ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দেশী ব্যাটসম্যানরাই উজ্জ্বল

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

  বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দেশী ব্যাটসম্যানরাই উজ্জ্বল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) এমনটি খুব কম দেখা গেছে যে দেশী ব্যাটসম্যানরা সবাই ওপরে আছেন। সবসময়ই দেখা যেত, বিদেশী ব্যাটসম্যানরাই দাপট দেখাচ্ছেন। মাঝে দেশী ব্যাটসম্যানরা আছেন। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথমপর্ব শেষে দেখা যাচ্ছে ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ মিঠুন, তামিম ইকবাল, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরাই নিজেদের মেলে ধরেছেন। বিদেশী ব্যাটসম্যানরা চুপসে গেছেন। বঙ্গবন্ধু বিপিএল শুরু হয়েছে ১১ ডিসেম্বর। শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আটটি ম্যাচ হয়েছে। প্রথমপর্বের আট ম্যাচ শেষে মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হবে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লীগের দ্বিতীয়পর্ব চলছে। এর আগে ব্যাটসম্যানদের কি নৈপুণ্য তা দেখতে গিয়ে শুধু দেশী ব্যাটসম্যানের নজরকাড়া নৈপুণ্যই মিলছে। ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সবার ওপরে আছেন ইমরুল কায়েস। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে তিনি ৩ ম্যাচে ৫৮.৫০ গড়ে ১১৭ রান করে শীর্ষে আছেন। পরের স্থানটি দখল করে নিয়েছেন একই দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান চাডউইক ওয়ালটন। তিনিও একই গড়ে সমান রান করেছেন। পরের স্থানগুলোতে শুধু দেশী ব্যাটসম্যানরাই স্থান করে নিয়েছেন। তৃতীয় স্থানে যেমন সিলেট থান্ডারের মোহাম্মদ মিঠুন (৫৬.০০ গড়ে ১১২ রান), চতুর্থ স্থানে ঢাকা প্লাটুনের তামিম ইকবাল (৩৬.৬৬ গড়ে ১১০ রান) ও পঞ্চম স্থানে সিলেট থান্ডারের মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৫৪.৫০ গড়ে ১০৯ রান) আছেন। ঢাকা প্লাটুনের এনামুল হক বিজয়, রংপুর রেঞ্জার্সের নাঈম শেখ, রাজশাহী রয়্যালসের লিটন কুমার দাসও নজর কেড়েছেন। দেশী ব্যাটসম্যানরাই মূলত ম্যাচ জেতাচ্ছেন। এমন অবস্থায় দেশী ব্যাটসম্যানদের নিয়ে উচ্ছ্বাসও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল যে ব্যর্থতা থেকে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন, আবার ফর্মে ফিরেছেন; সেটিই বেশি আলোচনা হচ্ছে। তিনি ঢাকার হয়ে প্রথম ম্যাচটিতে ৫ রান করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৪ ও তৃতীয় ম্যাচে ৩১ রান করেছেন। টি২০ বিশ্বকাপের জন্য ব্যাটসম্যানদের ফর্মে থাকা জরুরী। বিপিএল দিয়েই টি২০ বিশ্বকাপের দল গোছানোও শুরু হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিপিএলে যারা বিশেষ আকর্ষণ কুড়াবেন তারা টি২০ দলে বিবেচনায় থাকবেন। এরপর আগামী অক্টোবরে বিশ্বকাপের আগে যে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচগুলো রয়েছে সেগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হবে ক্রিকেটারদের। তা থেকেই মূলত টি২০ বিশ্বকাপের জন্য দল ভালভাবে গুছিয়ে নেয়া হবে। এর আগে বিপিএলে দেশী ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্য আশা জাগাচ্ছে। সাকিব আল হাসান এক বছর নিষিদ্ধ থাকায় টি২০ দলের নেতৃত্বে থাকছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি আবার বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক। তিনি ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় কম বেশি সবাই টাচে আছে। এখন তো মাত্র ২-৩টা ম্যাচ হয়েছে। তামিম রান পেল। মুশি (মুশফিকুর রহিম) ফর্মে আছে। নাইম (শেখ) ভাল ব্যাটিং করল। দারুণ একটা ইনিংস খেলল। আমার মনে হয় আমরা ঠিক পথেই আছি।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও দেশী ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্য নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘স্থানীয়রা ভাল করছে। আমাদের মূল ফোকাস ছিল স্থানীয় খেলোয়াড়। বাইরের তারা তো রান করবেই। সেই সঙ্গে যেন স্থানীয়রাও করে। এবার দেখছি যে কয়টা খেলা হয়েছে নাঈম ভাল খেলেছে, তামিম ছন্দে ফিরেছে। লিটন দাস, সৌম্য এরাও কিন্তু ভাল খেলেছে। মিঠুন ভাল একটা ইনিংস খেলেছে। আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড় যারা আছে তারা ভাল করছে।’ দেশীয় ব্যাটসম্যানরা ভাল করছে। যা দলের জন্যই কাজে দেবে। তবে তামিম ইকবালের ছন্দে ফেরা নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে শুরুটা যে তাকেই করতে হয়। আর তিনিই যদি ছন্দে না থাকেন তাহলে দলে এর প্রভাব পড়বেই। তা পড়েছেও। কিন্তু কিভাবে স্বরূপে ফিরলেন তামিম? ঢাকার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘তামিমের আসলে কোন কিছু পরিবর্তন হয়নি, সে নিজেই পরিবর্তন হয়েছে। আর সবাই মনে করে যে আমরা ম্যাজিক জানি। এগুলো আসলে কিছু না। খেলোয়াড়রা নিজেই বুঝে তার কি করতে হবে। সে এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে, সে জানে তার আসলে কোন জায়গায় ভুল হচ্ছে। আমার মনে হয় তামিম যে সমস্যাটা আগে ফেস করেছে সেটা সে নিজে আমার চেয়ে ভাল বুঝে যে কি করতে হবে। আমাকে সে যে পয়েন্টে শেষ কথাটি বলেছে সেটা সে নিজেই বের করেছে, যে এই জায়গাটার কারণে হয়তো এমন হয়েছে। আমার মনে হয় সে নিজে জানে কি করতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তামিম অবচেতন মনে ভাবছে, আরে আমি তো বেশ কিছু দিন রান করিনি। আর তাই রান ক্ষুধা বেড়েছে। কিছু করার ইচ্ছে হয়েছে তীব্র। ৭৪ রানের ইনিংসটায় সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে অন্যসময় হয়তো যখন সে ভাল খেলতে পারত না, তখন একটা শট মারতে গিয়ে হঠাৎ আউট হয়ে যেত। সে যতক্ষণ মনে করেছে যে সে ছন্দে আসেনি, ততক্ষণ সে উইকেটে ছিল। প্রথম ১০ ওভারে আমাদের কিন্তু মাত্র ৪০ রান ছিল। সেটাই ১৫ ওভারে অনেকদূর চলে গেছে।’ সব ব্যাটসম্যানদের নিয়েও বার্তা দিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘আমি বলব যে, আমাদের দেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় সমস্যা যখন আমরা দেখি যে কিছুক্ষণ রান না করতে পারলে একটা বাজে শট খেলে আউট হয়ে যায়। এই সময় আসলে নিজেকে ব্যাক করা খুব জরুরী। নিজের দক্ষতার ওপর বিশ্বাস করা খুবই দরকার। উইকেটটা যেহেতু ভাল, আমার মনে হয় এখানে যে কেউ টিকে থাকলে রান করতে পারবে।’ দেশী ব্যাটসম্যানদের এই উজ্জ্বলতায় ধারাবাহিকতা থাকাই এখন প্রত্যাশা।
×