ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৮ মাসে এসেছেন ২৫ হাজার

সৌদি থেকে ১৬ দিনে ১৬১০ কর্মী দেশে ফিরেছেন

প্রকাশিত: ১০:২১, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 সৌদি থেকে ১৬ দিনে ১৬১০ কর্মী দেশে ফিরেছেন

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরব থেকে গত ১৬ দিনে এক হাজার ৬১০ বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর আগে সাধারণ ক্ষমার আওতায় গত ৮ মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ ২৫ হাজারের বেশি কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেশটিতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করেছে। তাদের মধ্য থেকে এক হাজার ৬১০ কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারও আরও ১০৯ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব। রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে শূন্য হাতে তারা দেশে ফেরেন। এ খবর নিশ্চিত করেছে বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন বিভাগ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত অবৈধ কর্মীরা দেশে ফিরে যেতে পারবেন এই মর্মে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়েছিল এক মাস। এক মাসের মধ্যে কোন অবৈধ প্রবাসী দেশে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। অবৈধ কর্মী আটক করা তাদের রুটিন কাজ। যারা অবৈধ হয়ে গেছেন তাদের তো দেশে ফিরতেই হবে। অবৈধ কর্মীরা দেশে ফিরলেও বাজারের কোন ক্ষতি হবে না। তবে কিছু কর্মী বৈধতা পেতে পারেন বলে জানিয়েছে সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, দুই মাস আগে সৌদি গিয়েছিলেন নোয়াখালীর আজিম হোসেন। পাসপোর্টে তিন মাসের ভিসা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বাজার করার জন্য মার্কেটে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের সময় পুলিশের সঙ্গে নিয়োগকর্তার কথা বলার পরেও তাকে দেশে পাঠানো হয়েছে। একইভাবে মুন্সীগঞ্জের রুহুল আমিন, কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন ও মানিক, শরীয়তপুরের মিলন, যশোরের মোসলেম উদ্দিন, বগুড়ার মেহেদি হাসান, গাজীপুরের রাজিবসহ ১০৯ বাংলাদেশীর বেশির ভাগেরই এমন অবস্থায় দেশে ফিরতে হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে আসা কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, আকামা তৈরির জন্য নিয়োগ কর্তাকে টাকা দিলেও আকামা করে দেয়নি। পুলিশ গ্রেফতারের পর নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কর্মীর দায় নেয়নি কোন নিয়োগকর্তা। ফিরে আসা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন বিভাগ তাদের জরুরী সহায়তা দিয়েছে। ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সালের ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশীকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছর শুরুর ১৬ দিনে এক হাজার ৬১০ বাংলাদেশী কর্মীকে সৌদি থেকে ফিরতে বাধ্য করেছে। তাদের প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। এদের মধ্যে কয়েকমাস আগে সৌদি গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন। তারা সবাই ভবিষ্যত নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৬ হাজার ১১৭, ওমান থেকে সাত হাজার ৩৬৬, মালদ্বীপ থেকে দুই হাজার ৫২৫, কাতার থেকে দুই হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে এক হাজার ৪৪৮ ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ বাংলাদেশী শূন্যহাতে ফিরেছেন। শরিফুল হাসান বলেন, ফিরে আসা কর্মীদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকতে চাই। সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। বিশেষ করে সরকারের পক্ষ থেকে জবাবদিহিতা আনতে হবে জনশক্তি রফতানি কারকদের ওপর। তা না হলে এমন ঘটনা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। এভাবে যেন কাউকে শূন্যহাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা জরুরী। সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ২ লাখের বেশি কর্মী দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে অবৈধ হয়ে পাড়া কর্মীদের বৈধ করে নেয়ার জন্য। তাছাড়া অনেক কর্মী আকামা বা চাকরির সময় বাড়ানোর আবেদন করে রেখেছেন। তাদের হয়তো শেষ পর্যন্ত বৈধ করে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। যাদের আল্পদিন আগে চাকরির সময় শেষ হয়েছে-তাদের যেন আরও একবার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কিছু জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা যদিও এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক সারা দেয়নি। আশা করা যাচ্ছে, বেশ কিছু কর্মীকে বৈধ করে নিতে পারে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
×