ধর্ষণ আমাদের সমাজ ও দেশে যে এক মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সমাজের কোন ঘটনাই বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে না, তেমনি ধর্ষণও কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সঙ্গে জড়িত সমাজ ও দেশের প্রতিটি অংশ। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা থেকে শুরু করে পারিবারিক শিক্ষা পর্যন্ত এর যোগসূত্র রয়েছে।
প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিগতভাবে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে, রয়েছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আর্কষণ। আমরা ধর্ষককে যতই ঘৃণা করি না কেন, ধর্ষক যেমন তার কুকর্ম বন্ধ করবে না তেমন প্রাকৃতিক নিয়মকেও আমরা অস্বীকার করতে পারব না। নিয়তি ও প্রাকৃতিক নিয়ম বলে বসে থাকলে যেমন ধর্ষণ কমবে না তেমনি ধর্ষককে শুধু ঘৃণা করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
ধর্ষণ নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমেই ধর্ষণের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অতঃপর খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা যায়।
অবশ্যই সব সমস্যারই সমাধান আছে তবে এর থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। ধর্ষককে সমাজ থেকে বিতাড়ন ও কঠিন শাস্তি প্রদান যাতে অন্যরা এমন অপরাধ করার সাহস না করে।
* দ্বিতীয়ত, শিশুকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান। পারিবারিক ভাঙন রোধ ও শিশুকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে না দিয়ে প্রকৃত শিক্ষা প্রদান।
* বিদ্যালয়গুলোকে মানবিক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা ও শিক্ষাব্যবস্থায় মানবিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া।
* শিক্ষকের অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
* রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর আইন ও এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করা ও সরকারের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্ষণবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালানো।
* গ্রাম্য শালিসি ও ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রবণতাকে দূর করা।
* পর্নো ভিডিওর অবাধ একসেস বন্ধ করা। টিভি চ্যানেলগুলোতে নীতিমালা তৈরি করে অশ্লীল ভিডিও প্রচার বন্ধ কর। অশ্লীল বিলবোর্ড টানানো বন্ধ করা গ্রামে অশ্লীল যাত্রাপালা বন্ধ করা।
* সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
* নারী-শিশুর প্রতি পরিবার থেকেই একটা শ্রদ্ধবোধের জায়গা তৈরি করা।
সর্বোপরি সমাজের প্রতিটি সদস্যের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে হতে হবে কঠোর। ধর্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে বিচার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে। ভুক্তভোগীর প্রতি মানবিক হতে হবে! ধর্ষককে পরিবার ও সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বয়কট করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে মানবিক শিক্ষা তাহলেই আমরা একটি ধর্ষণমুক্ত ধরণী পাব।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: