ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুনিয়া জুড়েই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে নিরামিষাশীদের সংখ্যা

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ৩ জানুয়ারি ২০২০

দুনিয়া জুড়েই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে নিরামিষাশীদের সংখ্যা

অনলাইন ডেস্ক ॥ গবেষণা বলছে, এই মূহুর্তে ব্রিটেনে লোকে নিরামিষ খাবারের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করে। আর ট্রেন্ড অনুযায়ী বড় সুপারমার্কেটগুলো নিরামিষ খাবারের সঙ্গে মানানসই খাবার বেশি বেশি রাখতে শুরু করেছে। কেবল যুক্তরাজ্য নয়, সারা দুনিয়া জুড়েই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে ভেগানিজম বা নিরামিষাশীদের সংখ্যা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই গত তিন বছরে ভেগানিজমের বিস্তার হয়েছে ৬০০ গুন বেশি। আর ভেগান সোসাইটির তথ্য মতে, গত এক দশকে যুক্তরাজ্যে ভেগানিজমের বিস্তার বেড়েছে ৪০০ গুন। বৈশ্বিক ভাবেও মাংস-বিহীন খাবারের চাহিদা ২০১৭ সাল নাগাদ এক হাজার গুণ বেড়েছে। 'ভেগান' বা 'নিরামিষাশী'দের সংখ্যা বাড়ছে : ভেগান বা নিরামিষাশীদের খাদ্য তালিকায় কোনো প্রকার প্রাণীর মাংস, মাছ, দুগ্ধজাতীয় খাবার কিংবা ডিম থাকে না। ২০১৮ সালে ভেগান সোসাইটির করা জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য এখন ছয় লাখের মত মানুষ ভেগান বা নিরামিষ খাদ্য তালিকা মেনে চলেন। অথচ ২০০৬ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় লাখের মত। আর এদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া ব্রিটেনের সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ নিজেকে 'নিরামিষ জীবনধারা'র মানুষ বলে বর্ণনা করেন, অর্থাৎ যারা পোশাক এবং প্রসাধন সামগ্রীর ক্ষেত্রেও অপ্রাণীজ উপাদান থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার করেন। সুপারমার্কেট চলছে এই চাহিদা অনুযায়ী : যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেট চেইনগুলো নিরামিষাশীদের জন্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জিনিসপত্র রাখে এখন। ২০১৮ সালে সুপারশপ ওয়েইটরোজ নিজেদের ১৩০টি দোকানে আলাদা ভেগান শাখা খোলে। একই সময়ে আইসল্যান্ডে উদ্ভিজ্জ খাবারের চাহিদা প্রতি বছর ১০ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে। সেই সঙ্গে কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস এবং গ্রেগস এর মত ফাস্টফুড কোম্পানিগুলো সারা পৃথিবীতে ভেগান ফুড চালু করতে বাধ্য হয়েছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিনটেলের হিসাব অনুযায়ী, ব্রিটেনের বাজারে বছরে ৭৫ কোটি পাউন্ডের বেশি মাংস-ছাড়া খাবার বিক্রি হয়, তিন বছর আগে যা ছিল ৫৫ কোটি পাউন্ডের কম। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ২০২১ সালে আগ পর্যন্ত এ চাহিদা কমার কোন লক্ষণ নেই। সোশ্যাল মিডিয়া তারকারা কি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন? উদ্ভিজ্জ খাবারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পেছনে সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা অসীম। আরিয়ানা গ্রান্ডে, মাইলি সাইরাস এবং এলেন ডি জেনেরাসের মত বড় তারকা কেউই প্রাণীজ উৎস থেকে আসা খাবার খান না। গত বছর কেবল ইন্সটাগ্রামেই এ সংক্রান্ত প্রায় নয় লাখের মত পোষ্ট দেয়া হয়। আর সামাজিক মাধ্যমে ভেগান সংক্রান্ত যেকোন কিছুই খুব আধুনিক। গুগল সার্চেও বিষয়টি ব্যাপক জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি যেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়, তার মধ্যে রয়েছে---ভেগান খাবার কী? এটা কতটা টেকসই এবং জলবায়ু পরিবর্তনে এর ভূমিকা কী? কেন নিরামিষাশী হবার আগ্রহ বাড়ছে? গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করে নারীরা নিরামিষ খাবারের দিকে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। এর পেছনে স্বাস্থ্য বিবেচনাই প্রধান ভূমিকা রেখেছে, এরপর রয়েছে পরিবেশ সচেতনতা। যুক্তরাজ্যে এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪৯ ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্য তালিকায় মাংস না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ গরুর মাংস ও প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস খেলে অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে বলে সাম্প্রতিক অনেক গবেষণাতেই তথ্য উঠে এসেছে। এবং সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণা বলছে, ভেগান হলে স্বাস্থ্যের কিছু উপকার সত্যিই হয় বটে। তবে ভেগান হলেই কেউ দীর্ঘ জীবন পাবে এখনো এমন তথ্য পরীক্ষিত নয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×