ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুমিল্লা ভার্সিটি প্রশাসনের কাছে ছাত্রীর বিচার দাবি

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, তোলপাড়

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

  শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, তোলপাড়

নিজস্ব সংব‍াদদাতা, কুমিল্লা, ১৭ জানুয়ারি ॥ কুমিল্লা ভার্সিটিতে ইংরেজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। উক্ত বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলে শিক্ষকের বিচার দাবি করেন। বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের ও ইংরেজী বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও সুশীল সমাজের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী গত ১৩ জানুয়ারি একটি কোর্সের পরীক্ষা দিতে বিভাগে আসেন। পরীক্ষা চলাকালীন তাদের সবার মোবাইল ফোন জমা রাখতে বলা হয়। এ কথা শুনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোবাইলসহ ভ্যানিটি ব্যাগ সামনে রাখেন এবং পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথে ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে দেখেন মোবাইলের সিম অদল-বদল করা এবং মেমোরি কার্ডের জায়গায় ‘নষ্ট’ একটি মেমোরি কার্ড লাগানো। এছাড়া মোবাইলটির সব তথ্য মুছে দেয়া। বিষয়টি জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষককে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। তখন তিনি বুঝতে পারেন ওই শিক্ষকের অনেক অনৈতিক প্রস্তাবে সে রাজি না হওয়ার আগে ওই শিক্ষক প্রেরিত সব তথ্য মোবাইল থেকে সুকৌশলে মুছে ফেলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষক বিভাগের নিজস্ব রুমে এমনকি কুমিল্লা শহরে তার নিজস্ব বাসায় যাওয়ার জন্য ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করতেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হলে শিক্ষার্থীকে সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে তার ভাবতে হবে না। ছাত্রী অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে উক্ত শিক্ষক ছাত্রীর মোবাইলে অনেক তথ্য ছিল বিধায় সেই প্রমাণগুলো নষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক সবকিছু মুছে দিয়েছেন। এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে অভিযোগকারী মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘বিভাগীয় প্রধান প্রথমে আমাকে শ্রেণী প্রতিনিধি (সি আর) হিসেবে নির্বাচন করেন এবং বিভিন্ন সময় আমাকে তার রুমে ডাকতেন। এছাড়াও আমাকে তার শহরের বাসায় ডাকতেন। সেই সঙ্গে আমি এগুলো বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যেতাম। পরে আমাকে প্রলোভিত করার জন্য মেসেঞ্জার থেকে হোয়াটস এ্যাপে ডাকত ও ব্যক্তিগত অনেক কিছু বলত। এসব অনেক তথ্য আমার মোবাইলে সংরক্ষিত ছিল। আমি তার বিভিন্ন প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় আমার ফোন থেকে সব নিয়ে মুছে দেয়। শিক্ষার্থী আরও জানান, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি। আশা করছি প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নিবে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, এর আগেও অভিযুক্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি এবং শিক্ষক ডরমেটরিতে তার কক্ষে তার পছন্দের শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই নাম্বার লিখে দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগেও তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইংরেজী বিভাগের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জানান,‘আমাদের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আগেও বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাত কাটানোর অভিযোগ রয়েছে।’ বিভাগের নিয়মিত ও সান্ধ্য কোর্সের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আসলেই তাদের মধ্য থেকে সুন্দরী ছাত্রীকে শ্রেণী প্রতিনিধি (সি আর) হিসেবে মনোনীত করেন তিনি এবং তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ছাত্রীদের থেকে অনৈতিক সুবিধা পেতে তাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। নিজেদের সম্মান ও রেজাল্টের কথা চিন্তা করে তারা অভিযোগ করতে ভয় পায়। আর সান্ধ্য কোর্সের ছাত্রীদের মধ্য থেকে সুন্দরী ও বিবাহিতরা তার টার্গেট।’ অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ও ইংরেজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু দেয়া হয়েছে তা প্রমাণ করার বিষয়। প্রমাণ করলে বিষয়টি বোঝা যাবে। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইংরেজী বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। সান্ধ্য কোর্সের সঙ্গে আরও যারা জড়িত আছেন সবাইকে নিয়ে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এদিকে আগামী ২৭ জানুয়ারি এ ভার্সিটির প্রথম সমাবর্তন। সমাবর্তনকে ঘিরে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে শিক্ষককের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযোগকারী ছাত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপের বিষয় তাকে জানানো হয়নি। তারপরও তিনি আশাবাদী অবশ্যই তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
×