ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মায়ের ভালবাসা, ঘরের আদর

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মায়ের ভালবাসা, ঘরের আদর

মোরসালিন মিজান ॥ হাসপাতালের সাধারণত যে চেহারা আমরা দেখি, নিত্য যে ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ইপনা তার থেকে আলাদা। খুব ইতিবাচক অর্থেই আলাদা। ইপনা মানে, ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একমাত্র ইনস্টিটিউট। বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে পেটের ভেতরে হলেও, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গুণে এটি একরকম উদ্ভাসিত। বড় বিশ্ববিদ্যালয়। কতশত বিভাগ। কাজ কর্মের কোন শেষ নেই। ইপনার কিছু কার্যক্রম তবুও উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আন্তরিক সেবা, মানবিকতার বোধ, উন্নত চেতনা, সুরুচি এবং টিমওয়ার্ক দেখে অবাক হতে হয়। এখানে সারা বছর ধরেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, সেমিনার, ট্রেনিং। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের একটি স্কুল আছে এখানে। তাদের খেলারছলে হাসি আনন্দের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ইনস্টিটিউট বাচ্চাগুলোকে প্রতিবন্ধী মনে করে না। এক একটি ফুল ভাবতেই পছন্দ করে। ফুলের বাগানটি কিছু সময় ঘুরে দেখলে যে কেউ অভিভূত হবেন। জানা যায়, ১৯৯৯ সালের দিকে এ ইনস্টিটিউটটি ছিল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। পরে ২০১০ সালে সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড অটিজম, সংক্ষেপে সিনেক নামকরণ করা হয়। তখন এর মূলত আউটডোরটাই ছিল। ২০১৪ সালে প্রজেক্ট হিসেবে ইপনা চালু হয়। ২০১৮ সাল থেকে কাজ শুরু করে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট হিসেবে। বর্তমানে অটিজম ডিজঅর্ডার, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিন্ড্রম, এপিলেপসি ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। ইপনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামান্য বাইরে, এফ ব্লকে অবস্থিত। সপ্তম তলার নির্ধারিত ফ্লোরে নামতেই নতুন একটা ছবি। হাসপাতাল ব্যাপারটাই মাথায় থাকে না। সুন্দর সাজানো গোছানো প্রাঙ্গণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, এর সঙ্গে মিল রেখে দেয়ালে মহান নেতার একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। লিফট থেকে নামতেই চোখে পড়ে। এর ঠিক পাশ দিয়ে সামান্য হেঁটে যেতেই একটা রঙিন জগৎ। লম্বা দেয়ালকে ক্যানভাসের মতো করে এঁকে নেয়া হয়েছে। পুরোটাজুড়ে ক্যারিকেচার। সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলো দিয়ে জরুরী অনেক কথা বলিয়ে নেয়া হয়েছে। দেখে যে কারও মনে হতে পারে, ঠিকানা ভুল করে ফেলেছি! আসলে ভুল নয়। বিশেষ শিশু কিশোরদের জন্য পরিবেশটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই এমন সচেতন প্রয়াস। সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নেপথ্যের মানুষটির নাম অধ্যাপক শাহীন আখতার। তিনি এই ইনস্টিটিউটের প্রধান। পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, না, এমন নয়। আগলে রাখছেন। এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যস্ত শাহীন আখতারকে পাওয়া একটু মুশকিল। কখনও ক্লাসে। কখনও ওয়ার্ডে। সেমিনার গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এর পরও সম্প্রতি সুযোগ হয় তার