ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মারিয়া আক্তার

ধর্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

ধর্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন

ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা আমাদের সমাজে বেড়েই চলেছে। যা নারীর ব্যক্তিগত জীবনকে করছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিভীষিকাময়। ধর্ষণের ব্যাধি সমাজে ভীষণভাবে সংক্রমিত। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এবং এ হিসাব একটি দেশের জন্য যেমনি কষ্টের তেমনি লজ্জারও। ধর্ষকের শাস্তির ব্যাপারে এত মিটিং মিছিল হওয়া সত্ত্বেও তাদের শাস্তির ব্যাপারটা থেকে যাচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ। আরও প্রশ্নবিদ্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী নারীর ঘরে, বাইরে, যানবাহনে নিরাপত্তার ব্যাপারটা। গণপরিবহনে ৯৪ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়। অনেকেই এ বিষয়টি এড়িয়ে চলে। কিন্তু এটি দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ধর্ষকের বিষাক্ত দৃষ্টি থেকে রেহাই পায় না ৪ বছর বয়সী শিশু, প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ মহিলারাও। বিশেষ করে শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে আপনালয়ে নিকটাত্মীয়ের কাছেই। প্রতিনিয়তই যার প্রমাণ মিলছে বিভিন্ন মিডিয়া এবং জার্নালে। বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী ধর্ষক নামক এই নরপিশাচরা ছড়িয়ে থাকে সমাজেরই বিভিন্ন আনাচে-কানাচে। হয়ত লোকসম্মুখে কিংবা মুখোশের আড়ালে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিনিয়তই ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, নারী নির্যাতন, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এর মধ্যে কারও কারও ক্ষেত্রের ঘটনা থেকে যাচ্ছে অপ্রকাশিতও। অনেক ধর্ষিতার পরিবার এবং ধর্ষিতারা পরিস্থিতি, লোকলজ্জার ভয়ে এসব ঘটনা গোপন করে রাখেন। যার ফলে একজন নির্যাতনকারী মানুষের সামনে দৃশ্যমান হয় না। ধর্ষণকারী মনে মনে আনন্দ উল্লাস করে এবং পরিকল্পনা নেয় এসব অপরাধ অব্যাহত রাখার। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে মিটমাট করে ফেলার ঘটনাও দেখা যায়। ধর্ষকের হুমকির মুখে অনেক পরিবার অর্থের বিনিময়ে কিংবা ধর্ষকের সঙ্গে কন্যাশিশুর বিয়ের মাধ্যমে ঘটনার ইতি টানতে চায়। আবার অনেক ধর্ষিতা নিশ্চুপে আত্মহননের পথ বেছে নেন। যা একটি নারী জীবনের চরম অবমাননার সামিল। মহিলা আইন সমিতির একটি জরিপে দেখা যায় ৯০ শতাংশ আসামিই নানাভাবে খালাস পেয়ে যায়। এসব মামলার ভেতরে যেগুলোর রায় হচ্ছে সেখানেও আছে দীর্ঘসূত্রতা। ধর্ষণ বাড়ার নেপথ্যেও রয়েছে আইনী দুর্বলতা। আইনের নানা ফন্দি-ফিকিরে আসামি ছাড় পেয়ে যাওয়ায় সামাজিক এসব অপরাধ দিন দিন বাড়ছেই। একজন ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং কঠোর সামাজিক প্রতিরোধই পারে ধর্ষণ নামক ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড রুখতে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাজের প্রতিটি মানুষকে হতে হবে সোচ্চার। এছাড়া সমাজ ও পরিবেরের কিছু শর্ত পালন করা উচিত বলে মনে করি। যেমনÑ (১) যেহেতু কন্যাশিশুরাও ধর্ষণের শিকার হয় সুতরাং পরিবারের কন্যাশিশুকে এ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব সচেতন করতে হবে। খারাপ ইঙ্গিত কিংবা অশোভনীয় আচরণ সম্পর্কে অবগত করতে হবে। (২) বয়োসন্ধিকালে আপনার কন্যাসন্তান কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত, বিষাদগ্রস্ত বা লুকিয়ে কাঁদছে কিনা সেদিকে খেয়াল করতে হবে। কারও কাছে হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছে কিনা সেটাও তার কাছ থেকে কথা বলে জানতে হবে। (৩) পরিবার থেকেই একটি মেয়েশিশু এবং ছেলেশিশু উভয়কেই নৈতিকতা শেখাতে হবে। আপনার সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে তা খেয়াল রাখতে হবে। নাারীর মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। (৪) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়েই শ্রেণীকক্ষে পাঠ্য বইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি এসব অসামাজিক অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। শিক্ষক এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যমে বোঝাতে পারেন। (৫) তরুণদের মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও পর্নোগ্রাফি দেখা হতে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসব স্বাভাবিক চিন্তাশক্তিকে বিনষ্ট করে এবং যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। একটি সমাজে ধর্ষকের অবস্থান যেমনই থাকুক, যত উচ্চপর্যায়েই থাকুক তার পরিচয় সে একজন ধর্ষক। সে উচ্চশিক্ষিত, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক মাধ্যমে যত ভাল অবস্থানেই থাকুক না কেন সে একজন নরপিশাচ। আর নরপিশাচের ঠাঁই সমাজে থাকতে পারে না। সমাজ থেকে তাকে বয়কট করতে হবে। ধর্ষকের বিরুদ্ধে গোটা সমাজকে হতে হবে জাগ্রত। করতে হবে সামাজিক আন্দোলন। ধর্ষককে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×