ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

জঙ্গীবাদ মুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

জঙ্গীবাদ মুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিন¤্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করল কৃতজ্ঞ জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়া, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়, সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর, দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেছে দেশবাসী। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তানদের হারানোর বিষাদময় দিনে বেদনায় আচ্ছন্ন মন, শোকে মুহ্যমান হƒদয়। এমনই এক বেদনাবিধুর পরিবেশে জাতি স্মরণ করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ। এছাড়া বুদ্ধিজীবী দিবসের ঠিক একদিন আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলায় তারা তীব্র নিন্দা জানায় দৈনিক সংগ্রামের প্রতি। সেইসঙ্গে সংগ্রামের প্রকাশনা বন্ধের দাবিও ছিল তাদের কণ্ঠে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা অনেকে বলেন, নতুন প্রজš§ই পারে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সামনে এগিয়ে নিতে। তাই নতুন প্রজšে§র কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হলে সবার আগে সঠিক ইতিহাসের চর্চা করতে হবে। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা একাত্তরের প্রাণ হারানো সেই বীর সন্তানদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন শহীদসন্তান ও মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেন, আমাদের বৃদ্ধিজীবীরা যে বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন, তাদের পূর্ণ তালিকা আমরা করতে পারি নাই। আর সে সময়ের সাক্ষীরাও একে একে মরে যাচ্ছেন। তাই দ্রুত বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা জরুরী। পাশাপাশি এখনও ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের নিকৃষ্টতম হত্যাকা-ে জড়িত রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিচার শেষ করার মাধ্যমে বাঙালীর ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের দায়মোচনেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই সরকার বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন করবে। সেই সঙ্গে যেসব যুদ্ধাপরাধী এখনও বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে ওই সব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে। সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ শ্রদ্ধা জানান। এর আগে রাষ্ট্রপতি মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আরেক বার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ সময় সঙ্গে ছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ধানম-িতে যান এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণকালে সেখানে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের দাবি এসেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। শনিবার সকালে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর মহাসচিব হারুন হাবীব এই দাবি জানিয়ে বলেন, ‘গণহত্যার জাতীয় স্বীকৃতি এসেছে। এখন জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের দাবি জানাচ্ছি। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের দাবি রয়েছে বাংলাদেশের, কিন্তু সেই স্বীকৃতি আজও মেলেনি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে দৈনিক সংগ্রাম ‘শহীদ’ লিখে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, তা ক্ষমা করা যায় না বলে মন্তব্য করেন হারুন হাবীব। শ্রদ্ধা জানাতে আসা শহীদের সন্তানেরাও তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে দ্রুত স্বাধীনতাবিরোধী দৈনিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, মৌলবাদী একটি দলের পত্রিকা কাদের মোল্লাকে শহীদ বলে ঘোষণা করেছে। এই যে ঔদ্ধত্য বাংলাদেশে আইন আছে। আমরা যারা শহীদদের সন্তান, আমরা এ ঔদ্ধত্য সহ্য করতে পারি না। একটা বড় ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে স্পষ্ট হচ্ছে। ৪৮ বছরে যখন আমরা বিজয় উদযাপন করতে যাচ্ছি। কিন্তু সেইসব চিহ্নিত শত্রুরা, একাত্তরের ঘাতকরা আজও তৎপর। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। অন্যদেরও বিচার প্রক্রিয়া চলছে। তাইতো এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন যুদ্ধাপরাধীমুক্ত একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসা সব বয়সী শ্রেণী পেশার মানুষের কণ্ঠে ছিল এমনই সুর। শনিবার দিনভর আবালবৃদ্ধবনিতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষ জড়ো হয়েছিল মিরপুর আর রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে। তাদের হাতে ছিল ফুল, কণ্ঠে ছিল সব যুদ্ধাপরাধীসহ স্বাধীনতার শত্রুদের বিচারের রায় কার্যকরের দাবি। মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল মিরপুর ও রায়েরবাজার শহীদ বৃদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। শোকার্ত মানুষ মিরপুর এবং রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুলে ফুলে নিবেদন করেছেন তাদের প্রাণের অর্ঘ্য। এ দুটি স্থানে একটি বা দু’টি ব্যানার নয়, পাক হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর হায়েনাদের দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যার পর বধ্যভূমিতে ফেলে রাখার অসংখ্য নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ আলোকচিত্র শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারও বাঙালীকে শিহরিত করে তুলেছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত আল বদরনেতাসহ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার পথ আরও মসৃণ হওয়ার আশা বুকে ধারণ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সকালে কলো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন, শোক শোভাযাত্রা, শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। ভোরের প্রথম কিরণ থেকেই জেগে উঠে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিসৌধ। হাজারও মানুষের ঢলে স্মৃতিস্তম্ভের খোলা জানালাও যেন শ্রদ্ধা জানাচ্ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদি উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠন সারিবদ্ধভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া একে একে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। বুকের পাঁজরে থেকে যাওয়া দগদগে ক্ষত নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা শমী কায়সার। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সঠিক তালিকা করতে হবে। একইসঙ্গে রাজাকারদেরও সঠিক তালিকা করতে হবে। দৈনিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডাঃ নুজহাত চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীকে শহীদ বলা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। আমাদের বাবাদের হত্যাকারীরা যদি শহীদ হন, তাহলে আমাদের বাবাদের কী রাজাকার বলতে চান? যারা রাজাকারদের শহীদ বলে, তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকার কথা না। দৈনিক সংগ্রামের প্রকাশক ও সম্পাদককে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে বিচার করতে হবে। শহীদ পরিবার থেকে শুরু সাধারণ মানুষের এ ক্ষোভের রেশ ছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, দৈনিক সংগ্রাম আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলে ঘৃণ্য কাজ করেছে। একাত্তরে তারা যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল, তা অব্যাহত রেখেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে দৈনিক সংগ্রামে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। লাল-সবুজ সাজে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল আগামী প্রজš§ও। তবে দেশের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায় কতটুকুইবা জানে তারা? তাদের জানানোর দায়িত্ব আগের প্রজšে§র বলে মন্তব্য করে কবি রুবী রহমান বলেন, আমাদের দায়িত্ব নতুন প্রজš§কে সঠিক ইতিহাস জানানো। সেইসঙ্গে তাদের আগ্রহ থাকতে হবে। এছাড়া যাদের আমাদের মাঝ থেকে আমরা হারিয়েছি, তাদের নতুন প্রজšে§র মাঝেই আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে। শুধু মিরপুর বৃদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধেই নয়, ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতেও নেমেছিল শোকার্ত মানুষের ঢল। প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য সংগঠন জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মানুষের কণ্ঠে ছিল অভিন্ন দাবি-যারা স্বাধীনতাবিরোধী আমরা তাদের বিরুদ্ধে। এ জায়গায় কোন আপোস নেই। যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সহযোগী ও সন্তানদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করুন। যুদ্ধাপরাধীদের যে অপরাজনীতি তা নির্মূল করতে হবে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরেও স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে নানাভাবে মিথ্যাচার করছে। অন্যদিকে আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একজন কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লার নামের আগে শহীদ শব্দটি উল্লেখ করতেও তারা সংঘবদ্ধ। চিরতরে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও রাজাকারদের বংশধরদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদিকে বৃদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের উদ্বোধন করা হয়েছে। গ্রন্থাগারে ফিতা কেটে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার উদ্বোধন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। দিবসটি উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আকতারুজ্জামান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কুরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দেশের জন্য আত্মদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। ইউজিসি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। শনিবার সকালে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ইউজিসি মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তাদের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া কমিশন, ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও ইউজিসিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। এ সময় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, ইউজিসি অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী ইউনিয়ন এবং কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, প্রফেসর ড. মোঃ মশিউর রহমান, ট্রেজারার প্রফেসর মোঃ নোমান উর রশীদ, বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মহাঃ শফিকুল আলমসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ সকালে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর রাত ১২.০১ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন মোমবাতি প্রজ্বলন করে দিবসের কর্মসূচী শুরু করেন। রাত ১২.১০ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া সকাল ৭.৪৫ মিনিটে ভাইস-চ্যান্সেলর জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সকল কর্মসূচীতে অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করেন। বিডিইউ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। এ সময় ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) মোঃ আশরাফ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, সিনিয়র সিস্টেম এ্যানালিস্ট মুহাম্মদ শাহীনূল কবীরসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিএসএমএমইউ পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। জাতীয় এই দিবসে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় ও সকলে কালো ব্যাচ ধারণ করেন। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে এবং সকাল ৯টায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে এ শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীবৃন্দ পুষ্পস্তবক অপর্ণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া।
×