ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যরাতে ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের কাছে রকেট হামলা

প্রকাশিত: ০১:১৩, ৯ জানুয়ারি ২০২০

মধ্যরাতে ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের কাছে রকেট হামলা

অনলাইন ডেস্ক ॥ ইরাকে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলার রেশ না কাটতেই বাগদাদের গ্রিন জোনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কাছে রকেট হামলা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাতে দুটি কাতিউশা রকেট গ্রিন জোনের অভ্যন্তরে আছড়ে পড়ে। তবে হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সিএনএনের খবরে বলা হয়, বাগদাদে অবস্থানরত সিএনএন দল গ্রিন জোনের ভেতর থেকে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছে। তবে কোথা থেকে রকেটগুলো চালানো হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। ইরাকি যৌথ সামরিক কমান্ড সিএনএনকে জানিয়েছে, দুটি কাতিউশা রকেট বাগদাদের গ্রিন জোনের অভ্যন্তরে এসে পড়েছিল। হতাহতের কোনো খবর নেই। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, যে দুটি রকেট বাগদাদের আন্তর্জাতিক এলাকায় পড়েছে, যেখানে ন্যাটো বাহিনী রয়েছে। বাগদাদের গ্রিন জোনের দক্ষিণ অংশে টাইগ্রিস নদীর পাশেই মার্কিন দূতাবাসের অবস্থান। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের বিবৃতির মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ হামলা চালানো হলো। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ট্রাম্প। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওসহ শীর্ষ জেনারেলদের নিয়ে বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর বোঝা যাচ্ছে যে, ইরান তার অবস্থান থেকে সরে আসছে। ইরানের হামলায় কোনো মার্কিন সৈন্য হতাহত হয়নি। ভাষণে তিনি যতদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকবেন ততদিন ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ হতে দেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, আমি যতদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকব ততদিন ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেব না। তিনি বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বাদ দেয় এবং সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে তাহলে শান্তি স্থাপনেও আমরা প্রস্তুত। যদি তারা শান্তির পথ বেছে না নেয় তাহলে দেশটির ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বুধবার ভোররাতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো সৈন্য মারা যায়নি, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খুবই সামান্য। তবে হামলার বদলা নেয়ার কোনো হুমকি দেননি ট্রাম্প। ইরান যে নতুন কোনো হামলা চালানোর সম্ভাবনা নাকচ করেছে তাকে ইতিবাচক বলে বর্ণনা করে তিনি বলেন, তারা যে ক্ষান্ত দিয়েছে সেটা সবার জন্যই মঙ্গল। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ইরান একটি মহান দেশ হতে পারে, সে যোগ্যতা তাদের রয়েছে। আমাদের সবার এখন উচিত ইরানের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তির চেষ্টা করা যাতে করে বিশ্ব নিরাপত্তা বাড়ে। এদিকে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের যে দাবি ইরাকের পার্লামেন্ট করেছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেলের কোনো প্রয়োজন আমেরিকার নেই। এদিন কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পক্ষে আবারও যুক্তি তুলে ধরেন তিনি। নিহত ইরানি জেনারেলকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার হাত হাজার হাজার ইরানি এবং আমেরিকানের রক্তে রঞ্জিত ছিল। এর আগে, হামলার পরপরই এর আগে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘সব ঠিক আছে, ইরাকে দুটি বিমানঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের তথ্য মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যা হয়েছে, ভালো হয়েছে! আমাদের রয়েছে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী। বিশ্বের নানান স্থানে তারা রয়েছে।’ সোলেইমানি হত্যার পর চরম সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল ট্রাম্প ইরানের ৫২টি সাংস্কৃতিক স্থাপনা তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বলে হুমকি দিয়েছিলেন। ইরান যদি প্রতিশোধের হামলা করে তাহলেই তাদের এসব গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্থাপনায় শক্তিশালী হামলা করা হবে বলে জানান তিনি। জেনারেল সোলেইমানি হত্যার পর প্রতিশোধের এই হামলা চালায় ইরান। তেহরান বলছে, সোলেইমানি হত্যার বদলা নিতেই এ হামলা। হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা কোনো যুদ্ধ চায় না। এছাড়া ফের মার্কিন হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে আইআরজিসি। ইরান বলছে, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল আসাদ এবং কুর্দিস্তানের ইরবিলের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এদিকে মার্কিন এক কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, হামলার পর তাদের কাছে যাওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কারও হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইরানের প্রায় দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করার কাজ চলছে। ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর এক যৌথ কমান্ড বিবৃতিতে জানিয়েছে, সব ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। ভোরের ওই হামলায় তাদের কোনো সৈন্য হতাহত হয়নি। হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় রাত পৌনে ২টায়। হামলা চলে রাত পৌনে ৩টা পর্যন্ত।
×