ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের মাসে উঠছে পদ্মা সেতুর আরও দুটি স্প্যান

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

 বিজয়ের মাসে উঠছে  পদ্মা সেতুর আরও  দুটি স্প্যান

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ ২০১৯ সালে পদ্মা সেতুর ১২টি স্প্যান বসেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সেতুতে উঠতে যাচ্ছে আরও দুটি স্প্যান। এর মধ্যে একটি উঠবে সেতুর মাওয়া প্রান্তে অপরটি জাজিরা প্রান্তে। ডিসেম্বরের ১৮ অথবা ১৯ তারিখে জাজিরা প্রান্তের ২১ ও ২২ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৪সি’ নম্বরের ১৯তম স্প্যান বসবে। আর ২৮ অথবা ২৯ ডিসেম্বর ‘৩এফ’ নম্বরের ২০তম স্প্যানটি বসবে মাওয়া প্রান্তের ১৮ ও ১৯ নম্বর খুঁটিতে। এর আগে ৩-ই নামের ১৮ নম্বর স্প্যানটি সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১৭ ও ১৮ নম্বর খুঁটির ওপর ডিসেম্বরের ১১ তারিখে বসানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরে সেতুর ৩টি স্প্যান বসানো হচ্ছে। এ নিয়ে এ বছরই সেতুতে ১৪টি স্প্যান বসতে যাচ্ছে। আর আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই শুধু ৪টি স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। এভাবেই এখন ঘন ঘন উঠবে স্প্যান। আর দৃশ্যমান হবে সেতু। প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, ২০১৭ সালে ১টি, ২০১৮ সালে ৫টি এবং ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ১২টি স্প্যান বসেছে। এ মাসেই আরও ২টি স্প্যান বসতে যাচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই ১৪টি স্প্যান বসনো হচ্ছে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির ওপর দ্বিতীয় স্প্যান, ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর তৃতীয় স্প্যান, ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর ৪র্থ স্প্যান বসানো হয়। আর ২৯ জুন জাজিরা প্রান্তের ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর ৫ম স্প্যানটি বসানোর পর জাজিরা প্রান্তে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে মূল সেতুর ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে অবকাঠামো। এরপর ১২ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর নতুন আরও একটি স্প্যান বসানোর পর দু’প্রান্ত মিলিয়ে মূল অবকাঠামো দৃশ্য হয়ে উঠেছে ৯০০ মিটার। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় পদ্মা সেতুর ‘৬এফ’ নম্বরের সপ্তম স্প্যান। ২০ ফেব্রুয়ারি একই প্রান্তে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৬-ই’ নম্বর ৮ম স্প্যান, ২২ মার্চ জাজিরা প্রান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৬-ডি’ নম্বর ৯ম স্প্যান বসানো হয়। ১০ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ‘৩-এ’ নম্বর ১০ম স্প্যান, ২০ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৬-সি’ নম্বর ১১ তম স্প্যান, ৬ মে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর খুঁটির ওপর ১২তম স্প্যান, ২৫ মে মাওয়া প্রান্তের ১৪ ও ১৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ১৩ তম স্প্যান, ১৪ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তের ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির ওপর ১৪ তম স্প্যান, ২২ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তের ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির ওপর ১৫ তম স্প্যান, এ স্প্যান বসানোর ২৮ দিনের মাথায় মাওয়া প্রান্তের ১৬ ও ১৭ নম্বর খুঁটির ওপর ১৬ তম স্প্যান, ২৬ নবেম্বর জাজিরা প্রান্তের ২২ ও ২৩ নম্বর খুুঁটির ওপর ‘৪ডি’ নম্বর ১৭ তম স্প্যান এবং সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর জাজিরা প্রান্তের ১৭ ও ১৮ নম্বর খুঁটির ওপর পদ্মা সেতুর ১৮তম স্প্যান বসানো হয়। প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন করীর জানান, পদ্মা সেতুর খুঁটির ওপর পর্যায়ক্রমে বসানো হচ্ছে একের পর এক স্প্যান। এ পর্যন্ত ৩৩টি স্প্যান মাওয়ায় পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ১৮টি স্প্যান খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়ে গেছে। আর ৫টি স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ও ১০টি স্প্যান পদ্মার চর এলাকায় অস্থায়ী স্টক ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে খুঁটির ওপর স্থাপনের অপেক্ষায়। আরও চারটি স্প্যান চীন থেকে মাদার ভার্সেলে সমুদ্রপথে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া সেতুর ৪২ খুঁটির মধ্যে ৩৫টি সম্পন্ন হয়েছে। গত বুধবার সর্বশেষ ৬ নম্বর খুঁটির কাজ শেষ হয়েছে। ৩০ নম্বর খুঁটির কাজ আগামী সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া সেতুর ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজও এগুচ্ছে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ৪২ খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসবে। বসে যাওয়া স্প্যানে রেলওয়ে এবং রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজও হরদম চলছে। এ পর্যন্ত রেলওয়ে সø্যাব বসে গেছে ৪১০টি। আর রোডওয়ে সø্যাব বসেছে ১৯৭টি। মূল সেতুর দুপ্রান্তে আরও প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতুর কাজও বেশ এগিয়ে গেছে। তাই বলা যায়, পদ্মা সেতুর কাজ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২১ সালের জুন মাসেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে ঘোষণা দিয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্টীল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। দ্বিতল এ সেতুর উপরিভাগ দিয়ে চলবে গাড়ি আর নিচ দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন।
×