ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশ্বস্বীকৃতি ॥ ৪৮ বছরে বিস্ময়কর অর্জন

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

  উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশ্বস্বীকৃতি ॥ ৪৮ বছরে বিস্ময়কর অর্জন

রহিম শেখ ॥ ভঙ্গুর এক অর্থনৈতিক দশা থেকে একাত্তরে যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশটির অর্থনীতি পরাস্ত হয় বিদেশী সাহায্য ও ঋণ নির্ভরতায়। পাকিস্তানীদের শোষণে রুগ্ন দেশকে বাঁচাতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সব। মুক্ত, কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বদেশে বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পথ চলা শুরু। দারিদ্র্যকে জয় করে দীর্ঘ ৪৮ বছরে সেই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান মতো, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রফতানি আয় রবিবার দিন শেষে ৩ হাজার ২শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। শুধু রফতানি কিংবা জিডিপ নয়, দেশের বাজেটের আকার, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ, রাজস্ব আয়, রেমিটেন্স আহরণ, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়ন, বিদ্যুত উৎপাদন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে সফলতা। বাংলাদেশের অর্থনীতির এমন অর্জনকে বিস্ময়কর বলেছেন পৃথিবী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের এ উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে এসেছে বিশ্বস্বীকৃতিও। জানা যায়, স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় চরম দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। আর স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বিদেশী রাষ্ট্রের শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বেশ পুষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানব সম্পদ উন্নয়নে বহু পথ এগিয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প কোন প্রকার বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশের গৌরবময় অর্জনের কথা শুনিয়ে যান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, যারা এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যায়িত করেছিল তারা আজ এ দেশকে ‘উন্নয়নের মডেল’ মনে করছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির এ অর্জনকে ‘রোল মডেল’ মনে করছে বিশ্বের বড় বড় দেশ। অনেক ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারী শিক্ষা, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার মতো বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নজর কেড়েছে বিশ্বসম্প্রদায়ের। মূলত ১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানী শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল বাঙালী জাতি। স্বাধীনতার চার দশক পর সে স্বপ্ন অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়েছে দেশ। আর এ স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে রফতানি খাত। যুদ্ধ পরবর্তী রফতানি খাত কাঁচা চামড়া ও পাটনির্ভর হলেও সময়ের আবর্তনে সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণসহ হাল্কা ও মাঝারি শিল্পের নানা পণ্য। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রফতানি আয় গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ছিল বিদেশী সহায়তানির্ভর। বর্তমানে উন্নয়ন বাজেট ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, মাাথাপিছু কম জমি নিয়ে আর কোন দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন ইতিহাস করেনি। তিনি বলেন, আমাদেরকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বেশি করে সংযুক্ত হতে হবে। যে শিল্প পণ্যগুলো বহুমুখী করে রফতানি করব, সেগুলোর কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমাদের আমদানি করতে হবে, এটাই এখন চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমাদের অর্জন অনেক। কিন্তু এই অর্জন আরও বেশি হতে পারত। নানা কারণে তা হয়নি। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বেড়েছে। পোশাক রফতানি করে এখন আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে। আমাদের কোম্পানিগুলোর নাম এখন বিশ্বের বড় বড় দেশে পৌঁছে গেছে। এসবই আমাদের অর্জন। সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেন, উন্নয়নের গতি দ্রুত করতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদের আহরণ বাড়াতে হবে। এ জন্য রাজস্ব আহরণের দিকে সরকারকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, সরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু সরকারের মানসম্পন্ন বিনিয়োগের দক্ষতা খুবই কম। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আমাদের অর্জন অনেক। দেশের রফতানি খাত বিশ্ব বাজারে এখন একটি উজ্জ্বল নাম। এছাড়া দেশের অর্থনীতিকে আরও অগ্রসর করতে সামনে সরকার বড় বড় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে দেশের ব্যবসায়ীরা অনেক পরিকল্পনা করছেন, যা দেশের অর্থনীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। এখন মানুষ আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। সরকারের নীতিগত সহায়তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পেলে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস ডাটাবেজ ও আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫৮তম অবস্থানে ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির আঙিনায় ২ ধাপ এগিয়ে ৪১তম স্থানে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপিতে) কৃষি খাতের অবদান ছিল ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আর শিল্পের অবদান ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সেবা খাতের ৩৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ, শিল্প ৩৪ দশমিক ৪ এবং সেবা খাতের ৫১ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৭০ সালে অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৪৫০ কোটি ডলার। বর্তমানে নমিনাল জিডিপির আকার ৩১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তবে ক্রয় ক্ষমতার বিবেচনায় তা ৮৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এছাড়া