ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইমারী থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার জন্যই এ পদক্ষেপ ॥ জানালেন প্রতিমন্ত্রী

‘ডিজিটাল লিডারশিপ’ তৈরির লক্ষ্যে ৪ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১১:২০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

‘ডিজিটাল লিডারশিপ’ তৈরির লক্ষ্যে ৪ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দক্ষ মানব সম্পদের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল লিডারশিপ’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এ লক্ষ্যে সরকার কানেক্টিভিটি, লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট, আইডিয়া ও ইনোভেশন নামে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের বাইরে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সমাপ্ত প্রকল্পগুলো থেকে মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তথ্যপ্রযুক্তি নতুন নতুন আবিষ্কার ঘটছে। আধুনিক প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, যুগের চাহিদা বিবেচনায় রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা দেয়া হবে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অভিযাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা অন্যতম নিয়ামক। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযুগী করে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরকার ’২১ সাল থেকে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক বিষয় বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রোথ সেন্টারে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স ও রেগুলেটরি ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব ও ভিএলএস ল্যাব স্থাপনসহ গ্রাম পর্যায়ে ই-কমার্সের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সারাদেশে অপটিকাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, উপজেলা পর্যায়ে অপটিকাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য এনজিএন টেলিকমিনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর গ্রামীণ ডাকঘর নির্মাণ, পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি, ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রানেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গবর্নমেন্ট, বেসিক আইসিটি, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিসিসি শক্তিশালীকরণ, লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লায়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স, সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক, এম্পাওয়ারিং রুরাল কমিউনিটি রিচিং দ্য আনচিড: ইউনিয়ন ইনফরমেশন এ্যান্ড সার্ভিসেস সেন্টার, যশোর সফট্্ওয়ার টেকনোলজি পার্ক, ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গবর্নমেন্ট প্রকল্পের কয়েকটি বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে সব প্রকল্পই বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি মনে করেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানায়, দেশের প্রতিটি মানুষের হাতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলে দেশের উন্নয়ন কেউ রোধ করতে পারবে না। উন্নত দেশের কাতারে যেতে বেশি সময়ও লাগবে না। ভিশন ’২১ সালের আগেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সামর্থ্য অর্জন করব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষকেও। সেই সামর্থ্য ইতোমধ্যে আমরা অর্জন করতে চলেছি। সমাজের শান্তি বিনষ্ট হতে পারে এমন কোন কিছু যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জ্ঞানভিত্তিক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য তৈরি করতে হবে দক্ষ মানব সম্পদ। দক্ষতাই এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে। আমরা যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাল কিছু করি। এর অপব্যবহার সমাজের চরম ক্ষতি করতে পারে। জনসাধারণকেও এদিকে নজর রাখতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও সমাজে মানুষের দায়িত্বও রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ডিজিটাল নেটিভ যারা ডিজিটাল ব্যবস্থার শুরু থেকেই পরিচিত, ডিজিটাল এডাপ্টার্স যারা নিজেদের এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। ডিজিটাল আউটলায়ার্স যারা এই ব্যবস্থার সঙ্গে এখনও যুক্ত হতে পারেনি। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ডিজিটাল লিডারশিপ ও ডিজিটালি সচেতন জাতি দরকার। এখন দেশে ডিজিটাল মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সম্পদ সারাদেশেই কাজ করে যাচ্ছে। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। অনেকে আবার ভাল চাকরিতে যোগদান করেছেন। শুধু শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন নয়, আমরা সারাদেশেই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির কাজ করে যাচ্ছি, যাতে এই খাতে দেশে সমান উন্নয়ন হয়। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ইনোভেশন বা উদ্ভাবনই হচ্ছে প্রতিটি জাতির মূল শক্তি। উদ্ভাবনী কাজে তরুণ এবং স্টার্টাপদের আমরা এগিয়ে নিতে চাই। আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় তরুণ উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা, প্রণোদনা, ম্যান্টোরিংসহ বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নের দিক তুলে ধরেন। দেশে এখন প্রায় ১৬ কোটি নাগরিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। সাড়ে ৯ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ’২১ সাল নাগাদ দেশের ৯০ শতাংশ জনগণকে ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে প্রায় তিন হাজার সরকারী সেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের আওতায় সরকার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ শহরেই রয়েছে ফোরজি সেবা।
×