সঙ্গে ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখার। পরির্দশনের ফাঁকে ফাঁকে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শুরুতেই শাহীন আখতার বলছিলেন, আমরা এত কিছু করছি, অবশ্য এতকিছু বলা ঠিক হবে না। যা-ই করছি, কেউ তো দেখতে আসে না। পরে যেন নিজেই নিজেকে সান্ত¡না দেন। বলেন, নিভৃতে কাজ করে যাওয়াই ভাল। কাজে মনোযোগ দেয়া যায়। কথা বলতে বলতে যেখানে থামেন তিনি, সেটি আউটডোর। পরিচালক বলেন, রোগীদের এন্ট্রি লেভেল থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখি আমরা। এটা এন্ট্রি লেভেল। এখানে নিউরো ডিজএ্যাবেলিটি আছে কিনা, পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেইসঙ্গে অটিজমের বিষয়টিও। আউটডোরের কাছাকাছি দূরত্বে ইনডোর। ৩০ বেডের ওয়ার্ড। প্রায় সবকটিতে রোগী। তবে পরিবেশটা ঘিঞ্জি নয়। অগোছালো নয়। এ ওয়ার্ডটি নিয়ে শাহীন আখতারের অন্যরকম গর্ব আছে বলে মনে হলো। তিনি বলছিলেন, প্যাডিয়াট্রিক নিউরোলজি নতুন সাবজেক্ট। কোন হাসপাতালেই ২৬ থেকে ২৮ টা বেড হবে না। ইপনা এটা সম্ভব করতে পেরেছে। প্যাডিয়াট্রিক নিউরোলজির যত কমপ্লিকেটেড রোগী, সব এখানে এসে ভর্তি হয়। আমরা ‘নিউরোলজি এ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি কোর্সও চালু করে দিয়েছি। সামনে ¯œায়ু রোগের ওপর ছয় মাসের একটি সার্টিফিকেট কোর্স করাব। সব মোটামুটি প্রস্তুত। এখান থেকে কোর্স করে ওরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারবে। তাহলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আরও যত বাচ্চা আছে, তাদেরও কষ্ট কিছুটা কমবে। এর আগে হাজার হাজার চিকিৎসক স্কুল শিক্ষক সরকারী কর্মকর্তাদের অটিজমের ওপর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পরে ওয়ার্ডে আগে থেকে অবস্থান করা নবীন চিকিৎসকদের ডেকে নেন তিনি। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। কথা বলার সময় মনেই হয় না, পরিচালক তিনি। যেন বন্ধুটি! এ পর্যায়ে চোখ যায়, ওয়ার্ডের রাস্তাসংলগ্ন কাঁচের দেয়ালে। সেখানে কোন পর্দা নেই। দেয়াল গলিয়ে রোদ আসছে ভেতরে। সেদিকে তাকিয়ে শাহীন আখতার মজার এক প্রসঙ্গ তুলেন। বললেন, পর্দা নিয়ে কিছুদিন আগে যে কেলেঙ্কারির খবর পত্রিকায় দেখেছি, এর পর তো আমরাও পর্দা কেনার সাহস হারিয়ে ফেলেছি! বলে দিয়েছি, ভাই, আমি নেই। পরে অবশ্য বাস্তবতাকে মেনে নেন তিনি। সঙ্গে থাকা একজন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নিউরোলজির বাচ্চাদের রোদে কষ্ট হয়, চলো একদিন পর্দা কিনে নিয়ে আসি। ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে সরু একটি করিডোর ধরে এগোবার সময় আবারও থামলেন তিনি। সহকর্মীদের একজনকে ডেকে বলেন, মেঝেতে দেখতো কী ময়লা জমে আছে। খারাপ লাগছে না দেখতে? পরে নিজেই বললেন, একটু পরিষ্কার করে রেখ। আর, মনে করিয়ে দিও তো, কয়েকটা গাছের টবও বসিয়ে দেব এখানে। এ ঘটনাগুলো, হ্যঁ, আমাদের মূল আলোচনার বাইরে। তবুও উল্লেখ করা। কারণ এই যে, ঘটনাগুলো থেকে ইনস্টিটিউটের প্রতি অধ্যাপক শাহীন আখতার ও তার সহকর্মীদের ভালবাসাটুকু অনুমান করা যায়। সবশেষে ঢুঁ মারা হয় ফুলের বাগানে, মানে, স্কুলটিতে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলো কী যে ভাল আছে এখানে! হঠাৎ দেখে মনেই হয় না, এরা কেউ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। এইটুকুন বয়স। শত জটিলতা। সব ভুলে শিশুরা যেন আপন ভুবনে হারিয়েছে। খেলাধুলা গান