ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের সিদ্দিকুরের ছায়া ভারতের মিনহাজে

প্রকাশিত: ০১:০৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের সিদ্দিকুরের ছায়া ভারতের মিনহাজে

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সিদ্দিকুর রহমানের মতো অবস্থা হয়েছে ভারতের শিক্ষার্থী মো. মিনহাজ উদ্দিনের। পুলিশের বেধড়ক লাঠি কেড়ে নিতে বসেছে তার বাঁ চোখের দৃষ্টি। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে চোখ হারান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৯ সালের এ মাসে ভারতে চোখ হারাতে বসেছেন দিল্লীতে অবস্থিত সরকারি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ওই শিক্ষার্থী। ভারতে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনে শুধু মিনহাজ নয়, পুলিশের লাঠিতে দুই হাঁটুই চুরমার কর্পোরেটে ভালো চাকরির হাত ধরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাওয়া শিক্ষার্থী শায়ন মুজিবের। আর আমলা হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ মো. মুস্তাফা ফের কবে কলম ধরতে পারবেন সন্দেহ। কারণ, মারের চোটে ‘গুঁড়ো’ দুই হাতের হাড়। বুধবার এসব ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক শিখা কপূর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনও পড়ুয়া চোখ খুইয়েছেন। কারও ভেঙেছে দুই পা কিংবা দুই হাতই। অনেকে মারাত্মক আহত। গত কয়েক দিনে তাদের রক্ত, কান্না দেখেছি। এই ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের কি তবে এটাই প্রাপ্য?’ মিনহাজের বন্ধুদের দাবি, এলএলএম পাঠ্যক্রমের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিনহাজ বরাবরই শান্তশিষ্ট। সেদিনও মিছিলের ত্রিসীমানায় ছিলেন না। পড়ছিলেন লাইব্রেরির দোতলার রিডিং রুমে। পুলিশ আসছে শুনেও নাকি প্রথমে না-পালিয়ে বন্ধুদের বলেছিলেন, ‘তাতে কী? আমরা তো এখানে পড়ছি!’ পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে পড়ার পরে পালাতে চেয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বাথরুমে। ততক্ষণে লাঠির ঘা পড়ে তার চোখে। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন সেখানেই। এখন বাঁ চোখে ব্যান্ডেজ। ভেঙেছে বাঁ হাতের দুই আঙুলও। রিপোর্ট দেখে এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আঘাতে কর্নিয়া মাঝ বরাবর ফেটে চৌচির। সামনের দিকে বেরিয়ে এসেছে চোখের স্বাভাবিক লেন্স। রক্ত জমাট বেঁধে আছে চোখের পেছনেও। প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কর্নিয়া মেরামতের চেষ্টা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে লেন্সও। কিন্তু এই চোখে কাজ করার মতো দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ।’ ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের পরে আরও বেশি করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে এ দিন সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল জামিয়ার শিক্ষক সংগঠন (জেটিএ)। সেখানে সোহিনী ঘোষ, সনিয়া গুপ্ত, মণীষা শেট্টি, সাইমা, আখতারের মতো অধ্যাপকরা বললেন, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, তার জন্য অবশ্যই কেন্দ্রের কাছে মোটা ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন তারা। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও লড়াই অব্যাহত থাকবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসির বিরুদ্ধে। কিন্তু এতগুলো তরতাজা ছেলে-মেয়ের চোখ, পা, হাত যারা কেড়ে নিল, আগে তাদের বিচার চাইছেন তারা। শিক্ষকদের দাবি, সে দিনের পর থেকে শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশ মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, অবসন্ন। সারাক্ষণ তাড়া করছে ভয়। মনের এই ক্ষত সরকার মেরামত করবে কীভাবে? সবার আগে সরকারের কাছে সেই কৈফিয়ত চান তারা। পুলিশের লাঠিতে মাথা ফেটেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র চন্দন কুমারের। বুধবার তার নামে এফআইআরও দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু তার প্রশ্ন, ‘হাতে প্রমাণ থাকলে, কেন আমাকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ?’ প্রশ্ন উঠছে, কেন এখনও পুলিশের নামে দায়ের করা এফআইআর কিংবা অভিযোগের কপি সামনে আনেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? সিসিটিভির ফুটেজ কেন দেখানো হয়নি সংবাদমাধ্যমকে? উপাচার্যই বা সমস্ত আহত শিক্ষার্থীকে এখনও দেখতে যাননি কেন? সূত্র : আনন্দবাজার
×