ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

দীপিকার নতুন অধ্যায়

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

দীপিকার নতুন অধ্যায়

মালতিকে দেখলে পুরুষ হৃদয়ে উচ্ছ্বাস জাগে না, দেহমনে শিহরণ সৃষ্টি হয় না। তাকে একান্ত আপন করে পেতে মন চায় না। মালতির চেহারায় নারীর সহজাত সৌন্দর্যের বদলে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ঝলসে যাওয়া কুঁচকানো বিকৃত কুৎসিত একটা ভাব ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ তাকে দেখলে যে কোন নারী-পুরুষ আঁতকে ওঠে, মুখ ফিরিয়ে নেয় চট করে। দ্বিতীয়বার মালতিকে দেখার ইচ্ছে জাগে না, তাকে কোনভাবে এড়িয়ে বাঁচতে চায় সবাই। সমাজে এ রকম বিকৃত মুখ নিয়ে একটি মেয়ের সহজ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অনেক কঠিন। তবে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়ে স্বাভাবিক সুন্দর স্নিগ্ধ চেহারা হারানো মেয়েটির দু’চোখে একদিন অনেক স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নগুলো রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াত। মালতির সব স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা কেড়ে নিয়েছে একজন পুরুষের পাশবিক জিঘাংসা, সেই পুরুষের ছোড়া এসিডে ছলসে গেছে মেয়েটির সুন্দর সুশ্রী চেহারা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে তার মুখাবয়ব। সমাজের সবাই যখন তার প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা প্রদর্শন করে চলেছে কেউ কেউ তার প্রাপ্য সম্মান, অধিকার, ন্যায্য পাওনা দিতে নারাজ-মালতি সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে নিজের ন্যায্য অধিকার আদায়ে অনেকটা অদম্য মনোভাব নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়, নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে চায় প্রত্যাশিত গন্তব্যের দিকে। এসিড সন্ত্রাসের শিখার এ রকম অনেক মালতি আমাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ায় প্রতিদিন কিংবা বাড়িতে চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সামাজিক বাস্তবতার আলোকে একজন ভাগ্য বিড়ম্বিত এসিড সন্ত্রাসের শিকার তরুণী মালতির জীবনের হৃদয়স্পর্শী গল্প তুলে ধরা হয়েছে ‘ছপাক’ ছবিতে। গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে বলিউডি সিনেমাটি। রূপবতী মায়াবি চেহারার লাবণ্যময়ী কোন উদ্ভিন্নযৌবনা তরুণী নয়, প্রচলিত সুন্দরী গ্ল্যামারাস ইমেজের নায়িকা চরিত্রের বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি নারী চরিত্রে রুপালি পর্দায় উপস্থিত হয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন। মালতি চরিত্রে রূপায়ণ তার অভিনয় জীবনে নতুন আরেক অসাধারণ চমক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দর্শক সমালোচক সবাই দীপিকার দুর্দান্ত অভিনয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন। ২০০৫ সালে ভারতের দিল্লী শহরে প্রকাশ্য রাজপথে প্রেম প্রত্যাশী এক যুবকের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এসিড হামলার শিকার এক তরুণী লক্ষ্মী আগরওয়ালের বাস্তব জীবনের গল্প অবলম্বনে ‘ছপাক’ ছবিটি নির্মিতি হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মেধাবী গুণী নারী চিত্রনির্মাতা মেঘনা গুলজার। সামাজিক বাস্তবতায় নির্মমতার শিকার হয়ে দুর্বিষহ জীবনে নিমজ্জিত অগণিত নারীর আর্তনাদ, হাকাকার, হৃদয়ের