ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা পেঁয়াজ স্বস্তি এনে দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

চীনা পেঁয়াজ স্বস্তি এনে দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানিকৃত চীনা পেঁয়াজ স্বস্তি এনে দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সাদা রংয়ের বড় সাইজের প্রতিকেজি চীনা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। যদিও পাইকারি বাজারে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকার মধ্যে নিয়ে নামিয়ে আনতে আজ শনিবার থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে মনিটরিং জোরদার করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে নতুন উঠা দেশী পেঁয়াজের। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এদিকে, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করলেও বাড়ছে চিনি, ভোজ্যতেল ও ডালের দাম। দুদিনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। প্রতিলিটার খোলা সয়াবিনে ৪ টাকা দাম বেড়ে ৮৪-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি তুরস্কের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকায়। শাক-সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম চড়া। কমেছে ডিম ও আদার দাম। প্রতিকেজি আদা ১০০-১৬০ এবং প্রতিহালী ডিম ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। চাল ও আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। জানা গেছে, আগামী রমজান মাস সামনে রেখে ইফতারিতে ব্যবহার এমন সব পণ্যের দাম কমাতে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি নির্ভর পণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, ছোলা ও আটার দাম কমাতে অতিরিক্ত আমদানির জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হওয়ার আগেই চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বছরের অন্যযেকোন সময়ের চেয়ে রমজানে অতিরিক্ত ৩ লাখ টন চিনি ৩ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। বর্তমান এই দুটি পণ্যের আমদানি ও মজুদ ভাল অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া এলসি খোলার পরিমাণ ও সন্তোষজনক। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই এই দুটি পণ্যের দাম এখন বেড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের যন্ত্রণা দূর না হতে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণে ভোক্তারা আবার নতুন অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সভা ডেকে বাণিজ্যমন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ ভোক্তাদের মতে, বাণিজ্যমন্ত্রী আগে থেকে চীন, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিলে বাজারে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর গাফিলতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে খিলগাঁ সিটি কর্পোরেশন কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ আসলো, তবে অনেক পরে। যারা মুনাফা করার তারা ঠিকই পয়সা কামিয়ে সরে পড়েছেন। অথচ সঙ্কট যখন তৈরি হলো তার আগেই আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলে পেঁয়াজের দাম বাড়ত না। তিনি বলেন, রমজান মাস সামনে রেখে যাতে কোনভাবেই ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের মতো পণ্যের দাম বাড়তে না পারে সেজন্য এখনই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তারমতে, ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুদ করার কোন সুযোগ নেই। তাদের সেই মূলধনের অভাব রয়েছে। পাইকারি ও আমদানি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। এদিকে, আগামী রমজান মাস সামনে রেখে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। তবে বাজারে দেশী নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এমন ১৫টি জেলায় এখন নতুন পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে। এতে আগামী সপ্তাহনাগাদ পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে। ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে প্রতিকেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিসরীয় পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ভোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজির সরবরাহ বেড়েছে, তবে দাম চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ সবজির দাম কমে আসবে। প্রতিদিনই সবজির সরবরাহ বাড়ছে। কাওরান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, সারাদেশ থেকে সবজি আসা শুরু হয়েছেল। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে সবজি উৎপাদন কম হয়েছে। তবে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সবজি উৎপাদনকারী কৃষক। সবজিখেত নতুন সবজিতে ভরে উঠছে। কাওরান বাজারে প্রতিদিন সবজি ট্রাক আসার পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া বাজারে চাল, আটা বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। জাত ও মানভেদে সরু চাল নাজিরশাইল-মিনিকেট ৫০-৬০, পাইজাম ও লতা ৪৬-৫২ এবং মোটা চায়না ইরি ও স্বর্ণা ৩৫-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আটা ২৮-৩৫, মসুর ডাল জাত ও মানভেদে ৫৫-১২০, ছোলা ৭৫-৮০, রসুন ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজারে দেশী মাছের সরবরাহ বেড়েছে তবে দাম কমেনি। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিকেজি গরু ৫৩০-৫৫০ এবং খাসি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
×