কাওসার রহমান, মাদ্রিদ (স্পেন) থেকে ॥ হতাশার এক দীর্ঘ রজনী পার করল মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন। বৃহস্পতিবার রাতভর আলোচনা করেও বড় ধরনের কোন সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি সফরকারী প্রতিনিধিরা। তবে এখনও হাল ছাড়তে নারাজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন থেকে ইতিবাচক ফল বের করে আনা সম্ভব। আর সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কেবল রাজনৈতিক হ্স্তক্ষেপই পারে শুক্রবার সম্মেলনের শেষরাতে মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন থেকে ইতিবাচক ফল বের করে নিয়ে আসতে। আর যদি সেটা না হয় তবে এবারের সম্মেলন লস এ্যন্ড ড্যামেজের সম্মেলন হিসেবেই পরিচিতি লাভ করতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ক্ষয় ও ক্ষতি মোকাবেলায় একমাত্র লস এ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষেত্রেই কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তবে লস এ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষেত্রে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজমকে কার্যকর করা এবং এই লস এ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উন্নত দেশগুলো অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। তবে এই প্রতিশ্রুতি শেষ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হয় কিনা তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের একজন নেগোসিয়েটর এবং পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, এবারের জলবায়ু সম্মেলনের মূল এজেন্ডা তিনটি। এগুলো হলো লস এ্যান্ড ড্যামেজ, অর্থায়ন ও আর্টিকেল ৬। এগুলো নিয়ে এখন শেষ মুহূর্তে আলোচনা চলছে। মন্ত্রীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই বিষয়গুলোতে সমঝোতায় পৌঁছার জন্য। তবে যেসব বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি তা আগামী জলবায়ু সম্মেলনে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘লস এ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষেত্রে এবারের সম্মেলনে বড় অর্জন হতে পারে। এটি এবারের সম্মেলনেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থায়নের ব্যাপারেও এবারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমরা চেয়েছিলাম উন্নত দেশগুলো দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলাম। তবে উন্নত দেশগুলো কোন ফিগার বলতে রাজি হয়নি। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলারের উল্লেখ না থাকলে এক্ষেত্রে বড় ধরনের ফল আসতে পারে।
আর্টিকেল ৬ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনে আর্টিকেল ৬ এর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হবে না। এটিকে আগামী জলবায়ু সম্মেলনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য ও পরিবেশ অধিদতরের পরিচালক মীর্জা শওকত আলী বলেন, আর্টিকেল ৬ এর প্রধান উদ্বেগ হলো মার্কেট ম্যাকানিজম ও নন-মার্কেট ম্যাকানিজম। আগে কার্বন কেনাবেচা থেকে ২ শতাংশ লেভি আসত এ্যাডাপটেশন ফান্ডে। আগে কার্বনের দাম ছিল ১৩ থেকে ১৫ ডলার প্রতিটন। এখন দাম কমে গেছে। ফলে আমরা এই লেভি বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ২ শতাংশই রাখতে চাচ্ছে। ফলে এখানে কোন অগ্রগতি হয়নি। তাই এটি আগামী জলবায়ু সম্মেলনে স্থানান্তরিত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদ্রিদে গত দুই সপ্তাহ ধরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় বিশ্ববাসীর জন্য আশাপ্রদ কোন প্রতিশ্রুতি আসেনি। মাদ্রিদের রাজপথে প্রায় ৫ লাখ লোকের বিক্ষোভ এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর চাপ সত্ত্বেও দর কষাকষির ক্ষেত্রে শব্দগত তেমন পরিবর্তন আসেনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়।
বিশ্লেষকরা মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনকে সফল করতে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলেই কেবল মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনের শেষ রজনী অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী সরকারী প্রতিনিধিদেরকে প্যারিস চুক্তির তিনটি দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে পরিষ্কার রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিতে হবে। জলবায়ু জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কার্বন নির্গমন কমাতে সহায়তা দিতে হবে। অর্থাৎ বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সকল দেশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কার্বন নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দ্বিতীয়টি হলো, ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজমের পর্যালোচনা শেষ করে সম্পূর্ণ কার্যকর করতে হবে। লস এ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন এবং অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এবং আর্টিকেল ৬ এর পরিবেশগত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্যারিস চুক্তিতে কার্যকর করতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: