ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নগরে বিদ্যুতচালিত যানে উদ্দীপনা দিতে পৃথক দর নির্ধারণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 নগরে বিদ্যুতচালিত যানে উদ্দীপনা দিতে পৃথক দর নির্ধারণ হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুতচালিত যানবাহনকে উদ্দীপনা দিতে পৃথক দর নির্ধারণ হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের আদেশের সঙ্গে তিন ধাপে এই দর নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে করে দেশে বিদ্যুতচালিত যানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে পরিবেশ দূষণ এবং জ্বালানি ব্যবহারে ব্যাপকভাবে সাশ্রয়ী হতে বিদ্যুত চালিত যানের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘোষণা করেছে নির্দিষ্ট সময় পর তাদের দেশে কোন জীবাশ্মা জ্বালানির যানবাহন থাকবে না। দেশের নগরগুলোতে বৈদ্যুতিক যানের চলাচল শুরু হলে বায়ু এবং শব্দের দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে। এ ধরনের যান চলাচলে কোন বায়ুর দূষণ হয় না। আবার শব্দের মাত্রাও থাকে খুব কম। খুব শীঘ্রই ঘোষণা হতে যাওয়া বিদ্যুতের বর্ধিত দামের আদেশে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে। কমিশন মনে করছে শীঘ্রই তারা বিদ্যুতের বর্ধিত দাম ঘোষণা করতে পারবে। কমিশন সূত্র বলছে, নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকেও কার্যকর হতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এবিবি পাওয়ারের সঙ্গে চার্জিং স্টেশন করার জন্য চুক্তি করেছে। আবার নেপালের মতো ছোট দেশ পারীক্ষামূলকভাবে কাঠমান্ডুতে সাতটি বিদ্যুত চালিত সিটি বাস ছেড়েছে। পরীক্ষামূলক এই সেবা সফল হলে দেশটির রাজধানী থেকে জীবাশ্মা জ্বালানির যানবাহন তুলে দেয়া হবে। বাংলাদেশের পরিবহন নীতিমালায় বলা হচ্ছে ২০২৫ সালের পর থেকে দেশের রাস্তায় ব্যাপকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচল করবে। তবে এখনও এ বিষয়ে তেমন প্রস্তুতি চোখে পড়েনি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মনে করছে বৈদ্যুতিক যানের জন্য প্রথম প্রয়োজন বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ। এই কাজটি তারা এখনই করে রাখতে চান। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ বিবেচনা করা হচ্ছে। বাজারে ব্যাটারির মানের ওপর নির্ভর করে এই ধাপ তিনটি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এগুলো হলো প্রথম ধাপে আট ঘণ্টায় একটি গাড়ি চার্জ হবে। দ্বিতীয় ধাপে যা হবে তিন ঘণ্টায় এবং সর্বশেষ এবং তৃতীয় ধাপে মাত্র ৩০ মিনিটে। এই তিন ধাপের জন্যই বিদ্যুতের পৃথক দর থাকবে। কমিশন সূত্র বলছে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিদ্যুতের দামে কিছুটা ভর্তুকি দেয়ার চিন্তা করছে। এখন কোন রকম ভর্র্তুকি ছাড়া বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে সাত দশমিক ৩১ টাকা। নতুন এই তিন ধাপের বিদ্যুতের দাম উৎপাদন খরচের ৯০ ভাগ নির্ধারণ করার পক্ষে কমিশন। সেই হিসেবে তিন ধাপের দর ৬ টাকা ৬০ পয়সার মধ্যেই থাকার কথা। অর্থাৎ এই ধাপের উদ্দীপনায় সরকারের কাছে ১০ ভাগ ভর্তুকি প্রদানের সুপারিশের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে কমিশন। এখন দেশে গাড়ির ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা পেয়েছে হাইব্রিড প্রযুক্তি। তেল চালিত গাড়িতে ব্যাটারি চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে এক লিটার তেলে সাধারণ গাড়ি যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে অন্তত তার দেড়গুণ চলে একটি হাইব্রিড পরিবহন। তবে এখানে তেল পুড়িয়ে গাড়ি চালানোর সঙ্গে বিদ্যুত উৎপাদন করে তা ব্যাটারিতে সঞ্চয় করা হয়। ব্যাটারি ফুল চার্জ হলে ব্যাটারির শক্তি খরচ করে গাড়ি চলে। কিন্তু বৈদ্যুতিক যানের ক্ষেত্রে তেলের ব্যবহার একেবারেই থাকবে না। একজন ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটারিতে চার্জ করে নেবেন। এখন দেশে ইজিবাইকগুলো যেভাবে ব্যাটারিতে চলছে একইভাবে অন্য বড় গাড়িগুলোও চালানো সম্ভব। পরিবহনে জ্বালানি খরচের দিক দিয়ে বিদ্যুত ব্যবহার সব থেকে সাশ্রয়ী। পরিবহনে সব থেকে উচ্চমূল্যের জ¦ালানি অকটেন এবং পেট্রোল। এরপর ক্রমান্বয়ে ডিজেল, অটোগ্যাস (এলপিজি), সিএনজি এবং সব শেষ ধাপে বিদ্যুতকে বিবেচনা করা হয়। অথচ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কিছুটা নতুন হওয়াতে এখনও বৈদ্যুতিক যানে আমাদের উচ্চ এবং মধ্যবিত্তের ঝোক নেই। সাশ্রয়ী হওয়াতে এখনও ইজিবাইক গ্রামগঞ্জের বাহন হিসেবেই চলাচল করছে। তবে নিম্নমানের এবং কমদরের প্রযুক্তি ব্যবহার করায় ইজিবাইকের কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। দেশে পাঁচ লাখের মতো ইজিবাইক চলাচল করলেও এর প্রযুক্তি উন্নয়ন করে কিভাবে আরও নিরাপদ করা যায় তা নিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। তবে আধুনিক প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক যান আমদানি শুরু হলে নিম্নœমানের এসব থ্রি-হুইলার আর ব্যবহার করতে হবে না। ইজিবাইক ছাড়াও কিছু মোটর বাইক বিদ্যুত ব্যবহার করে চলাচল করছে।
×