ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯ সালে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৭৮৫৫

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১১ জানুয়ারি ২০২০

২০১৯ সালে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৭৮৫৫

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ২০১৯ সালে সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের পরিসংখ্যান দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭,৮৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩০ জন। একই সময় রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮২টি। এতে নিহতের সংখ্যা ৪৬৯ জন ও আহতের সংখ্যা ৭০৬ জন। আর নৌপথে ২০৩ টি দুর্ঘটনায় ২১৯ জন নিহত, ২৮২ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় এখনো ৩৭৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, নৌ ও রেলপথে সব মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ২০১টি দুর্ঘটনায় ৮,৫৪৩ জন নিহত এবং ১৪,৩১৮ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ২০১৮ সালের প্রায় সমপরিমাণ। কিন্তু প্রাণহানী ৮.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৯৮৯ জন চালক, ৮৪৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮০৯ জন শিক্ষার্থী, ১১৫ জন শিক্ষক, ২১৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৯৪ জন নারী, ৫৪৩ জন শিশু, ৩৬ জন সাংবাদিক, ২৬ জন চিকিৎসক, ১৬ জন আইনজীবী ও প্রকৌশলী এবং ১৫৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন - ২৪ জন সেনা সদস্য, ৫৩ জন পুলিশ ও র্যা ব সদস্য, ৩ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ১ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৬ জন সাংবাদিক, ৫৮২ জন নারী, ৪৪৭ জন শিশু, ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ৬৯১ জন চালক, ৩৫৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯ জন প্রকৌশলী, ৫ জন আইনজীবি, ১১৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২৫ জন চিকিৎসক। ২০১৯ সালে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৭৩৫৬ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এর ১৮.৯৯ শতাংশ বাস, ২৯.৮১ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫.২২ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৯.৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২১.৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৮.০৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৬.৩৫ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ১৮.৩৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮.০৭ শতাংশ খাদে পড়ে, ৫.৯১ শতাংশ বিবিধ কারনে, ০.৩৪ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৯৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে মোটরসাইকেল দুঘর্টনার হার কমেছে জানিয়ে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হেলমেট বাধ্যতামূলক করা, তিন আরোহী পরিবহন নিষিদ্ধ করা, চলাচলে কঠোর নজরদারির কারণে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার হার ৪.২৬ শতাংশ কমেছে। এছাড়াও ২.৭১ শতাংশ কার- জীপ-মাইক্রোবাস, ০.২৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে। পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা ১৪.৮২ শতাংশ, বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা ১.৮৯ শতাংশ ও ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও দেশের সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন, ব্লাকস্পট নিরসন, রোড ডিভাইডার স্থাপন, সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রচারণার কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ১১.৩৬ শতাংশ কমেছে। এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৭.৫১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২১.৩ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.৪৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২.৩৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৯৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৫ জুনে। এদিনে ৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ১২১ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪ জুলাই। এদিন ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ৫ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এদিন ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। একইবছর সবচেয়ে বেশি আহতের সংখ্যা বেশি ১৫ আগষ্ট। এদিনে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ২২১ জন আহত হন। প্রতিবারের মতো এবারো সড়ক দুর্ঘটনার ১২টি কারণ চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। কারণগুলো হল - ১) বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালনা ২) বিপদজনক ওভারটেকিং ৩) রাস্তা-ঘাটের ক্রটি ৪) ফিটনেসবিহীন যানবাহন ৫) যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা ৬) চালকের অদক্ষতা ৭) চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার ৮) মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো ৯) রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা ১০) রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা ১১) ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ১২) ছোট যানবাহন বৃদ্ধি। এসব সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ, ট্রাফিক চিহ্ন ও জেব্রাক্রসিং অংকনসহ গণপরিবহন চালকদের ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করার সুপারিশ মালা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
×