গল্প করছে তারা। ছবি আঁকছে। এসবের মধ্যেই ইপনা লুকিয়ে রেখেছে লেখাপড়াটা। বড় গোল টেবিলে বসে তারা যে যার কাজে মনোযোগী হয়েছে। একটি বড় টেবিলে অন্যান্য বাচ্চার সঙ্গে বসেছিল অবনি। ফুটফুটে একটা বাচ্চা! সাত আট বছর বয়স। নিজের মতো করে ছবি আঁকছিল সে। পাশে বসে থাকা শিক্ষক জানালেন, ছবি এঁকে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারও নিয়েছে অবনি। আরও কিছু কথা ওকে নিয়ে হতে পারত। কিন্তু তার আগেই এ প্রতিবেদকে ‘টাটা বাই বাই’ বলে দিল অবনি! অন্য দিকে তাকিয়েই বললো, ‘স্যার ভাইয়া চলে যাব।’ অবনির শিক্ষক পরে ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ও ছবি আঁকার কাজে এখন বেশি মনোযোগী। তাছাড়া নতুন কাউকে হঠাৎ করে নিতে পারে না। সম্পর্ক গড়তে হয় ওদের সঙ্গে। এবং লক্ষ্য করে দেখা গেল, শিক্ষকরা প্রায় প্রত্যেকেই ছেলে মেয়েগুলোর সঙ্গে দারুণ একটা সম্পর্ক গড়ে নিয়েছেন। এ সম্পর্কের জালে মনের আনন্দে ধরা দিয়েছে অরিশ। কিয়ান কামাল আহমেদ অরিশের বয়স দশের একটু বেশি হবে। এক সময় নাকি খুব জেদী ছিল। কোন কথা বলত না। ভাংচুর করত। তার দুই শিক্ষক জানালেন, এখানে আসার পর অনেক ইম্প্রুভ করেছে। কথা তো বলছেই। গানও জানে। এর পর আদর করে বলতেই সে গান ধরলÑ আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম...। গান শেষ করে নিজেই ‘ওয়াও’ বলে হাততালি দিল শিশুটি। শিক্ষকও পুরস্কার নিয়ে হাজির। একটা চিপসের প্যাকেট ক্ষুদে গায়কের হাতে তুলে দেন তারা। জানা গেল, প্রায় একইরকম জেদী আর অতিরিক্ত চঞ্চল ছিল শরিফা। সে বিভিন্ন রঙের পুঁথি আলাদা করে মালা গাঁথার কাজ করছিল। তরুণ শিক্ষক স¤্রাট জানান, এটি ভোকেশনাল ক্লাস। মালা তৈরির ছলে ওদের কালার সেন্স ঠিক করার কাজ হচ্ছে। রাইয়ান আব্দল্লাহকে আবার বেশ গরমাগরম মনে হলো। প্রতিবেদকে দেখে প্রায় তেড়ে আসে! কিন্তু শিক্ষক আদর করে বুঝিয়ে বলতেই সে বুঝল। শুধু বুঝল না, নিজের নাম বলল সে। এমনকি একটা স্যালুট ঠুকে দিল! কাছাকাছি নামের আরেক শিশু রাইয়ান শিকদার বেশ শান্ত। পাশে বসা বনিও চুপচাপ। এক পা টেবিলে তুলে দিয়ে আরাম করে পড়ছিল সে। শিক্ষক রিমা দাশ জানান, ও আগে হাইপার ছিল। এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কমিউনিকেশনটাও বেশ ভাল। আরেকটু ভাল করলে সাধারণ স্কুলে চলে যেতে পারবে। কোন কোন টেবিলে ভরপুর খেলনা। একজন শিক্ষক গোমর ফাঁস করে দিয়ে বললেন, এগুলো আসলে মিউজিক টয়। শুধু খেলা বা গান শোনা যাচ্ছে না, এর মাধ্যমে শিশুটির এ্যাটেনশন বাড়ানোর কাজ চলছে। আরেকটি খেলার মাধ্যমে চলছিল আই কন্টাক্ট বাড়ানোর চেষ্টা। সব দেখে শিশুগুলোর প্রতি যেমন মায়া বাড়ে, তেমনি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় ধৈর্যশীল শিক্ষকদের প্রতি। নিজের কক্ষে বসে ইনস্টিটিউটের পরিচালক বলছিলেন, আমরা অল্প বেতন নিই। কিন্তু চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকে না। এখান থেকে উন্নতি করে অনেকেই রেগুলার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হচ্ছে। ইপনার স্কুলটিতে মোট পঞ্চাশটি আসন। অনেককে আমরা সুয়োগ দিতে পারি না। যারা ভর্তির সুযোগ পায় না তাদের জন্য সপ্তাহে একদিন বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শাহীন আখতার বলছিলেন, স্কুলটি থাকায় আমাদের এখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে আসা শিক্ষার্থীরাও প্র্যাকটিকালি অনেক কিছু দেখতে পারছে। শিখতে পারছে। অবশ্য ইনস্টিটিউট হিসেবে ইপনা’র