ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আনোয়ারার জমিদার বাড়ি

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আনোয়ারার জমিদার বাড়ি

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অযত্ন, অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে চারশ’ বছরের প্রাচীনতম পরৈকোড়া যোগেশ চন্দ্র সেনের জমিদার বাড়ি। কালের বিবর্তনে প্রায় ধ্বংসের পথে এই বাড়ির অধিকাংশ ভবন। জঙ্গলে ঢেকে গেছে বেশিরভাগ অংশ। খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা। অবহেলায় প্রাচীন পূরার্কীতির এই ঐতিহাসিক বাড়ি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ জমিদার বাড়িটি ভ্রমণ পিপাসুদের মনে আনন্দের খোরাক যুগিয়ে আসছে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটি তার জৌলুস হারাতে বসেছে। ইতিহাস থেকে জানা গেছে, জমিদার শান্তিরাম কানুনগো ১৬০০ সালের দিকে এই জমিদার বংশের গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তী সময়ে তার পুত্র দেওয়ান বৈদ্যনাথ এই জমিদারী পরিচালনা করেন। দেওয়ান বৈদ্যনাথের পরে জমিদারী পরিচালনা করেন তার পুত্র হরচন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তাই তিনি দত্তক নেন গিরিশ চন্দ্রকে। এরপর তিনিই এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু গিরিশ চন্দ্র রায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করলে তার স্ত্রী নয়নতারা যোগেশ চন্দ্রকে দত্তক নেন। এরপর তার মৃত্যু হলে এই পুরো জমিদারীর হাল ধরেন যোগেশ চন্দ্র রায়। তিনি পরৈকোড়া এলাকার একটা মধ্য ইংরেজী স্কুলকে তার পালক মায়ের নামে ‘নয়নতারা উচ্চবিদ্যালয়’ নামকরণ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। তারপরে তাঁর তিন ছেলে পূর্ণেন্দু বিকাশ রায়, সুখেন্দু বিকাশ রায় ও অমলেন্দু বিকাশ রায় জমিদারির হাল ধরলেও ধীরে ধীরে জমিদারি জৌলুশ হারাতে থাকে। তার সঙ্গে হারিয়ে যায় শত বছরের জমিদারি ইতিহাস। এলাকাবাসী ও সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইট-সুঁড়কি দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে জমিদার বাড়ির ভবন ও মঠগুলো। এই বাড়িতে পাঁচটি দালান রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাড়ির ভিতরে রয়েছে বিশাল দীঘি। আরও রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি পুকুর। বাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে ঐতিহ্য বহনকারী দুটি গম্বুজ এবং রয়েছে মনোমুগ্ধকর একটি তোরণ। ভেতরে গিয়ে চোখে পড়ে অসাধারণ সব কারুকাজ। কিছু কিছু চুন-সুঁড়কি খসে পড়লেও ছাদের বড় বড় লোহার পাটাতন দেখেই বোঝা যায় হারানো দিনের জমিদার বাড়ির জৌলুস। সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এখানকার সুউচ্চ মঠগুলো। একটি ভবন ছাড়া অধিকাংশ ভবন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। জমিদারবাড়িতে এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যাওয়ার জন্য সাতটি তোরণ ছিল। এখন টিকে আছে দুটি। তিনটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষও চোখে পড়ে। আনোয়ারার এই পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িটির প্রতি পর্যটকরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। -ইমরানুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে
×