ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু পরিবতর্ন নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে আন্দোলন করছেন গ্রেটা থুনবার্গ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

জলবায়ু পরিবতর্ন নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে আন্দোলন করছেন গ্রেটা থুনবার্গ

অনলাইন ডেস্ক ॥ গ্রেটা থুনবার্গের পিতা বলেছেন, তিনি মনে করতেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সম্মুখ সাড়িতে দাঁড়িয়ে লড়াই করার ব্যাপারটা তার মেয়ের জন্য হবে একটি খারাপ সিদ্ধান্ত। পরিবেশের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিতে ১৬ বছরের এই কিশোরীর লড়াই দেখে লাখ লাখ মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছে। তবে তার পিতা, স্ভ্যান্টে থুনবার্গ বিবিসিকে বলেছেন, স্কুল বাদ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার মেয়ের আন্দোলন করাকে তিনি প্রথমে সমর্থন করতে পারছিলেন না মি. থুনবার্গ বলেছেন, গ্রেটা একজন অধিকার কর্মী হয়ে অনেক বেশি খুশী- কিন্তু এ কারণে সে যে বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি উদ্বেগ বোধ করেন। বিবিসির রেডিও ফোরের টুডে প্রোগ্রামের অংশে হিসাবে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে আলাপ করার সময় মন্তব্য করেছেন যে, গ্রেটা জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে বিশ্বকে জাগিয়ে তুলেছে। সুইডেনের স্টকহোমে নিজের বাড়ি থেকে স্যার ডেভিডের সঙ্গে স্কাইপে যোগ দেন গ্রেটা এবং বলেন কীভাবে স্যার ডেভিড তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ব্রিটিশ টিভি ব্রডকাস্টার এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলনকারী স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো গ্রেটাকে বলেন, ''তুমি এমন অনেক কিছু অর্জন করেছো, যা আমরা অনেকে গত বিশ বছর এ নিয়ে কাজ করেও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি।'' তিনি যোগ করেন, এই ১৬ বছরের কিশোরী হচ্ছে একমাত্র কারণ যে, যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ নির্বাচনে জলবায়ু পরিবর্তন একটি ইস্যু হয়ে উঠেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের একত্রে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে তার ভূমিকার কারণে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল গ্রেটা থুনবার্গ। তার সেই আন্দোলনের সময় এই দাবিতে বিশ্বজুড়ে সমন্বিত স্কুল ধর্মঘট করা হয়। এ বছরের রেডিও টুডে প্রোগ্রামে গেস্ট এডিটর হিসাবে আসা পাঁচ শীর্ষ ব্যক্তির একজন ছিল গ্রেটা থুনবার্গ। বিবিসির পক্ষ থেকে উপস্থাপক মিশাল হুসেইনকে সুইডেনে এই কিশোরী এবং তার পিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। বিমান চলাচলে কার্বন নিঃসরণ হয় বলে সেটা এড়াতে সুইডেন থেকে সেইলিং বোটে করে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিতে গিয়েছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ। তার সাক্ষাৎকার নিতে বিমানে করে সংবাদকর্মীদের পাঠানোর ব্যাপারে বিবিসির টুডে প্রোগ্রামের এডিটর সারাহ স্যান্ডস বলেছেন, ''আমাদের সামনে অন্য কোন পরিবহন ব্যবহার করার উপায় ছিল না। কিন্তু গ্রেটা আর ডেভিড অ্যাটেনবোরোর সাক্ষাৎকারটি স্কাইপের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে, যা তারা দুজনেই যোগাযোগের জন্য সঠিক পন্থা বলে মনে করেছেন।'' বিষণ্ণতার সঙ্গে লড়াই : অনুষ্ঠানের একটি অংশে বিবিসির সাংবাদিক মিশাল হুসেইনের সঙ্গে কথা বলার সময় মি. থুনবার্গ বলছেন, স্কুল ধর্মঘট শুরুর তিন চার বছর আগে তিন চার বছরের জন্য তার মেয়েকে বিষণ্ণতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। ''সে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল...