ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

আত্মসমর্পণ এবং বিজয়! -১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

 আত্মসমর্পণ এবং বিজয়! -১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এইদিন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত সারাদেশের মানুষ, একই সঙ্গে স্বজন হারানোর ব্যথা বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। ১৪ ডিসেম্বরে নিশ্চিত হয়ে যায় পাক যে, বাহিনীর মরণঘণ্টা বেজে গেছে। ঢাকা থেকে রাওয়াল পিন্ডিতে পাঠানো বার্তাগুলোয় ফুটে উঠছিল চরম হতাশার সুর। সকাল ১০টায় প্রেরিত এক বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা আশ্বাসের ওপর বেঁচে আছি। কিছু ঘটবে কী না অনুগ্রহ করে জানান, যা ঘটবার সেটা অতি দ্রুত হতে হবে।’ আরেক বার্তায় বলা হয়, ‘আমাদের কোন মিসাইল নেই, আমরা কিভাবে গোলা নিক্ষেপ করব? কোন বিমানবাহিনী নেই। বিমান হামলা হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তার কারণ।’ এই দিন পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার লে. জেনারেল নিয়াজির নির্দেশে পাকবাহিনী ভোর পাঁচটা থেকে যুদ্ধ-বিরতি শুরু করে। সকালে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলি ঢাকা সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে পৌঁছেন। সেখানে লে. জেনারেল নিয়াজীকে পাওয়া গেল না। বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেল জেনারেল রাও ফরমান আলীকে। রাও ফরমান জন কেলিকে বলেন, তারা আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এই খবরটি তাদের জানাতে পারছে না। এই সময় জন কেলি রাও ফরমান আলীকে জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। বিমান আক্রমণ বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছু আগে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের প্রতিনিধি জন কেলীর মাধ্যমে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরও ছ’ঘণ্টার জন্য বাড়িয়ে দিয়ে ভারতের একজন স্টাফ অফিসার পাঠানোর অনুরোধ জানান যাতে অস্ত্র সমর্পণের ব্যবস্থাদি স্থির করা সম্ভব হয়। প্রিয় আবদুল্লাহ (নিয়াজি), আমি এখন মিরপুর ব্রিজে। আপনার প্রতিনিধি পাঠান। সকালে ঢাকার পাক শিবির চমকে যায় এই চিরকুট পেয়ে। ভারতীয় মেজর জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগেরা নিয়াজিকে এই চিরকুট পাঠান। এই বার্তা পাঠানোর কিছু আগে মেজর জেনারেল নাগেরার বাহিনী কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীকে সঙ্গে করে মিরপুর ব্রিজে হাজির হন এবং সেখান থেকে নাগেরা নিয়াজীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। সকাল নয়টায় যৌথ বাহিনীর ডিভিশনাল কমান্ডার জেনারেল নাগেরার বার্তা নিয়ে মিরপুর ব্রিজের এপার থেকে ওপারে নিয়াজির হেড কোয়ার্টার অভিমুখে সাদা পতাকা উড়িয়ে জিপে করে রওনা হন ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর দুজন অফিসার। বার্তায় লেখা ছিল প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এসে পড়েছি। এখন আমার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। এ আমার উপদেশ। দুপুর একটা নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান যৌথ বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব। দুপুর একটার পর জেনারেল হেড কোয়ার্টারে বসে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক। এক পক্ষে নিয়াজি, ফরমান আলী ও জামশেদ। অপর পক্ষে জ্যাকব, নাগরা ও কাদের সিদ্দিকী। ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানী ইস্টার্ন কমান্ডের হেডকোয়ার্টারে মিত্রবাহিনীর মেজর জেনারেল জ্যাকব আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়াজির মধ্যে আত্মসমর্পণ চুক্তি নিয়ে যখন দর কষাকষি চলছে, তখন পাকিস্তানী বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল আলোচনার একটা বড় বিষয়। ঢাকায় তখন পাকিস্তানী সৈন্য আর নানা রকম আধাসামরিক বাহিনীর লোকজন মিলিয়ে ৯৪ হাজার সদস্য আটকা পড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব তাঁর স্যারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অব অ্যা নেশন বইয়ে লিখেছেন, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ না করে সেনানিবাসে তাঁর সদর দফতরেই আত্মসমর্পণের ব্যাপারে চাপাচাপি করছিলেন। সেটা যে কেবল জনসমক্ষে অবমাননা এড়ানোর জন্য, তা নয়। এর পেছনে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর চিন্তাও কাজ করেছিল। এই ভীতি যে খুব অমূলক ছিল, তাও নয়। কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) তার স্বাধীনতা ’৭১ বইয়ে লিখেছেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আর নিয়াজিকে বহনকারী গাড়ি যখন লাখ লাখ জনতার ভিড় ঠেলে রেসকোর্স ময়দানের দিকে এগোচ্ছিল, তখন একাধিকবার সেই বহরের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। ক্ষিপ্ত জনতা নিয়াজিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা বলছিল, ‘নিয়াজিকে আমাদের হাতে দাও। ও খুনী। ও আমাদের লাখ লাখ লোক মেরেছে, আমরা ওর বিচার করব।’ জ্যাকব লিখেছেন, আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনায় সাব্যস্ত হয়, ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হলেও নিয়াজি ও তার বাহিনী তখনই অস্ত্র সমর্পণ করবে না। জেনারেল জ্যাকব ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি দেন। ফলে পাকিস্তানী বাহিনী যুদ্ধবন্দী হলেও ঢাকা সেনানিবাসে তাদের অবস্থান ছিল সশস্ত্র। সিদ্ধান্ত হয় দলিলে স্বাক্ষর করবেন বিজয়ী বাহিনীর পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জয়েন্ট কমাডিং ইন চিফ লে.জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং বিজিত বাহিনীর পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ.এ. কে. নিয়াজি। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই জেনারেল অরোরা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিমান ও নৌবাহিনীর চিফ অব স্টাফসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। লে. জেনারেল নিয়াজি অভিবাদনসহ অভ্যর্থনা জানান যৌথ বাহিনীর কমান্ডারকে। আত্মসমর্পণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় বিকেল সাড়ে ৪টা। ঢাকাবাসী যখন এই আত্মসমর্পণের সময় জানতে পারল তখন তারা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। রেসকোর্স ময়দান লোকে লোকারণ্য। বিকেলে পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ.এ কে. নিয়াজি রেসকোর্স ময়দানে এলেন। সামরিক বিধি অনুসারে বিজয়ী ও বিজিত সৈনিকরা শেষবারের মতো জেনারেল নিয়াজিকে গার্ড অব অনার জানাল। বিকেল ৫টায় জেনারেল নিয়াজি ও যৌথ বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এগিয়ে গেলেন ময়দানে রাখা একটি টেবিলের দিকে। জেনারেল অরোরা বসলেন টেবিলের ডান দিকের চেয়ারে। বাম পাশে বসলেন জেনারেল নিয়াজি। দলিল আগে থেকেই তৈরি করা ছিল। জেনারেল অরোরা স্বাক্ষরের জন্য দলিল এগিয়ে দেন নিয়াজির দিকে। পাকবাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিলেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে। আর যৌথবাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চীফ এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন এই স্মরণীয় অনুষ্ঠানে। প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানী সেনা আত্মসমর্পণ করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণের ঘটনা। অভ্যুদয় হলো বাংলাদেশের। এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বাঙালী জাতি অর্জন করল তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। এই আত্মসমর্পণে পাকিস্তানের জমি, বায়ু এবং নৌ বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে সকল আধা সামরিক এবং বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত। এই বাহিনীগুলো সাধারণ সেনাদল যারা লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিত সিং আরোরার অধীনে আছে তাদের কাছে অস্ত্র এবং নিজেদের সমর্পণ করবে। পাকিস্তানের পূর্ব কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত সিং অরোরার কাছে যত শীঘ্র সম্ভব এসে কার্যসম্পাদনে স্বাক্ষর করবে। আদেশ অমান্যকারীদের আত্মসমর্পণ লঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য করে যুদ্ধের রীতি নীতি দ্বারা আইনত ব্যবস্থায় মোকাবিলা করা হবে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত সিং অরোরার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। এখানে আত্মসমর্পণের ধারাতে কোন ধরনের সন্দেহ জাগা উচিত নয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত সিং অরোরা কর্মীগণদের বিধিসম্মত আশ্বাস প্রদান করেছেন, যে আত্মসমর্পণ করবে তাদের মর্যাদা