঢেল টাকা এই টাকা তারা এখন ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তায় মাহফিলে মাহফিলে বিনোদনে খরচ করছে এদিক ওদিক ছিটেফোঁটা টাকা কুড়াচ্ছে কেউ কেউ পুরো টেবিল নীরব নিস্তব্ধ কারো মুখে কথা নেই নিজের উপরেই লজ্জায় ঘৃণায় অবনত মস্তক সামনে এসে দাঁড়ালেন ঝাকরা চুল নজরুল ‘এদেশ ছাড়বি কিনা বল নইলে কিলের চোটে হাড় করবি জল’ যারা বোঝার ঠিকই বুঝল কতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলো একসময় আস্তে আস্তে চলে গেল একটু পর নজরুলের সাথে এক এক করে আসলেন মাইকেল রবীন্দ্রনাথ শামসুর রহমান নির্মলেন্দু গুণ আবুল হাসান মহাদেব সাহা হেলাল হাফিজ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী।’ ঐতো বঙ্গবন্ধু ফকির মজনু শাহ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মাস্টারদা মাওলানা মনিরুজামান ইসলামাবাদী শেরে বাংলা সোহরাওয়ার্দী জসীমউদ্দীন জয়নুল আবেদিন একটা বিরাট সারি সামনে শেখ হাসিনা অমর্ত্য সেন অভিজিৎ ব্যানার্জি টেবিলটি এতদিনে সুশোভিত হল বললেন আমরা বসতে আসিনি আমরা বাংলাদেশ ঘুরে এসেছি শেখ হাসিনার বাংলাদেশে আজ কেউ পেছনে তাকায় না না শিশু না কিশোর কিশোরী না প্রান্তিক জনগোষ্ঠী না কৃষাণ-কৃষাণীর সবাই তো সামনে তাকাচ্ছে। একজন মানুষ খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে তবে বেশিরভাগ সময় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল- বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যে থাকতেই হবে বয়স যে হয়েছে কত সমস্যা শেখ হাসিনার চেয়েও বয়োবৃদ্ধ আলোচনাটা স্বাভাবিকভাবে অন্যদিকে মোড় নিল শেখ হাসিনার জীবনের ওপর ১৯ বার হামলা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা যদি ট্রাকের নিচের গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হতো কোনো নেতা বাঁচতেন না তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো? জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার হতো? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো? স্বপ্নের পদ্মা সেতু হতো? মেট্রোরেল হতো? কর্ণফুলী টানেল হতো? গভীর সমুদ্র বন্দর হতো? রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র হতো? ভারতের সাথে সীমান্ত সংকট সমাধান হতো? ভারত-মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা সমাধান হতো? এমনি মেগা মেগা প্রকল্প হতো? সবইতো আমরা আলোচনা করলাম কিন্তু ট্রাম্প যে সোলায়মানীকে হত্যা করল দম্ভ করল এদের ব্যাপারে কি কিছু করা যাবে না ভায়া ঐ সব মুসলমানের দেশ ওখানে কি একজন নেতাজী আছেন- ‘আমি সুভাষ বলছি’ একজন বঙ্গবন্ধু আছেন- ‘ভায়েরা আমার আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই’- ঢাকা ॥ ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ লেখক : সংসদ সদস্য সদস্য, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটি, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×