ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুখীর পরিবারের দুঃখের কাহিনী

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 সুখীর পরিবারের দুঃখের কাহিনী

শিশু বয়সেই সংসারের ঘানি টানার দায়িত্ব পরে সুখী আক্তারের কাঁধে। ছয় বছর বয়সেই হারিয়েছে বাবাকে। বাকপ্রতিবন্ধী মা শিউলী বেগম, শারীরিক প্রতিবন্ধী নানি মরিয়ম বেওয়া আর মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই সাইফুল্লাহকে নিয়েই বাস সুখী আক্তারের। জীবন যুদ্ধে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সে। অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করে দুই বছর ধরে সংসার চালিয়ে সুখীর লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছে দিব্বি। এই সুখী কোন সুখী মানুষের গল্প নয়, হার না মানা এক কিশোরীর আকুতি। তার স্বপ্ন সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করা। এই সুখী হলেন ঠাকুরগাঁও সদর পৌরসভার গোয়ালপাড়ার মৃত হামিদুল ইসলামের মেয়ে। সে শহরের গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে কোন মতে চলছিল গোয়ালপাড়ার বাদাম বিক্রেতা হামিদুল ইসলাম। কিন্তু ছয় বছর আগে তার আকস্মিক মৃত্যুতে হোঁচট খায় পরিবারটি। তখন সুখীর মা শিউলী আক্তারের ওপর দায়িত্ব পরে সংসারের হাল ধরার। কিন্তু বাক প্রতিবন্ধী শিউলী ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাতে হিমসিম খায়। বাঁক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্যের বাড়িতে আর কাজও নেয় না শিউলীকে। তাই বেকার হয়ে যায় সে। তখন সুখীর কাঁধে পরে সংসারের ঘানি। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিউলী প্রতিবেশীর বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ নেয়। মাসে ৫শ’ টাকা মাইনে আর এক বেলা খাবারেই কোন মতে চলে তাদের সংসার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতিদিনই স্কুলে হাজির হয় সুখী। আর্থিক সঙ্কট আর শত বিপত্তির মাঝেও হাল ছাড়েনি সুখী। সাংসারিক কষাঘাতের ভারে এগিয়ে চলা, এখন সে ৯ম শ্রেণীতে পড়ছে, সুখী যেন হাল না ছাড়ার এক দৃষ্টান্ত উদাহরণ। সুখী আক্তার জানায়, সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কাজ করি অন্যের বাসায়। ১০ টার সময় স্কুলে যাই। বিকেলে ফিরে আবারও কাজ করতে চলে যাই অন্যের বাসায়। সে কাজ চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত। অন্যের বাসায় কাজ করে যে খাবার টুকু পাই, রাতে বাসায় ফিরে সেটাই ভাগ করে খাই সবাইমিলে। এছাড়াও মাস শেষে কাজের যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। কখনোও কেউ তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। প্রচন্ড এ শীতে একটা কম্বলও পাইনি আমরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ যেসব জায়গাতে গিয়েছি সাহায্যের জন্য, খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে আমাকে। এত কষ্টের মাঝেও তাই লেখাপড়াটা চালিয়ে যাচ্ছি ভাল কিছু করার আশায়। কিন্তু উপবৃত্তিটুকুও পাই না আমি। প্রধান শিক্ষক খাশিরুল ইসলাম জানান, সুখী আমার স্কুলের নবম শ্রেণীর একজন মেধাবী ছাত্রী। সে কষ্ট করে লেখাপড়া করে জানতাম। তবে সে অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালায় আর পাশাপাশি লেখাপড়াটাও চালিয়ে যাচ্ছে এটা জানতাম না। আমরা তাকে স্কুলের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পৌর এলাকা আমার আয়ত্তের মধ্যে পড়ে না। তবে তার জন্য কিছু করার ব্যাপারটা আমি ভেবে দেখব। -এস, এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও থেকে
×