ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের আংশিক পর্যবেক্ষণ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের আংশিক পর্যবেক্ষণ

(গতকালের সম্পাদকীয় পাতার পর) প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা ও সামরিক বাহিনীর আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা বিচারপতি সিদ্দিকী রায়ের পর্যবেক্ষণে বিডিআরের বিদ্রোহ দমনে সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের ভয়াবহতা ও আকস্মিকতায় সদ্য নির্বাচিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারপ্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম ধৈর্য বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সঙ্গে দৃঢ় মনোবল নিয়ে শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমনের যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত ছিল দূরদর্শিতাপূর্ণ। বাংলাদেশ রাইফেলসের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘেœর লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসের চক্রান্ত রূখে দেয়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়কোচিতভাবে তাঁর গৃহীত দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল সময়োপযোগী। পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি অগাত বিশ্বাস ও অবিচল আস্থা রেখে চরম ধৈর্যের সঙ্গে উদ্ভূদ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সমগ্র দেশবাসীর ভালবাসা ও সুনাম অর্জন করেছে। পিলখানা হত্যাকা- বিশ্বের একটি নজিরবিহীন ঘটনা পর্যবেক্ষণে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দফতর পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকা-কে একটি নজিরবিহীন ঘটনা উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এত অল্প সময়ে এক সঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী দীর্ঘ ৯ মাস ধরে নিরস্ত্র বাঙালীদের হত্যা করেছিল এবং চালিয়েছিল নির্মম পাশবিক নির্যাতন। আর ২০০৯ সালের ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩০ ঘণ্টায় বিডিআরের সদর দফতর পিলখানায় বিদ্রোহীরা নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার-পরিজনদের ওপর লোমহর্ষক হত্যা ও পাশবিক নির্যাতন সংঘটিত করে পাক হানাদার বাহিনীকেও হার মানিয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ৫৫ জন বাঙালী সেনা কর্মকর্তা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিল। আফ্রিকার রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর গৃহযুদ্ধে ১৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির পাওয়া যায়। দক্ষিণ ফিলিপিন্সের বিদ্রোহে ৬ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে চীনপন্থী কমিউনিস্টদের সমর্থনে সংঘটিত ৭ দিনের বিদ্রোহে ১০০ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিল। পিলখানার ঘটনা তাকেও হার মানিয়েছে এ কারণে যে, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে কার্যত মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ছিল নৃশংস, অবর্ণনীয়, বর্বরোচিত ও নজিরবিহীন। পিলখানা বিদ্রোহে বাহিনীর বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভূলুষ্ঠিত হয়েছে বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ রাইফেলসের ২১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঋরৎংঃ উবভবহপব ঋড়ৎপব হিসেবে অতন্দ্র প্রহরীরূপে বাংলাদেশ রাইফেলসের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অনস্বীকার্য। মেধা, দক্ষতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বারবার প্রমাণিত হয়েছে। মহাকালের গহ্বরে গৌরবগাথা সে ইতিহাস ও পেশাদারিত্বের ঐতিহ্যকে তারা ভূলুণ্ঠিত করেছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গড়ে ওঠা সুসংগঠিত আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ রাইফেলসের জোয়ানরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীর ৫৭ জন দেশপ্রেমিক মেধাবী অফিসারসহ ৭৪ জন নিরস্ত্র মানুষ নৃশংসভাবে হত্যাসহ নারী, শিশু ও গৃহকর্মীকে অমানবিক অত্যাচার করে দেশের আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়াসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে। এই নারকীয়, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বাংলাদেশ রাইফেলসের বিদ্রোহী জোয়ানরা এক কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। এই কলঙ্ককের চিহ্ন তাদের বহুকাল বহন করতে হবে। বিডিআরের বিদ্রোহী সদস্যরা ষড়যন্ত্র, নৃশংস হত্যাকা-, অমানবিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্রাগার ও ম্যাগাজিন ভেঙ্গে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুণ্ঠন, গ্রেনেড বিস্ফোরণ, সশস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জনজীবনে মারাত্মক ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি, সামরিক অফিসারদের লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়াসহ নারী-পুরুষের মৃতদেহ উলঙ্গ/অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় গাদাগাদি করে গণকবর দিয়ে লাশ গুম করার মাধ্যমে ২১৮ বছরের অর্জিত সুনাম বিসর্জনসহ বাহিনীর সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে অবমাননা করেছে, যা কাটিয়ে ওঠা সহজসাধ্য নয়। আদালত কক্ষে ভিডিও ফুটেজে প্রদর্শিত ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, ময়মনসিংহের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল অনিরুদ্দের উপস্থাপিত প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শিত ভয়াবহ দৃশ্য প্রদর্শনকালে উভয়পক্ষের বিজ্ঞ কৌঁসুলিদের উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালত কক্ষটিতে ছিল পিনপতন নীরবতা। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিদ্রোহীরা উদ্ধত কণ্ঠে বলে, ‘সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণে, জনগণ তাদের পাশে আছে, তাদের দাবি মানতে হবে, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য বিডিআর থেকে প্রত্যাহার করতে হবে, সেনাবাহিনীর অফিসার দ্বারা তারা নির্যাতিত, বিডিআর ‘সেনা বাহিনী থেকে শক্তিশালী। তাদের দাবির সমর্থনে দেশের সকল বিওপিতে বিদ্রোহ চলবে। সেনাবাহিনী ও তাদের একই অস্ত্র। অপারেশন ডাল-ভাতের টাকা দুর্নীতিবাজ সেনা অফিসারগণ আত্মসাৎ করেছে। প্রয়োজনে তাদের কুকুরের মতো বিডিআর থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা কোন সেনা অফিসারকে হত্যা করেনি। যদি কোন লাশ পাওয়া যায় তবে ধরে নেব সেনা অফিসাররাই ওদের হত্যা করেছে। ডিজিসহ অবরুদ্ধ সেনা অফিসারগণ তাদের নিয়ন্ত্রণে ভাল আছে। সেনাবাহিনী পিলখানা আক্রমণ করলে তারা পাল্টা জবাব দেবে। প্রয়োজনে ধানম-ি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় উড়িয়ে দেয়া হবে ইত্যাদি। ভিডিও ফুটেজে ২৫/০২/২০০৯ তারিখ বেলা ৯.৩০ মিনিটে বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে দিনব্যাপী গুলি, মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ, বিকট শব্দে গ্রেনেডসহ শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয় আশপাশের এলাকা। সমগ্র পিলখানার আকাশে কালো ধোঁয়ার কু-লি দৃশ্যমান হয়। বিমানবাহিনীর উড্ডয়নকৃত হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহ বন্ধের আহ্বানে লিফলেট বিতরণের সময় বিদ্রোহীদের গুলিবর্ষণের সময় হেলিকপ্টারের তেলের ট্যাংক ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় জরুরী অবতরণের জন্য ফিরে যাওয়ার দৃশ্য, পিলখানার অভ্যন্তরে উঁচু ভবন ও ৪ নং গেটসহ অন্য সকল গেটে ভারি অস্ত্র স্থাপন, বিদ্রোহীরা রণসাজে সজ্জিত হয়ে পিলখানার ভেতরে মেশিনগান লাগানো পিকআপে করে টহলরত অবস্থায় দেখা যায়। দরবার হলের চেয়ার-টেবিল উলট-পালট, জানালা-দরজার