এবং সম্মানের সঙ্গে গণ্য করা হবে, যা জেনেভা কনভেনশনের বিধিমালায় সৈন্যদের জন্য অভিহিত করা হয়েছে এবং পাকিস্তানী সামরিক এবং আধাসামরিক বাহিনীর যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত সিং অরোরার আদেশে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বিদেশী নাগরিক, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং কর্মীবৃন্দকে রক্ষা করা হবে। বিকেলে ইন্দিরা গান্ধী সুইডেনের একটি টেলিভিশনের কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। এমন সময় জেনারেল স্যাম মানেকশ তাঁকে টেলিফোনে ঢাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরটি দেন। ইন্দিরা দ্রুত চলে যান লোকসভায়। অধিবেশনকক্ষে তখন উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা। এক লিখিত বিবৃতিতে ইন্দিরা বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত রাজধানী। পাক হাই কমান্ড যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল আগের দিনই। কিন্তু বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বড় এলাকা এবং বিচ্ছিন্নভাবে আরও কিছু পাক ও তাদের অনুগত মিলিশিয়া পজিশন তখনও আত্মসমর্পণ করেনি। যুদ্ধের শেষদিকে পাকিস্তানীদের যোগাযোগ ভেঙ্গে পড়ায় অনেক জায়গায় ওপর মহলের নির্দেশ পৌঁছায়নি। দ্বিতীয়ত অনেক পাক ঘাঁটি ধরে নিয়েছিল এটা হয়তো সাময়িক আত্মসমর্পণ। যুদ্ধের মোড় হয়তো আবার ঘুরবে। যুদ্ধে তারা পরাজিত-এটা অনেকেই মেনে নিতে পারছিল না। এরকম অনেক আত্মসমর্পণ না করা অবস্থানের মধ্যে একটা হলো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। ২৫ মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হবার পর এখানে কড়া পাহারা বসায় পাক বাহিনী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা সাজায় তারা। ছাদে বালির বস্তা দিয়ে বাংকারের মতো বানানো হয়। ভেতরে ভারি মেশিনগান। বাড়ির টেরাসেও বাঙ্কার খুঁড়ে তারা। গেটের পাশে বসে ভারি অস্ত্র। আশপাশেও কয়েকটা মেশিনগান স্থাপন করে। গৃহবন্ধী করা হয় মুজিব পরিবার। গৃহবন্ধী বলা হলেও বাস্তবিক অর্থে তারা ছিল জিম্মি। প্রতি মুহূর্তেই আতঙ্ক গ্রাস করে নিত এই পরিবারটিকে। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অবস্থান নেওয়া সেনাদের ওই এলাকার প্রতিরক্ষা ছেড়ে বাইরে যাবার সুযোগ ছিল না। ফলে বাইরের জগতে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে তারা ছিল একেবারেই অজ্ঞ। পালা করে কয়েকটা সেনাদল এলাকা টহল দিত কিন্তু কেউই বাইরে যেত না। অন্যান্য সেনাদের সঙ্গে তফাৎ ছিল এই যে, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনারা দ্রুতই বুঝে যায় তাদের দিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করা ছাড়া আর কিছুই করানো হচ্ছে না। অন্যদিকে ধানমন্ডিতে অবস্থান নেওয়া সেনা দলটি ছিল একেবারে বিচ্ছিন্ন। যার কারণে তারা তাদের আগ্রাসী মনোভাব ধরে রেখেছিল। ৩২ ধানমন্ডির সেনা দলের কমান্ডিং অফিসার ২-৩ দিন আগে লাপাত্তা হয়ে যায়। এদিকে বেতার যোগাযোগ না থাকায় তারা আত্মসমর্পণের নির্দেশও পায়নি। আতঙ্কের বিষয় ওই সেনাদলের কাছে মুজিব পরিবার বন্দী। আত্মসমর্পণের নির্দেশ না এলেও ১৬ তারিখ দুপুর থেকে ঢাকায় ঘন ঘন ভারতীয় বিমান আর মুক্তিবাহিনীর চলাফেরা দেখে তারা কিছু আঁচ করতে পারছিল। মুক্তিবাহিনী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ঘিরে ফেলে। কিন্তু সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছিল না। খুলনায় তখন আত্মসমর্পণ না করা পাকসেনাদের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ চলছে। আর এখানে ধানমন্ডির হিসাবটা একেবারেই অন্যরকম। অস্ত্র বা বীরত্বের চেয়ে ঠান্ডা মাথার দরকার এখানে অনেক বেশি। পাক সেনারাদের মেজাজ সামান্য বিগড়ে গেলেই বা সামান্যতম সন্দেহ পেলেই তারা হত্যা করতে পারে মুজিব পরিবারকে। এইদিন জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলার অজেয় ভাইবোনেরা... বিশ্বের কোথাও যদি কোনদিন মানুষের মুক্তি সংগ্রাম বিজয়ী হয়ে থাকে তবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামও বিজয়ী হবে।... বৃহৎ শক্তিবর্গ ও জাতিসংঘের কাছে আমাদের জোর দাবি এই যে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্ত করে তাঁর স্বপ্নরাজ্য বাংলাদেশে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হোক। (সমাপ্ত) লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×