ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলোক আচার্য

প্রয়োজন কঠোর আইন

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

প্রয়োজন কঠোর আইন

গত বছর দেশে দেড় হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনা কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জন নির্যাতিতকে। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। পত্রিকার পাতায় সে খবর আমরা পাই। এরই মধ্যে কোন কোন ঘটনায় দেশের শুভ চেতনার মানুষ রাস্তায় নামে। প্রতিবাদ জানায়। তারপরও আবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই চলছে গত কয়েক বছর ধরেই। অদৃশ্য দানব চেপে বসছে আমাদের মাঝে। ধর্ষকদের আইনেরও আওতায় আনাও হচ্ছে। শাস্তিও হচ্ছে। তাও যেন কোনভাবেই ধর্ষণের ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। এটা এখন মানসিক বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ঘরে, রাস্তায়, দোকানে, চাকরিতে, স্কুল-কলেজে কোথাও তারা নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আজকাল আবার পরোক্ষভাবে ধর্ষণের শিকার নারীটির দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। আসলে সাপ যাকে কোনদিন দংশন করেনি সে কি পারে বিষের যন্ত্রণা অনুভব করতে। যে পরিবারের একটা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয় সেই পরিবারই যন্ত্রণা বোঝে। কারণ সমাজটা বড় অদ্ভুত। ধর্ষকদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার লোকেরও অভাব হয় না। মেয়েটার কত দোষ চোখে আঙুল দিয়ে বের করে দেয়। এই সাফাই গাওয়ার প্রবণতা ধর্ষকদের উৎসাহ দেওয়ারই নামান্তর। কিন্তু আমরা তো একটা ধর্ষণকারী মুক্ত সমাজ চাই। ধর্ষণ তো কামের কুপ্রবৃত্তির চূড়ান্ত রূপ। কামের বশবর্তী হয়ে ওরা যে সমাজটাকেই ধর্ষণ করে চলেছে তার খবর ওরা রাখে না। সভ্য সমাজে অসভ্য হায়েনার নাচ আর কতকাল দেখতে হবে কে জানে। অবশ্য সভ্যতার দোহাই দিয়ে আজকাল আমরা যা করছি তাতে আর নিজেদের সভ্য বলা যায় কি না ভেবে দেখতে হবে। অনেক পরিবারে মেয়ে জন্ম হলে যেন পরিবারে আনন্দিত হবার বদলে কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যেত এবং আজও যায়। কন্যাশিশু জন্ম হওয়াতে পরিবারের সবার কপালে এই ভাঁজ পড়ত। মেয়েদের ক্ষেত্রে ছিল পদে পদে নিষেধাজ্ঞা। তাদের পৃথিবী ছিল ছোট। আজ তাদের চলায় সেসব বাধা নেই। তবে চলার পথ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপদের শঙ্কাও বেড়েছে বহুগুণ। আগে মেয়েদের এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না। এখানে মেয়েদের থাকা ঠিক না বা মেয়েরা এ কাজ করতে পারে না। তাদেরকে নানাভাবে ছোট করা হয়েছে, বানানো হয়েছে পুতুল। মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন অসম্ভব। মেয়েদের ভোগের বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করার আগে একবার নিজের পরিবারের দিকে তাকাই। একটি সমাজ তার নিজস্ব গতিধারায় চলে। ইতিহাস সাক্ষী আছে সেই ধারায় সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে নারীরা। আজও যতই অধিকারের কথা বলা হোক অবস্থার উন্নতি খুব বেশি হয়নি। মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারিনি। সমাজের সেই গতিধারা ইতিবাচক না নেতিবাচক হবে তা নির্ভর করবে সেই সমাজের মানুষের ওপর। আমাদের মানবিক গতিধারা এখন নেতিবাচকভাবেই প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা সেই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছি। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের উপায় কি? ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন যে ঘটনাই ঘটুক আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারছি না। তার কারণ আমরা এটাই জানি না আমাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোর কে কতটা মানবিক বা কার ভেতর কখন সেই নিষ্ঠুর দৈত্য জেগে উঠবে তা বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। ফলে আমরা তা ঠেকাতে পারছি না। এর থেকে স্থায়ী প্রতিকার পেতে হলে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিবেকহীন, নিষ্ঠুর, হিং¯্র মানুষ যে সমাজ থেকে একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হবে তা বলা যায় না। শরীরে যেমন রোগের জীবাণু থাকবেই, তার যেমন প্রতিষেধক আছে তেমনি ধর্ষণ নামক এই ব্যাধিরও প্রতিষেধক আছে। তা খুঁজে বের করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। পাবনা থেকে
×