কাঁচ ভাঙ্গা, কার্পেট এলোমেলো, মেঝেতে রক্তের দাগ দৃশ্যমান। দরবার হলের সামগ্রিক দৃশ্যে বিদ্ধস্ত অবস্থা পরিস্ফূটিত হয়। এ যেন এক প্রলয়ঙ্করী টর্নেডো বয়ে গেছে পিলখানাব্যাপী। ডিজির বাংলোর দৃশ্য আরও ভয়াবহ। ডুপ্লেক্স বাসভবনটির সিঁড়ি বয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার দেয়ালে অসংখ্য বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, শয়নকক্ষের বিছানা, আসবাবপত্র এলোমেলো, দেয়ালে টানানো ছবি ভাঙচুর, বুলেটের নৃশংসতার ছাপ, আলমারি ভেঙ্গে লুটপাটের চিহ্ন, ক্রোকারিজ ভাঙচুর, রান্নাঘরের মেঝেতে রক্তের দাগসহ বীভৎস এক অবর্ণনীয় দৃশ্য। এ দৃশ্যে বিদ্রোহীদের সর্বগ্রাসী জিঘাংসা ও ক্ষোভের বহির্প্রকাশ পরিস্ফূটিত হয়েছে। ডিজির বাসভবনে তার স্ত্রী নাজনীন শাকিল শিপু, বেড়াতে আসা অতিথি লেঃ কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী রৌশনী ফাতেমা আক্তার লাভলী, গৃহকর্মী কল্পনা বেগম, মালী ফিরোজ মিয়া ও লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন বিদ্রোহীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকারই শুধু নয়, তাদের নির্মমভাবে বুলেটের ব্রাশফায়ারে সমস্ত শরীর ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। যার সত্যতা সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে প্রমাণ মেলে। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ সকলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। ঘটনার অব্যবহিত পরে কামরাঙ্গীরচরে এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি গণকবর থেকে নিহত সেনা অফিসারদের লাশ উত্তোলন করা হয়। সেই ভয়াবহ চিত্রের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ আদালতে প্রদর্শিত হয়েছে। কর্নেল জাহিদের স্ত্রী তার স্বামীর অর্ধগলিত দুর্গন্ধযুক্ত লাশ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। কর্নেল জাহিদের অবুঝ পুত্র নিলয়ের হৃদয়বিদারক কান্না বর্ণনা করার মতো নয়। নিলয় চিৎকার করে বলতে থাকে, ৫/৬ দিন তার বাবাকে দেখেনি। কি অপরাধ ছিল তার বাবার, যে বিদ্রোহীরা তার জীবন কেড়ে নিল? আমরা কোথায় যাব? বাবাকে কোথায় পাব? বাবাকে ফিরিয়ে দাও! কে করবে আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার? কর্নেল জাহিদের পচন ধরা ক্ষতবিক্ষত লাশ জড়িয়ে ধরে স্ত্রী/পুত্রের এরূপ আহাজারিতে আদালত কক্ষে অধিকতর নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। আদালত কক্ষে উপস্থিত সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছে ভিডিও ফুটেজের ঐ সকল মর্মান্তিক দৃশ্য অবলোকনে। কি নৃশংস, নির্মম ঘটনা, কি ভয়াবহ। এটা কি কেবলমাত্র ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা? না দেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে বুলেটের আঘাত হানা? জাতি কিভাবে ভুলবে এই বর্বরতা? কি এমন অপরাধ করেছিল সেনাবাহিনীর মেধাবী অফিসাররা? কেন, কি উদ্দেশ্যে এই বর্বর হত্যাকা-? সশস্ত্রবাহিনী কোন ট্রেড ইউনিয়ন নয়। এখানে দাবি নিয়ে আন্দোলন করার কোন সুযোগ নেই। ২১৮ বছরের ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করে সুনামের সঙ্গে গড়ে ওঠা দেশের অতন্দ্র প্রহরী আধা সামরিক বাহিনীর বিভাগীয় কিছু উচ্চাভিলাষী অফিসার এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় কিছু সৈনিকের নেতৃত্বে বিডিআরের একটি অংশ এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে সমগ্র বাহিনীকে কলঙ্কিত করেছে। তারা শপথ নিয়েছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হাতে নিয়ে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবে। সীমান্ত রক্ষায় বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবে। কিন্তু কেন তারা নিজ দেশের সন্তানদের ওপর বুলেট চালিয়ে নিস্তব্দ করে দিল ৭৪টি তাজা প্রাণ? চলবে... লেখক : হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি
×