স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল,'' তিনি বলছেন। তিনি আরো বলেন, যখন গ্রেটা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিতে শুরু করে, অভিভাবক হিসাবে সেটা ছিল তাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য মি. থুনবার্গ গ্রেটা এবং তার ছোট মেয়ে বেটার সঙ্গে সুইডেনের বাড়িতে বেশি করে সময় কাটাতে শুরু করেন। গ্রেটার মা, অপেরা শিল্পী মালেনা ইরম্যান একের পর এক কনসার্টের চুক্তি বাতিল করে দিতে শুরু করেন, যাতে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেন। চিকিৎসকের শরণাপন্নও হয়েছিল পরিবারটি, জানান মি. থুনবার্গ। বারো বছর বয়সে গ্রেটার অটিজমের একটি ধরণ- অ্যাসপারজার নামে একটি রোগ ধরা পড়ে। সেই সময় সে বলতো যে, সে এমন অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছে, যা অন্যরা দেখতে পায় না। পরের কয়েক বছর ধরে তারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করতে শুরু করে। তখন গ্রেটা ক্রমেই এই বিষয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত হয়ে উঠতে থাকে। মি. থুনবার্গ বলছেন, মানবাধিকার ইস্যুতে তারা বরাবর আন্দোলন করে আসায় গ্রেটা তার অভিভাবকদের বিরুদ্ধে 'বড় ধরণের প্রতারণার' অভিযোগ করেন। ''গ্রেটা বলতো: কার মানবাধিকারের জন্য তোমরা কথা বলো? যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলতাম না,'' তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন। তিনি বলছেন, তার অভিভাবকদের আরো বেশি পরিবেশ বান্ধব হয়ে ওঠার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গ্রেটা যেন আরো শক্তি সঞ্চয় করে। যেমন তার মা বিমানে করে চলাচল না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার পিতা নিরামিষভোজী হয়ে ওঠেন। নিউইয়র্ক এবং মাদ্রিদে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে পালের নৌকায় করে গ্রেটার যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলে তার পিতা মি. থুনবার্গও। পরিবেশের ক্ষতির কারণে বিমানে করে চলাচল করতে রাজি নয় গ্রেটা। মি. থুনবার্গ বলছেন, ''আমি যা কিছু করেছি, সেগুলো করেছি কারণ আমি জানতাম যে, আমি ঠিক কাজটি করছি...কিন্তু পরিবেশ রক্ষার কথা ভেবে সেগুলো করিনি, আমি করেছি আমার সন্তানকে রক্ষা করার জন্য।'' ''আমার দুইটি মেয়ে রয়েছে আর সত্যি কথা বলতে, তারাই আমার কাছে সবকিছু। আমি শুধুমাত্র তাদের সুখী দেখতে চাই।'' পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রেটা বদলে গেছে এবং সে খুব সুখী হয়ে উঠেছে বলে বলছেন মি. থুনবার্গ। ''আপনি মনে করতে পারেন যে, সে সাধারণ কেই নয় কারণ সে বিশেষ এক কিশোরী, সে বিখ্যাত ইত্যাদি। কিন্তু আমার কাছে সে সাধারণ এক সন্তান- অন্যরা যা করতে পারে, সে তাই করছে।'' ''সে চারদিকে নেচে বেড়ায়, সে অনেক হাসে, আমরা অনেক মজা করি- এবং সে খুব ভালো একটি জায়গায় আছে।'' তবে যখন গ্রেটার স্কুল ধর্মঘট অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়, তখন অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে অবমাননাকর আচরণ পেয়েছেন মি. থুনবার্গ, যারা পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবনধারার পরিবর্তন করতে চান না। গ্রেটা এর আগে বলেছিল যে, অনেক মানুষ তার 'চেহারা, পোশাক, আচরণ এবং ভিন্নতার' জন্য অবমাননাকর আচরণ করেছে। তার পিতা বলছেন, তিনি বিশেষভাবে 'মিথ্যা সংবাদ, তাকে নিয়ে বানানো বিদ্রূপমূলক বক্তব্য' নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা ঘৃণা বা বিদ্বেষ তৈরি করে। কিন্তু তিনি বলছেন, তার মেয়ে এসব সমালোচনাকে খুব ভালোভাবে সামলাতে পারছে। ''সত্যি কথা বলতে, আমি নিজেও ঠিক জানি না সে কীভাবে এটা করে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় সে হাসতে থাকে। সে এটাকে মজার একটি জিনিস হিসাবে দেখে।'' মি. থুনবার্গ বলছেন, তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে তার পরিবারের জন্য এসব জিনিস কম চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে এবং গ্রেটা আবার স্কুলে যেতে চাইবে। তিনি বলছেন, গ্রেটার খুব তাড়াতাড়ি ১৭ বছর বয়স হবে। তখন আর তার ভ্রমণের সময় কাউকে সঙ্গে যেতে হবে না। ''তখনো যদি সে আমাকে চায়, আমি তার সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবো।'' তিনি বলছেন। '' কিন্তু আমার ধারণা, সে হয়তো দিনে দিনে একাই সব কিছু করতে চাইবে, তা খুবই ভালো।'' সূত্র : বিবিসি বাংলা
×