মূল সাফল্য গবেষণায়। এখানে অটিজম, নিউরো ডিজএ্যাবিলিটি এবং প্যাডিয়াট্রিক নিউরোলজির ওপর গুরুত্বপূর্ণ সব রিসার্চ হচ্ছে। শাহীন আখতার বলছিলেন, সরাসরি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে যেমন গবেষণা হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবেও। আমরা আর্লি অটিজম নিয়ে ৩০টা জেলায় গুরুত্বপূর্ণ সার্ভে করেছি। দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ইপনার সামর্থ এখন কম নয়। ইন্টারনেটের যুগে বিভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করছি আমরা। ইন্টারন্যাশনালী যারা ভাল কাজ করে তাদের সঙ্গে খুব ভাল যোগাযোগ আছে আমাদের। এখন আমরা কোন রোগীকে বলব না যে, দেশের বাইরে যাও। ইপনার আরেকটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগের নাম সেমিনার। জানা যায়, বিভিন্ন সময় এখানে আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। সর্বশেষ কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার করে ইপনা। ‘ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড নিউরোলজি’ বিষয়ে প্রবন্ধ পড়তে ভারত অস্ট্রেলিয়া বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৮ জন স্পীকার এসেছিলেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইপিলেপসির ওপর একইরকম সেমিনার আয়োজন করা হবে। জানা যায়, ইপনায় আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎক। সার্টিফাইড থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর আছে। সাইকোলজিস্ট আছে। আমরা কম টাকায় প্রপার ট্রিটমেন্ট দিতে পারছি। রোগীরা তো যেতে চায় না। কয়েকদিন আগে এক রোগীকে রেফার করেছিলাম। কান্নাকাটি শুরু করে দিল! এ পর্যায়ে প্রশ্নটি করতেই হয়, সিস্টেম লসের এই কালে এত কিছু অর্জন করা কী করে সম্ভব হলো? জবাবে তৃপ্তির হাসিটাই যেন হাসলেন তিনি। বললেন, আমাদের সবাই ইনস্টিটিউটটিকে খুব ভালবাসেন। টিম হিসেবে কাজ করি আমরা। উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি তো দেখিয়ে দিয়েছেন এইটুকু দেশে কত কী করা যায়, আমরা কেন পারব না? অবশ্য আগেই জানা হয়েছিল, ইপনার আরেকটি খুব বড় শক্তির নাম সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ সব সময়ই ইনস্টিটিউটটির সঙ্গে আছেন। শাহীন আখতার নিজ থেকেও সে কথা তুললেন। কৃতজ্ঞ চিত্তে বললেন, সায়মা ওয়াজেদ ২০০৯ সালে আমাদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি তখন একটা প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই থেকে আমাদের নতুন শুরু। আরও কত এগিয়ে যাওয়া। সব ক্ষেত্রেই তাঁর সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ এ পরিবারের সকলের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি। এসব কারণেই ইপনা এতদূর আসতে পেরেছে বলে জানান তিনি। ইপনার স্কুল শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিবাবকের সঙ্গেও কথা হলো। রাইয়ান শিকদারের বাবা রেজাউল করিম বলছিলেন, প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়ে যার ঘরে আছে সে ছাড়া আর কেউ এই কষ্ট বুঝবে না। আমি সারা দেশের সব ওঝা ফকির শেষ করে এখানে এসেছি। প্রথমে ক্লাসে আসতেই চাইত না। কান্না করতো। এখন সকালে ঘুম থেকে ওঠে তাড়াতাড়ি স্কুলে নিয়ে আসার জন্য কান্না শুরু করে। সব দেখে কথা শুনে বোঝতে আর বাকি থাকে না, মায়ের ভালবাসা আর ঘরের আদর-ই ইপনার মূল শক্তি। এই শক্তির জয় হোক। এগিয়ে যাক ইপনা।
×