ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে ফ্যান তৈরীর কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহত ১০ জনের লাশ হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

গাজীপুরে ফ্যান তৈরীর কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহত ১০ জনের লাশ হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে ফ্যান তৈরীর কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সোমবার বিকেলে নিহতদের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরআগে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসন ও কারখানার পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় একটি তিনতলা ভবনের ৩য় তলায় লাক্সারী ফ্যান কারখানার আর্মেচার সেকশনে রবিবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে ও আগুনে পুড়ে কারখানার ১০ শ্রমিক নিহত হন। এঘটনায় আহত হন আরো দুইজন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায় এবং হতাহতদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রাপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. প্রণয় ভুষণ দাস জানান, আগুনে পুড়ে নিহত হওয়া ১০ শ্রমিকের লাশ ময়না তদন্তের জন্য এ হাসপাতালের মর্গে রবিবার রাতে এনে রাখা হয়। সোমবার হাসপাতালের মর্গে এসে লাশগুলোর সনাক্ত করেন তাদের স্বজনরা। পুড়ে যাওয়া লাশগুলো কিছুটা বিকৃত হওয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুপুরে লাশগুলোর ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে কফিন বন্দি করে নিহত ১০জনের লাশ বিকেলে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ হস্তান্তর কালে গাজীপুরের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। নিহতরা হলো- গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নোয়াগাঁও এলাকার লাল মিয়ার ছেলে পারভেজ, ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানার রাঘবপুর এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম, দিনাজপুরের কাহারোল থানার বারপটিকা এলাকার হামিদ মিয়ার ছেলে মো. লিমন ইসলাম, গাজীপুর সদর উপজেলার কালনী গ্রামের সাইফুল ইসলাম খানের ছেলে মোহাম্মদ ফয়সাল খান ওরফে হৃদয়, একই উপজেলার কেশরিতা গ্রামের শ্রী বীরবল চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম, একই গ্রামের সাতানীপাড়া এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ, রংপুর মহানগরের হারাগাছ থানার কাচুবকুলতলা এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম, নরসিংদীর বেলাব থানার চরকাশিনগর এলাকার মাজু মিয়ার ছেলে সজল মিয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার মোর্শেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া। তিনি আরো জানান, ওই ঘটনায় সামান্য দগ্ধ দুইজন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের হাত, পা ও পিঠে সামান্য দগ্ধ হয়েছে। তারা হলো- গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও একই উপজেলার জামুনা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান (১৯)। জয়দেবপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান জানান, কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতদের দাফন কাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং কারখানার পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে কারখানার মালিক জাহিদ হাসান ঢালী জানান, এঘটনায় নিহত দাফন কাফনের জন্য তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে এবং আহতদের প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। কারখানার পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার খরচ বহন করা হবে। এ ছাড়াও নিহত প্রত্যেকের বেতনের সমপরিমাণ অর্থসহ সরকারী নিয়মানুযায়ী অন্যান্য সুবিধাদি তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে প্রতিমাসে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শ্রমমন্ত্রণালয় থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শাহীনুর ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার কমিটির সদস্যরা পুনঃরায় ঘটনাস্থলে যাবেন এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় একটি তিনতলা ভবনের ৩য় তলায় লাক্সারী ফ্যান কারখানার আর্মেচার সেকশনে রবিবার সন্ধ্যায় ১৯ শ্রমিক কাজ করছিল। সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে হঠাৎ বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রাপাত হয়। দরজার সামনে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শ্রমিকরা আতংকিত হয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এসময় কয়েক শ্রমিক বাইরে বেরিয়ে এলেও আগুন ও ধোঁয়ার কারণে অন্য শ্রমিকরা কারখানার ভিতরের একটি কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মুহুর্তেই আগুন পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। খবর পেয়ে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় দেড়ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কক্ষের ভিতরে আটকা পড়ে ১০ শ্রমিক নিহত হয়। লাশগুলো আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। কারখানায় অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জামাদি থাকলেও ঘটনার সময়ে শ্রমিকরা সেগুলো ব্যবহার করেনি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
×