একান্ত গভীরে চেপে থাকা দুঃখ-বেদনা বঞ্চনার অনুভূতিগুলো ‘ছাপক’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মালতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল। পরিচালক মেঘনা গুলজার মালতি চরিত্রে দীপিকা পাড়ুকোনকে কাস্ট করে দুঃসাহসের পরিচয় দিয়েছেন। কারণ, বলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী হলেই সব ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি যোগ্য হবেন- তা হতে পারে না। এর আগে অনেক হিন্দী সিনেমায় নিজেকে সফল ও গুণী অভিনেত্রী হিসেবে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন দীপিকা। এসিড হামলার শিকার হয়ে স্বাভাবিক সুন্দর চেহারা হারিয়ে ভয়ঙ্কর দর্শন হয়ে ওঠা, এক তরুণীর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে বলিউডের সুন্দরীতমা জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রীকে। নিজের সুন্দর চমৎকার চেহারাকে প্রসেনথেটিক মেকআপের আড়ালে লুকোতে হয়েছে। মালতি সাজতে গিয়ে দীপিকাকে দীর্ঘ সময় ধরে অনেক হোমওওয়ার্ক করতে হয়েছে। বাস্তবের যে চরিত্রের কেন্দ্র করে মালতি চরিত্রটি সৃষ্টি করা হয়েছে দিল্লীর এসিড সন্ত্রাসের শিকার সেই লক্ষ্মী আগরওয়ালকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে তাকে। পর্দায় দীপিকাকে মালতিরূপে দেখে কোনভাবেই চেনা যায় না তাকে। কী অবলীলায় নিজের সুন্দর মনকাড়া আকর্ষণীয় রূপকে আড়াল করেছেন জটিল মেকআপের মাধ্যমে। যারা ইতোমধ্যে ‘ছপাক’ ছবিটি দেখেছেন তাদের খোলামেলা অকপট সহজ-সরল প্রতিক্রিয়া হলোÑ এ কোন্্ দীপিকাকে দেখলাম আমরা, জীবনের শ্রেষ্ঠতম কাজ করেছেন তিনি মালতি চরিত্রে। ‘ছপাক’ ছবির প্রধান আকর্ষণ তার দুর্দান্ত অভিনয়।’ ‘পদ্মাবত’ ছবিতে রাজপুত রানী পদ্মাবতী চরিত্রে অভিনয়ের পর বেশ কিছুদিন স্বামী অভিনেতা রণবীর সিং এবং সাংসারিক দায়িত্ব পালনে সময় দিয়েছিলেন একান্তভাবে। বিরতির পর দীপিকা ‘ছপাক’ ছবির মাধ্যমে দর্শকদের সামনে ফিরে এসেছেন অভিনয়ের চমক নিয়ে তবে তার গত কয়েকটি সিনেমা ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘রামলীলা’, ‘পদ্মাবত’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘পিকু’,‘তামাশা প্রভৃতির বক্স অফিস সাফল্যের কাছে সাম্প্রতিক ‘ ছপাক’ ছবির বক্স অফিস রিপোর্ট মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। বলা যায়, এ ছবিতে বক্স অফিসে রীতিমতো ধরাশায়ী হয়েছে। তবে এ নিয়ে অভিনেত্রী দীপিকা মোটেও হতাশ নন। নিজের অভিনয়ের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। এ ছবিটির মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছিলেন বলিউনের এই সুপারস্টার। ‘ছপাক’ ছটিটির জন্য আগাম বছর অনেকগুলো পুরস্কার নিজের ঝুলিতে পুরলেও মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে তাকে অনেকটা অপূর্ণতা নিয়ে থাকতে হবে। দীপিকা বর্তমানে অভিনেতা স্বামী রণবীর সিংয়ের বিপরীরিতে বিখ্যাত ক্রিকেটার কপিলদেবের বায়োপিক ‘এইটি থ্রি’ তে কপিল পতœী রোমির ভূমিকায় রূপদান করছেন। এ ছবিতে কপিল দেব সেজেছেন রণবীর সিং। সাকুন বাত্রার রোমান্টিক ড্রামায় (যার নাম এখনও ঠিক করা হয়নি) সিদ্ধান্ত চতুবেদি ও অনন্যা পা-ের সঙ্গে অভিনয় করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দীপিকা। মহাভারত অবলম্বনে নির্মিতব্য ছবিতে দ্রৌপদী চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। উল্লেখ্য, এ ছবিটে প্রযোজনা করবেন দীপিকা পাড়ুকোন।
×