ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে যাচ্ছে বসত ও কৃষি জমি;###;নদীর পারের মানুষের বারবার ঠিকানা পরিবর্তন;###;লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত;###;সবচেয়ে বেশি ভাঙছে যমুনা পারের সিরাজগঞ্জ

নদীগর্ভে ৫ হাজার হেক্টর ॥ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতি বছর ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

নদীগর্ভে ৫ হাজার হেক্টর ॥ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতি বছর ভাঙ্গন

শাহীন রহমান ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী ভাঙ্গনে প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বসত ও কৃষিজমি হারাচ্ছে দেশ। এর কবলে পড়ে নদীপারের মানুষকে বারবার ঠিকানা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সারা জীবনে মানুষের ২২বার ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়েছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গছে যমুনাপারের সিরাজগঞ্জ। এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্বাধীনতার পর যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাতে সিরাজগঞ্জ শহরের মতো কয়েকটি বড় বড় শহর নির্মাণ করা সম্ভব হতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের জনগণ যত ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে তার মধ্যে নদী ভাঙ্গন একটি। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে এই নদী ভাঙ্গনের ওপরও। দেশের প্রখ্যাত জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের বরফ গলছে দ্রুত। এই বরফগলা পানির বেশিরভাগ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সঙ্গে করে নিয়ে আসছে নবগঠিত পলিমাটি। এই পলিমাটি নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলছে। ফলে নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে বন্যায় পাড় উপচে পড়ছে। বাংলাদেশের নদীপার কাদামাটি দ্বারা গঠিত হওয়ায় উপচেপড়া পানি ধারণ করতে পারছে না। সহজেই পাড় ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আবার এই পাড় ভাঙ্গা মাটিতেও নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমছে। এই দুই প্রক্রিয়ার কারণে নদীভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়ে যাওয়া বিরাট ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, দেশের নদ-নদীগুলো দুটি উৎস থেকে পানি পায়। একটি হলো বৃষ্টির পানি। এর পরিমাণ হলো ৭ থেকে ৮ ভাগের মতো। বাকি ৯৩ ভাগ পানি আসছে হিমালয়ের বরফগলা থেকে। সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিন্দুকুশ এবং হিমালয়ের মহাপর্বতে বরফ গলে হাজার হাজার লেকের সৃষ্টি হয়েছে। বরফ দ্রুত গলছে। এবং এই বরফ গলার কারণে অতিরিক্ত পানির সবই দেশের নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা নদী ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন। ড. আতিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নদীভাঙ্গনের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও পরোক্ষভাবে নদী ভাঙ্গনের জন্য এই জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে গত শতাব্দীতে তাপমাত্রা ১.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়েছে। এই শতাব্দীতে তা ৩.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এই শতাব্দীতে জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব দেশের ওপর আরও প্রকট হবে। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর নদীর পাড় রক্ষায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাঁধাই করে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা সম্ভব নয় বিধায় ভাঙ্গনরোধ করা কঠিন। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে সম্প্রতি তা কিছুটা কমেছে। তারপরও প্রতিবছর কোথাও কোথাও তা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। গত বছর শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নদীভাঙ্গনে ২ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিলীন হয়েছে। যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ওই ভাঙ্গলে শুধু বসতভিটা নয়, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এমনকি ওই উপজেলায় নবনির্মিত ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দেশের নদীভাঙ্গন নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে গবেষণা ও পূর্বাভাস দিয়ে আসছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সরকারী সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে নদীভাঙ্গনের ওপর পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। সম্ভাব্য ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা উল্লেখ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানায়। নদীভাঙ্গনের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ফলে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস ব্যবহার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ বছরও এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটি থেকে আগেই এক বছরের নদীভাঙ্গনের পূর্বাভাস দেয়া হয়। আগাম এই পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, এক বছরের মধ্যে দেশের ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর বা ৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। প্রতিবছর তাদের এই পূর্বাভাসের সঙ্গে নদীভাঙ্গনের তথ্য প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। এই পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ বাড়িঘর হারাতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা অনুযায়ী প্রতিবছর মে মাস থেকে শুরু হয় নদীভাঙ্গন, চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ভূ-উপগ্রহের ছবি, ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকার মাটির ধরন পরীক্ষা ও মাঠপর্যায়ের গবেষণার ভিত্তিতে সিইজিআইএস নদীভাঙ্গনের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে সংস্থাটি এই পূর্বাভাস দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত পূর্বাভাসের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সঠিক হয়েছে। ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে তা রক্ষায় যাতে সরকার উদ্যোগ নেয়, সে লক্ষ্যেই পূর্বাভাসটি দেয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভারত, নেপালসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে নদীভাঙ্গনের পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির উপনির্বাহী পরিচালক মোমিনুল হক সরকার এর আগে এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে কোন একটি এলাকার মাটির গঠন নতুন হলে তা ভাঙ্গনের আশঙ্কা বেশি থাকে। মাটি শক্ত ও পরিণত হলে তা কম ভাঙ্গে। দ্বিতীয়ত, ভাঙ্গনরোধে অবকাঠামো তৈরি করলেও ভাঙ্গন কমে। এই দুটি কারণে আমাদের এখানে নদীভাঙ্গন কমে আসছে। ভাঙ্গন এলাকার স্থানীয়দের ক্ষতি কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। সিইজিআইএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৭শ’ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ১৭ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো দেশে নদীভাঙ্গন সমস্যা প্রতিবছর প্রকট আকার ধারণ করে। নদীপারের মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে নিঃস্ব করে দিচ্ছে এই ভাঙ্গন। সব কিছু হারিয়ে নানা ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছে পারে বসবাসকারীরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশজুড়ে থাকা কয়েক শ’ নদী-উপনদীতে ভাঙ্গন হলেও সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গনপ্রবণ যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদী। স্বাধীনতার পর থেকে নদী ভাঙ্গনে এ দেশের পৌনে দুই লাখ হেক্টরের মতো জমি বিলীন হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমেই সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙ্গনে লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। স্বাধীনতার পর এই এক নদীর ভাঙ্গনেই ৯০ হাজার হেক্টরের মতো জমি হারিয়ে গেছে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে প্রমত্ত পদ্মায় বাংলাদেশের ৬০ হাজার হেক্টর (২৫৬ বর্গমাইল)-এর বেশি জমি বিলীন হয়েছে। গবেষকরা জানান, পদ্মা-যমুনার মতোই ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হয়ে ওঠে মেঘনা। এ নদীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল, চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা। সিইজিআইএসের হিসাবে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেঘনার ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকা। স্বাধীনতার পর থেকে নদী ভাঙ্গনের তথ্য স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে নদীভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৭ হেক্টর এলাকা। এর বেশিরভাগই কৃষিজমি, বসতবাড়ি। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে সবচেয়ে ভাঙ্গনপ্রবণ বা বেশি ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে যমুনা নদী। এ সময়ের মধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে দেশের ৯০ হাজার ৩৬৭ হেক্টর এলাকা। যমুনার পরেই রয়েছে পদ্মা নদীর স্থান। স্বাধীনতার পর এ নদীর ভাঙ্গনের শিকারে পরিণত হয়েছে ৩৩ হাজার ২২৯ হেক্টর এলাকা। এছাড়া পদ্মা ও মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে যথাক্রমে ২৯ হাজার ৮৪১ হেক্টর ও ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর ভূমি। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন নদীরভাঙ্গনের ওপর এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নদী ভাঙ্গনরোধে অবকাঠামো প্রতিরোধ গড়ে তোলা বাংলাদেশের জন্য ব্যয়সাধ্য একটি বিষয়। এর চেয়ে নদীর ভাঙ্গন সম্পর্কে আগাম বা পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলে নদীভাঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, নদীভাঙ্গনের ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কারণে ২০০৪ সাল থেকে যমুনা ও পদ্মা নদীর ভাঙ্গনরোধে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ২৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে প্রধান নদীগুলো হলো যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা। এ চারটি নদীই সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, ধরলা, আত্রাই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, খোয়াই, সুরমা, মনু, জুরী, সাঙ্গু, ধলই, গোমতী, মাতামুহুরি, মধুমতি, সন্ধ্যা, বিশখালীও যথেষ্ট ভাঙ্গনপ্রবণ। দেশের এসব নদীর প্রায় ১৩০ স্থানে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যভাবে নদী ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটছে। যমুনা নদীর ভাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলা, কুষ্টিয়া, পদ্মায় শরীয়তপুর জেলা এবং নিম্ন প্রবাহিত মেঘনার শিকার হচ্ছে বরিশাল জেলা। প্রতিবছর যমুনা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে পদ্মা নদীও যথেষ্ট ভাঙ্গনপ্রবণ। প্রতিবছর এ নদীর করাল গ্রাসের শিকার হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, পাবনা ও রাজবাড়ী জেলা। পদ্মার ভাঙ্গনের সবচেয়ে বেশি শিকার কুষ্টিয়া জেলা। প্রতিবছর এ নদীভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর জেলা। বেশি ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে শরীয়তপুর জেলা। তবে অন্য তিন নদীর চেয়ে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনপ্রবণতা কিছু হলেও কম। সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকা। এ নদীর ভাঙ্গনের শিকার বরিশাল জেলা।
×