ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধে হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধে হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রেল লাইনের অবৈধ লেভেল ক্রসিং ও বৈধ ক্রসিং চিহ্নিতের বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অবৈধ ক্রসিং বন্ধ, বৈধ ক্রসিং চিহ্নিত করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে রিটের বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন একলাছ উদ্দিন ভূইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে একলাছ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।এর আগে ২৪ নবেম্ব^র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দা শাহিন আরা লাইলী। রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেল সচিব, স্থানীয় সরকার ও সড়ক সচিব, রেলের মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে। ২৪ নবেম্বর একলাছ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, সারাদেশে একহাজার ৪১২ টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এআরআই-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ২৩৫ টি দুর্ঘটনায় ২৪৪ জন মানুষ মারা গেছে এবং ২২৮ জন আহত হয়েছে। ২০১৭ সালে ২১১ টি দুর্ঘটনায় ২২৯ জন মারা যায় এবং ১৫৫ জন আহত হয়। ২০১৬ সালে ৫৬ টি দুর্ঘটনায় ৫৯ জন মারা যায় এবং ৪৬ জন আহত হয়। তিনি বলেন, গতবছর আগস্টে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকাশিত ডাটাবেজ অনুযায়ী সারাদেশে ৯৪৬ টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলওয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে ফেঞ্চিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। কিন্তু এত দুর্ঘটনার পরও সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকাশিত আগস্ট ২০১৮ এর ডাটাবেজ অনুযায়ী, ১ হাজার ২৪২টির মধ্যে ৪৬৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান আছে এবং ৪৯৬টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে রেলওয়ে ইস্ট জোনে ৪৩৪টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ২৫৫টিতে গেটম্যান রয়েছে। বাকিগুলো অরক্ষিত অবস্থায় আছে। কিন্তু, বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন ১৮৯০ এর ১৩, ১৪ ও ১২৮ ধারায় রেলওয়ে নিরাপত্তা এবং ফেঞ্চের ব্যবস্থা গ্রহণের উল্লেখ আছে। প্রতিদিন বহু লোক নিহত ও আহত হওয়ার ফলে সুখময় রেলযাত্রা ব্যাহত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পতিত হচ্ছে। সরকারের রেলওয়ে ডিভিশন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরসহ ৯টি ডিপার্টমেন্টের বৈধ ও অবৈধ লেভেল ক্রসিং সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এত দুর্ঘটনার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এদিকে গত নয় মাসে ঢাকায় ট্রেনের নিচে পড়ে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে এসব দুর্ঘটনার জন্য জনসচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছে রেল কর্তৃপক্ষ। অবৈধ এই বাজার, রেল লাইনের পাশে অবৈধ বস্তি বসানোকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করলেও তা উচ্ছেদে ব্যর্থ হওয়ার জন্য লোকবলের অভাবকে কারণ দেখছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একটি সুত্র জানায় গত ৯ মাসে ট্রেনের নিচে পড়ে ২৩৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৯২ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী। তবে এর মধ্যে আত্মহত্যার কয়েকটি ঘটনাও রয়েছে বলে তিনি জানান। ট্রেনের নিচে পড়া ছাড়া কয়েকটি মৃত্যু ঘটেছে লেভেল ক্রসিংয়ে গাড়ির সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে। কারওয়ান বাজারে রেললাইনের উপর ও পাশে যেন বাজার না বসে সেজন্য উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছে কয়েকবার। তবে রেলের লোকবল কম থাকায় সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করা যায়নি। আর তার সুযোগ নিয়ে বারবার বাজার বসে যায়। মহানগরীতে তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, নাখালপাড়া ও বিমানবন্দর এলাকা সংলগ্ন রেলক্রসিংগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ।
×