ওই সময়ে মাথাপিছু আয় ছিল ৬০ ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ১ হাজার ৯১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাট থেকে রফতানি আয় আসত ২৭ কোটি ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৬৫ শতাংশ ছিল। বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। আগে রাজস্ব আয়ের ৭০ শতাংশই আসত শিল্প উপকরণ আমদানি থেকে। বর্তমানে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর ও ভ্যাট) থেকে বেশি রাজস্ব আসছে। এছাড়াও অর্থনীতির অন্যতম শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে রেমিটেন্স। বর্তমানে দেশের ১ কোটি মানুষের বেশি বিভিন্ন দেশে থাকে। তারা বছরে দেড় হাজার কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। এর সুবিধাভোগী আগে ছিল গরিব মানুষ। রেমিটেন্সের কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। গ্রাম্য অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতেও কিছুটা সহায়তা করছে। রেমিটেন্স সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে অর্থনীতিতে বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে। এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য তৈরি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কাঠামো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকার। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন। কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদন। ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। জিডিপির আকারের তুলনায় কর আহরণের পরিমাণ বাড়ানো। বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে সেদিকে যাত্রা শুরু করেছে। আগামীতে এসব লক্ষ্য আরও বেশি মাত্রায় অর্জনের জন্য সরকার সেভাবে নীতি প্রণয়ন করছে। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বৃদ্ধি পেলে স্থায়ী কর্মসংস্থান বাড়ে। কিন্তু কৃষিতে কর্মসংস্থান বাড়ে অস্থায়ীভাবে। যদিও এখনও কৃষিতেই কর্মসংস্থানের হার বেশি। এরা বেশিরভাগই খণ্ডকালীন কর্মী। এদের স্থায়ী কাজের জোগান দিতে হলে শিল্প খাতকে চাঙ্গা করতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল ঋণাত্মক দিয়ে। ওই সময় দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাইনাস ১৩.৯৭ শতাংশ। এর পর থেকেই উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় প্রবৃদ্ধি। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮.১৫ শতাংশে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৭.৮৬ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭.৫০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৫০ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। আর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ছিল মাত্র ১২৯ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গত ৪৭ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকের দুটিতে উত্তীর্ণ হলে কোন দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এর যে কোন দুটি সূচকে জাতিসংঘের মানদ- ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হবে। মানব সম্পদ সূচকে পাঁচটি বিষয়ের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নেয় জাতিসংঘ। রিজার্ভ ১৯৭৩ সালে দেশের রিজার্ভ ছিল ১৭৩ মিলিয়ন ডলার বা ১৭ কোটি ৩ লাখ ডলার। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রিজার্ভ। গত অর্থবছর শেষে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে কিছুটা কমে এলে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবস্থান করছে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। বাজেট স্বাধীনতার পর থেকে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৯-১৯২০) দেশে জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে ৪৩২ গুণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়ে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। রেমিটেন্স আয় স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় ছিল ১৬.৩৫ মিলিয়ন বা এক কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত সাড়ে চার দশকে তা বেড়েছে কয়েক শ’ গুণ। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক দশকে রেমিটেন্স আয় প্রায় সাড়ে তিনগুণ বা ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ গত নবেম্বর মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত অর্থবছর শেষে দেশে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। বেসরকারী বিনিয়োগ সরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যাপক। সেই সঙ্গে বেড়েছে বেসরকারী বিনিয়োগও। গত এক দশকে বেসরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৪-৫ গুণ। চলতি বছরের ৯ মাসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) ৫০ হাজার ১১৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। রাজস্ব আয় স্বাধীনতার পর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৪২ কোটি টাকা। আর এখন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ করদাতার সংখ্যা ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে। রফতানি আয় স্বাধীনতার পর প্রথম অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ইপিবি রফতানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আমদানি ব্যয় দেশের বহুগুণ বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ২২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি। দারিদ্র্য নিরসন স্বাধীনতার পর যেখানে দেশের ৮৮ শতাংশ মানুষ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১৫ সালে নেমে এসেছে ২৪.৮ শতাংশে। ২০১৬ সালে এ হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৩.২ শতাংশ। সেই সঙ্গে ব্যাপকহারে কমেছে অতিদারিদ্র্যের হারও। হিসাব অনুযায়ী, অতিদারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৯ শতাংশে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪৬২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এখন আর এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৪৭ শতাংশে, এখন যা কমে সাড়ে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
×