ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রি বেডের সুবিধা পায় না দরিদ্র রোগীরা

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রি বেডের সুবিধা পায় না দরিদ্র  রোগীরা

নিখিল মানখিন ॥ দেশের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালে নির্ধারিত ফ্রি বেডের সুবিধা পায় না দরিদ্র রোগীরা। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বর্তমানে মনিটরিংয়ের কাজ চলছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রি সিট সুবিধা নেই বলে অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে এ তাগিদ দেয়া হয়। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে মোট শয্যার ১০ শতাংশ শয্যা গরিবদের জন্য ফ্রি রাখার বিধি থাকলেও সেটি কেউ মানছে না। এতে বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন না অনেক দরিদ্র রোগী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের জন্য স্থাপিত হাসপাতালগুলোয় ১০ শতাংশ ফ্রি বেড দেয়ার বিধান থাকলেও অন্য প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতাল এর আওতায় নেই। তবে মেডিক্যাল কলেজ মালিকরা যেন গরিবদের ফ্রি বেডে চিকিৎসার সুযোগ দেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু এ বিষয়টিই নয়, সব ধরনের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিমালায় লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে বলা আছে, হাসপাতাল-ক্লিনিকে ১০ শতাংশ বেড দরিদ্রদের ফ্রি দিতে হবে। লাইসেন্স গ্রহণের সময় এ অঙ্গীকার করেও পরে এই নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। ত্রুটি এখানেও আছে। গরিবদের ফ্রি বেড দেয়া হলেও তাদের অন্য চিকিৎসা খরচকে বহন করবে সে সম্পর্কে নীতিতে কিছু বলা হয়নি। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে গরিবের ফ্রি বেড আছে এ তথ্যটি জানেন না অনেকেই। সূত্রটি আরও জানায়, দেশের শতকরা ৭০ ভাগ বেসরকারী হাসপাতাল ফ্রি সিট ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে না। প্রথম শ্রেণীর বেসরকারী হাসপাতালগুলোর মধ্যে আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৫শ’টি রোগী শয্যা। কিন্তু এ হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য ফ্রি সিটের ব্যবস্থা নেই। এভাবে ৩০৪ বেডের ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতাল, ১৮০ বেডের ঢাকা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ১২৫ বেডের চট্টগাম চন্দ্রঘোনার খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল, ১শ’ বেডের ঢাকার সিকদার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের অধিকাংশ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য ফ্রি সিটের ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ উঠেছে, দেশে বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসা কাঠামো পরিচালনায় ৩২ বছর আগে প্রণীত অধ্যাদেশ বহু আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে। ওই আইনের প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক অসঙ্গতি। এত দীর্ঘ সময়েও বেসরকারী খাতের চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারেনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আর এ সুযোগে যাচ্ছেতাই ভাবে চলছে বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। সেবামূল্যও আদায় করছে নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসায় অত্যধিক ব্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। অনেক ক্ষেত্রে টাকা খরচ করেও মিলছে না সেবা। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে মোট শয্যার ১০ শতাংশ শয্যা গরিবদের জন্য ফ্রি রাখার বিধি থাকলেও সেটি কেউ মানছে না। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে না। আইন নেই, থাকলেও কার্যকারিতা নেই- এ দোহাই তো অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরী চিকিৎসা ও নির্দিষ্ট পরিমাণ সেবা গরিবদের বিনামূল্যে দিচ্ছে না। এর দায়ে প্রায় সব ক’টি প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যায়। বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)সহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের অধিকাংশই কোন না কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন। সিনিয়র চিকিৎসকরাও নির্ধারিত কর্মঘণ্টা শেষে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে টাকা উপার্জনে বেশি উৎসাহী। দেশে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যেও বেশ কয়েকটি গ্রুপ হাসপাতাল নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে। ক্ষমতাশালী এই পক্ষগুলো বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে নতুন আইন প্রণয়ন ও তদারকি প্রক্রিয়া জোরদারে বাধার সৃষ্টি করে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত ফ্রি বেড বাস্তবায়নের মাত্রা অনেক বেড়েছে। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
×