ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজে স্বস্তি ফিরলেও বাড়ছে চিনি তেল ডালের দাম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

পেঁয়াজে স্বস্তি ফিরলেও বাড়ছে চিনি তেল ডালের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এনে দিয়েছে আমদানিকৃত চীনা পেঁয়াজ। সাদা রংয়ের বড় সাইজের প্রতিকেজি চীনা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। যদিও পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকার মধ্যে নামিয়ে আনতে আজ শনিবার থেকে রাজধানীর বাজারে মনিটরিং জোরদার করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে নতুন ওঠা দেশী পেঁয়াজেরও। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। তবে, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করলেও বাড়ছে চিনি, ভোজ্যতেল ও ডালের দাম। দুদিনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ৪ টাকা দাম বেড়ে খুচরা বাজারে ৮৪-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি তুরস্কের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকায়। শাক-সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম চড়া। অবশ্য কমেছে ডিম ও আদার দাম। প্রতিকেজি আদা ১০০-১৬০ ও প্রতিহালি ডিম ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। চাল ও আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে ইফতারিতে ব্যবহৃত হয় এমন সব পণ্যের দাম কমাতে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানিনির্ভর পণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেল চিনি পেঁয়াজ ডাল ছোলা ও আটার দাম কমাতে অতিরিক্ত আমদানির জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হওয়ার আগেই চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে রমজানে অতিরিক্ত ৩ লাখ টন চিনি, ৩ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। বর্তমান পণ্য দুটির আমদানি ও মজুদ ভাল অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া এলসি খোলার সংখ্যাও সন্তোষজনক। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই এই দুটি পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের যন্ত্রণা দূর হতে না হতেই চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় ভোক্তারা নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছেন । রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সভা ডেকে বাণিজ্যমন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাধারণ ভোক্তাদের মতে, বাণিজ্যমন্ত্রী আগেই চীন, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিলে বাজারে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর গাফিলতি রয়েছে বলে দাবি ভোক্তাদের। এ প্রসঙ্গে খিলগাঁ সিটি কর্পোরেশন কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ এলো, তবে অনেক পরে। মুনাফা যাদের করার তারা ঠিকই দু’পয়সা কামিয়ে কেটে পড়েছে। অথচ সঙ্কট যখন তৈরি হলো তার আগেই আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলে পেঁয়াজের দাম বাড়ত না। তিনি বলেন, রমজান সামনে রেখে যাতে কোনমতেই ছোলা ডাল ভোজ্যতেল চিনি ও খেজুরের মতো পণ্যের দাম আর না বাড়ে সেজন্য এখনই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তার মতে, ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুদের সুযোগ নেই। তাদের মূলধনেরও অভাব রয়েছে। পাইকারি ও আমদানি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। এদিকে, আগামী রমজান সামনে রেখে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। অবশ্য ইতোধ্যেই বাজারে দেশী নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বেশি পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় এমন ১৫ জেলায় এখন নতুন পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে। এতে আগামী সপ্তাহনাগাদ পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে প্রতিকেজি নতুন দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৮০, চীনা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, মিসরীয় পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের শাকসবজির সরবরাহ ভাল, তবে দাম চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ সবজির দাম কমে আসবে। প্রতিদিনই সবজি সরবরাহ বাড়ছে। কাওরানবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোঃ জসিম বলেন, সারাদেশ থেকে সবজি আসা শুরু হয়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। তবে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে সবজি উৎপাদনকারী কৃষক। নতুন সবজিতে ভরে গেছে ক্ষেত। কাওরানবাজারে প্রতিদিন সবজির ট্রাক বাড়ছে। বাজারে চাল আটা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। জাত ও মানভেদে সরু চাল নাজিরশাইল-মিনিকেট ৫০-৬০, পাইজাম ও লতা ৪৬-৫২ মোটা, চায়না ইরি ও স্বর্ণা ৩৫-৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আটা ২৮-৩৫, মসুর ডাল জাত ও মানভেদে ৫৫-১২০, ছোলা ৭৫-৮০, রসুন ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজারে দেশী মাছের সরবরাহ বেড়েছে, তবে দাম কমেনি। পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিকেজি গরু ৫৩০-৫৫০ ও খাসি সাত শ’ থেকে আট শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
×