ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আধুনিক পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়তে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ১০:০৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

 আধুনিক পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়তে কাজ করছে সরকার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম একটি আধুনিক, পেশাদার এবং সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ আলোকে একটি আধুনিক, পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় এবং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)-২০১৯ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি কোর্স)-২০১৯ এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনার যে নীতিমালা করে যান তারই আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী এবং যুগোপযোগী করতে এবং সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা জরুরী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলার জন্যই আমরা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে সেনানিবাসও গড়ে তুলেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জন্য যখন যেটা প্রয়োজন সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন এবং সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ, আমরা একটা পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই।’ খবর বাসসর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রেও আমাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হচ্ছে। আবার শান্তিরক্ষী মিশনে গিয়ে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চলতে পারে, যুদ্ধ সরঞ্জামের সঙ্গে যেন তাদের পরিচিতি থাকে এবং তারা যেন যে কোন ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে কোন ধরনের দ্বিধাগ্রস্ত না হন সেজন্য প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিষয়ে আমরা সচেতন।’ যতদূর সম্ভব সীমিত সম্পদের মধ্যেও সরকার তার জোগান দিয়ে যাচ্ছে, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় এটা মনে করি প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মানুষের মাঝেই এ চিন্তাটা থাকা উচিত। দেশ মাতৃকার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারেই আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এখানে এসেছেন।’ এই দেশ আপনাদের এবং আমাদের সকলের- এই চিন্তা থেকেই এদেশকে আমরা আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাব, বলেন তিনি। তিনি এ সময় প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা অন্য দেশ থেকে এসেছেন তারা পরবর্তীতে নিজ নিজ দেশের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন। আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই হবেন আমাদের গুডউইল এ্যাম্বাসেডর। কারণ, আপনারা একটি বছর এখানে থেকে বাংলাদেশকে চিনেছেন, জেনেছেন, সকলের সঙ্গে মিশেছেন এবং আপনারা দেখেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে খুব আন্তরিক এবং বন্ধুসুলভ। কাজেই, আপনারা আমাদের শুভবার্তা নিয়ে যাবেন নিজ দেশে।’ তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা দেশ ও দেশের মানুষের কাজে লাগাবেন। সেটাই আমি কামনা করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘সিকিউরিটি থ্রু নলেজ’ অর্থাৎ ‘জ্ঞানেই নিরাপত্তা’- ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের এই মূলমন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে স্থিতিশীল, টেকসই উন্নয়ন, আত্মনির্ভরশীলতা এবং সর্বোপরি গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সরকার প্রধান বলেন, সবসময় একটা কথাই মনে রাখবেন- অনেক রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন। কোনক্রমেই আমরা একে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।’ তিনি কলেজের কমান্ড্যান্ট, সকল ফ্যাকাল্টি সদস্য, রিসোর্স পারসনস ও স্টাফ অফিসারদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল শেখ মামুন খালেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। প্রায় ৮৫ জন সশস্ত্র বাহিনী, জনপ্রশাসন এবং বিদেশী সামরিক কর্মকর্তারা ‘এনডিসি কোস-২০১৯’ এ এবং সশস্ত্র বাহিনীর ৩৮ কর্মকর্তা ‘এএফডব্লিউসি কোর্স-২০১৯’ অংশগ্রহণ করেন। ১৬ দেশের সামরিক কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। দেশগুলো হচ্ছে- চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজিরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, যুক্তরাজ্য, মালি এবং নাইজার। জাতীয় সংসদের স্পীকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিনবাহিনী প্রধানগণ, মুখ্য সচিব, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অধ্যাপকবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মিলিটারি এ্যাটাচিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমাদৃত এই ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ অত্যন্ত সীমিত পরিসরে তার সরকারের হাত ধরে এর যাত্রা শুরু করেছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৫ জন নিয়ে এর যাত্রা শুরু মাত্র দুই কোটি টাকা ব্যয়ে।’ তিনি বলেন, ‘সেটাও আমার অবশ্য চ্যালেঞ্জ ছিল যে, সবকিছু টাকার মাপে হয় না। শুরুটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। একবার শুরু করলে এটি একদিন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করবে এবং আজকে সেটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ স্ট্যাটেজিক স্তরে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অসামরিক পরিমন্ডলেও যথেষ্ট সমাদৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারী উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভূত অবদান রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, এনডিসি এবং এএফডব্লিউসি কোর্স ছাড়াও এনডিসি কর্তৃক পরিচালিত ‘ক্যাপস্টোন কোর্স’- এর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এমনকি দেশের সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, সম্পাদক, সাংবাদিক, অধ্যাপক, সংসদ সদস্যসহ সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশী নাগরিকবৃন্দ বর্তমানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশগ্রহণ করছেন। ফলে আন্তর্জাতিক পরিপ-লে একটি চমৎকার সংহতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে তার সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে এটা তো আমি করবই, কেননা এটা আমার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। কাজেই এর প্রতি আমার একটা আলাদা আন্তরিকতা রয়েছে।’ সশস্ত্র বাহিনীকে আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা দেশের দুর্যোগকালীন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এর ভূমিকার ভূয়সী প্রসংসা করেন এবং তা ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এদেশের জনগণের সেবা করাটা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। এই সাধারণ মানুষের অর্থেই তো আমাদের বেতন-ভাতা সবকিছু। কাজেই তাদের জীবনযাত্রাটা সুন্দর করাই আমাদের লক্ষ্য।’ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার সরকার একটি পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে দেশকে পরিচালিত করছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছি। আশু করণীয় কি- সেটাও আমরা ঠিক করেছি এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে কিভাবে গড়ে তুলব সে পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করেছি।’ ভাত-মাছ, শাক-সবজি, ফলমূল, তরিতরকারি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত করায় তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে এজন্য গবেষণায় অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং কৃষি উপকরণকে সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে কৃষকদের হাতে তুলে দেয়ায় কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচীর আলোকে তার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সফল কর্মসূচী যেমন গৃহহীনকে ঘর প্রদানে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’সহ দারিদ্র্যবিমোচনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যেতে সমর্থ হন। যেখান থেকে আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছি। যা আমাদের ধরে রাখতে হবে আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত। অবশ্য সেই ক্রাইটেরিয়া ইতোমধ্যেই অর্জিত হওয়ায় আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। ২০২১ সালে স্বাধীনতার জয়ন্তীতে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর এবং ২০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং আগামীর প্রজন্মকে সুন্দর জীবন দেয়ার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতায় শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগের ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দুঃখ ও দারিদ্র্য আমরা দেখেছি ভবিষ্যত প্রজন্মকে তা যেন আর দেখতে না হয় সেজন্য আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে রেখে যেতে চাই এবং উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এনডিসি ও ডিএসসিএসি এর পরিচালনা পর্ষদের যৌথ সভাতেও যোগদান করেন।
×