ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নোবিপ্রবিতে থাই বকফুল চাষ

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

নোবিপ্রবিতে থাই বকফুল চাষ

বকফুলের উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Sesbania gradiflora. এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। বকফুল শিম বা মটর গোত্রীয় গাছ। কিন্তু গাছ দেখতে মোটেই শিম বা মটরের মতো নয়। ফুলের গড়নে কিছুটা মিল থাকলেও পাতা ও গাছের সঙ্গে এর মিল নেই। বকফুল মাঝারি আকারের ঝাড়জাতীয় বৃক্ষ। ফুলের আকার ও আকৃতি গাছের ডালে বকের ঠোঁটের মতো বোঁটায় ঝুলে থাকতে দেখায় বলে এ ফুলের নামকরণ করা হয়েছে বকফুল। এ গাছের অনেকগুলো বাংলা নাম আছে, যেমন- বক, বগ, বকফুল, বগফুল, অগস্তি, মণিপুষ্প ইত্যাদি। বকফুল গাছের ফুল গুচ্ছভাবে প্রতি বোঁটার অগ্রভাগে ধরে। বকফুল ক্ষুদ্র আকৃতির পত্রমোচি গাছ। গাছটির কা- সরল, উন্নত, ম্লান- বাদামি ও মসৃণ। বকফুলের পাতা যৌগিক, একটি দ-ের দুইপাশে সুন্দর করে চিরুনির দাঁতের মতো ২০-৫০টি পাতা সাজানো থাকে। দণ্ডসহ পাতার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সে.মি. । পাতার অগ্রভাগ গোলাকার ও আকৃতি ডিম্বাকার। বকফুল ও বকফুলের কোমল কলিগুলো চ্যাপ্টা ও কাস্তের মতো বাকানো। প্রায় সারা বছরই বকফুল গাছে ফুল ফোটে। ফল লম্বা, প্রায় গোল এবং বীজ থেকে সহজেই চারা তৈরি করা যায়। বকফুলের আদি আবাস মালয়েশিয়া। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বকফুল গাছ জন্মে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, লাওস, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন, ফিলিপিন্স, ভারত প্রভৃতি দেশে বকফুল গাছ লাগানো হয় এবং এ গাছটি এখন অস্ট্রেলিয়া, কিউবা, মেস্কিকো প্রভৃতি দেশেও জন্মাচ্ছে। বিগত প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে পশ্চিম আফ্রিকাতেও বকফুলের চাষ করা হচ্ছে। বকফুল সবজি হিসেবে অতি উত্তম, মুখরোচক, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফুল। বকফুলের বড়া বাংলার মানুষের কাছে একটি অতি পছন্দের খাবার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বকফুল গাছের প্রতিটি অংশই ভেজষ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এবং এর ঔষুধি গুণাগুণ আছে প্রচুর। জ্বর, ফোলা ও ব্যথা-বেদনা সারাতে, বাতের ব্যথায় শিকড় চুর্ণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়। চুলকানি-পাচড়া সারাতে কম্বোডিয়ায় বকফুল গাছের বাকল চুর্ণ লাগানো হয়। কৃমি ও জ্বর সারাতে বকফুলের পাতার রস ব্যবহার করা হয়। রাতকানা রোগের ওষুধ হিসাবে বকফুল গাছের পাতার রস ব্যবহার করা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, চোখের ¯œায়ু জোরদার করে বার্ধক্য ও হাড় দুর্বলতা প্রতিরোধ করতে বকফুল পাতার রস খুবই উপকারী। বকফুলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, খনিজ লবণ, চর্বি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সহায়তা করে। বকফুল তিন রঙের দেখা যায়- সাদা, লাল ও গোলাপি। লাল বকফুলের জাতটি আমাদের দেশে এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুবোধ কুমার সরকার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটরিয়ামের ছাদে ছাদকৃষির অংশ হিসাবে পরীক্ষামূলকভাবে লাল জাতের একটি বকফুলের চারা এ বছরের গত আগস্ট মাসে রোপণ করেন। চারাটি লাগানোর প্রায় আড়াই মাসের মধ্যে গাছটিতে প্রচুর লাল রঙের ফুল ফোটে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে যে, নোয়াখালী অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ওই সবজি জাতীয় ফুল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। অতএব, নোবিপ্রবিসহ নোয়াখালীর মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে এই সবজি জাতিয় বকফুলের চাষাবাদ শুরু করা গেলে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। উল্লেখ্য, প্রাতিষ্ঠানিক ছাদকৃষিকে আরও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এ গবেষক ছাদে বকফুলের পাশাপাশি, বিভিন্ন জাতের ড্রাগন ফল, উত্তর আফ্রিকার কালো আঙ্কুর, থাই জাতের আম, মাল্টা, লিচু ইত্যাদি ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন।
×