ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জাপুরে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মির্জাপুরে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর ॥ মির্জাপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এবং স্থানীয় প্রশাসন নানা কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল মুক্তির মঞ্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোম প্রদীপ প্রজ্জলন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত মুক্তির মঞ্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. একাব্বর হোসেন ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মালেক, সাবেক মেয়র মোশারফ হোসেন মনি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক দুই কমান্ডার সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলক, অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সন্ধায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে মুক্তির মঞ্চের সামনে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত এক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার ১৩ ডিসেম্বর ছিল মির্জাপুর মুক্ত দিবস। ৭১’র এই দিনটিতে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুর হানাদার মুক্ত করে। ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনে মির্জাপুরের মুক্তিকামী যুব সমাজ সংঘটিত হতে শুরু করে। মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শরীরচর্চা শিক্ষক নিরঞ্জন সাহার তত্ত্বাবধানে চলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। কেউ কেউ কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে শুরু করেন। এছাড়া গঠন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ। ৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল প্রবেশ করবে এ খবর জেনে সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ফজলুর রহমান ফারুকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় বাংকার খনন শুরু করে। অন্যদিকে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীর একটি দল নাটিয়া পাড়ায় পজিশন নেয়। ৩রা এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে পৌঁছার পর ইপিআর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার সম্মুখিন হয়। এর পর চলে তুমুল প্রতিরোধ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ২২ ইপিআরসহ ১০৭ বাঙালি নিহত হন এবং প্রায় ৩শ জন পাকসেনা হতাহত হয়। ৩ এপ্রিলের যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী মির্জাপুর থানা ও সার্কেল অফিসে ঘাঁটি গেড়ে এলাকায় জ্বালাও পোড়াও এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে। ৭ মে হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোসররা মির্জাপুর গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৩১ বাঙালিকে হত্যা করে। গুলি করে হত্যা করা হয় দেশ প্রেমিক মাজম আলীকে। ্এরপর শুরু হয় পাকিস্তানীদের উৎখাতের পালা। নবেম্বরে মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুরকে পাক বাহিনী মুক্ত করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার পুনরায় দখল করে। এরপর কাদেরিয়া বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধের দুধর্ষ কমান্ডার শাহ আজাদ কামাল, মো. একাব্বর হোসেন এমপি ও মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান ও রবিউলসহ মুক্তিযোদ্ধারা সারাশি অভিযান চালিয়ে ১৩ ডিসেম্বর প্রাণপণ যুদ্ধ করে মির্জাপুরকে পাক বাহিনীর দখল মুক্ত করে এবং তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানে ইউএনও অফিস ) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।
×