ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ আগুন ॥ পুড়ে অঙ্গার ১০ লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:১০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

 গাজীপুরে ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ আগুন ॥ পুড়ে অঙ্গার  ১০ লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে ফ্যান তৈরির একটি কারখানায় রবিবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে ১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও দুইজন। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের কাছ থেকে মৃত পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলো- রংপুরের গাছ বকুলতলা এলাকার তাজেল হোসেনের ছেলে ফরিদ (২০), কুমিল্লার আমির হোসেনের ছেলে মিলন (২০), সুমাইয়া আক্তার জান্নাত (২৭), শ্রীপুর উপজেলার মারতা সাতানীপাড়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে রাশেদ (৩৫) ও একই এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম (৩৫)। আগুনে পুড়ে লাশ বিকৃত হওয়ায় মৃত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় একটি তিনতলা ভবনের ৩য় তলায় লাক্সারী ফ্যান কারখানার আর্মেচার সেকশনে রবিবার সন্ধ্যায় ১৯ শ্রমিক কাজ করছিল। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে হঠাৎ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রাপাত হয়। দরজার সামনে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দিগি¦দিক ছুটোছুটি শুরু করে। এ সময় কয়েক শ্রমিক বাইরে বেরিয়ে এলেও আগুন ও ধোঁয়ার কারণে অন্য শ্রমিকরা কারখানার ভেতরের একটি কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মুহূর্তেই আগুন পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। শ্রমিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। খবর পেয়ে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দেড়ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কক্ষের ভেতরে আটকা পড়ে ১০ শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। লাশগুলো আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ায় বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অগ্নিকান্ডের এ ঘটনায় হাসান ও আনোয়ার নামের দু’শ্রমিক আহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মৃতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার প্রণয়ভূষণ দাস জানান, সামান্য দগ্ধ দুইজনকে এ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের হাত, পা ও পিঠে সামান্য দগ্ধ হয়েছে। তারা হলো- গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও একই উপজেলার যামুনা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মোঃ হাসান (১৯)। এদিকে ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এসময় তিনি দাফন-কাফনের জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ারও ঘোষণা দেন। এছাড়াও শ্রমমন্ত্রণালয় থেকে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব। অপরদিকে কারখানার মালিক জাহিদ হাসান ঢালী তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারী নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়াও তাদের পরিবারকে আজীবন বেতনভাতা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, আগুনে তৈরি ফ্যান ও মেশিনপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এদিকে হতাহতদের খোঁজে তাদের স্বজনদের গভীর রাত পর্যন্ত কারখানা হাসপাতালের গেটে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
×