ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকাকে সচল রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ ॥ মেয়র আতিক

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকাকে সচল রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ ॥ মেয়র আতিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা হবে স্মার্ট সিটি, তবে অবশ্যই এলাকা ভিত্তিক জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হবে, বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে বিশ্বব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতায় ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য, সমৃদ্ধ এবং ঘাতসহনশীল মেগাসিটিতে রূপান্তর করা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের মাঝে ঢাকাকে সচল রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা একাধারে রাস্তা সংস্কার, প্রকল্পসমূহ চলমান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন, বায়ুদূষণ নিরসনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে যাচ্ছি। এর সঙ্গে আমাদের নতুন বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডেও উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবা দিতেও আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নতুন এলাকাসমূহ গড়ে তোলা হবে আধুনিক ও স্মার্ট সিটির পরিকল্পনা মতো। আমরা উন্নয়ন নক্সার ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক জনসম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ আমরা চাই একটি ভাল স্কুলের জন্য যাতে ধানম-িবাসীকে উত্তরা যেতে না হয়, আবার উত্তরাবাসীকে ধানম-ি আসতে না হয়। কারণ সময়ের মূল্য অপরিসীম, আমাদের সময় বাঁচাতে হবে। একইভাবে নগরবাসী যাতে মসজিদ, বাজার, মার্কেট, শপিংমলসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহ নিজ নিজ এলাকাতেই পায় সেভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা রাস্তায় গণপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ঢাকা বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ২০-২৫ ভাগ জোগান দেয়, আমি মনে করি শুধু যাতায়াতে নষ্ট হওয়া কর্মঘণ্টা বাঁচাতে পারলে এটি আরও উন্নীত করা সম্ভব। তবে ঢাকার মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল ও ব্যস্ত শহরের জন্য মানুষের মোটিভ, চাহিদা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বছরব্যাপী গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা জরুরী। আমাদের মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশনসহ অন্য সেবা সংস্থার সমন্বয় করে কাজ করার বিকল্প নেই। এ সময়ে নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভির কথার সূত্র ধরে রাজউকের মতো রেগুলেটরি ও মনিটরিং অথরিটির নিজেই উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্থাপনা নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ডিএনসিসির মেয়র। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হলো বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দেশের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন করা। আমরা গত ১০ বছরে মাথাপিছু আয় একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে এসেছি যা এখনও ক্রমবর্ধমান। আমরা ইনশাআল্লাহ অল্পসময়ের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টও আমাদের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি কারণ। আমাদের এই বয়সের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তবে এটিও সত্য যে এই হঠাৎ উন্নয়নের জন্যই অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন ঘটেছে। যার ফলে নগর কর্তৃপক্ষ পড়েছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুত, গ্যাস সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন অন্যতম। এর সঙ্গে ভবন নীতিমালা না মেনে ভবন তৈরি করা ও সরকারী জমি অপদখল, জলাধার দখল হয়ে যাচ্ছে। আলোচনায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এমপি বলেন, আমাদের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে, তারা কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও তারা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি মন্ত্রী হওয়ার পরে জরিপ করে দেখলাম, ঢাকা শহরের প্রায় ৬৬% বাড়িই রাজউকের নক্সা মেনে করা হয়নি, তার মধ্যে অনেকেই আবার কোন রকম নক্সা অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করেছেন। আমাদের জানা মতে ঢাকা শহরে প্রায় ১৮০০ নক্সা না মেনে করা বাড়ি আছে যাদের মালিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা ব্যবসায়ীভাবে শক্তিশালী, তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবগত আছেন এবং তার নির্দেশে আমরা এসব নথি আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়েছি এবং তারা কাজ করছেন। গাজীপুরের মেয়রের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের জন্যও একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। তাছাড়া ধানম-ি আবাসিক এলাকায় কোন কমার্শিয়াল স্থাপনা থাকতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা বিকেন্দ্রীকরণ ও আধুনিক আবাসন গড়ে তুলতে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে আবাসিক এলাকায় পর্যাপ্ত জলাধার ও উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ রাখার বিষয়ে। সে নির্দেশনা মতে পূর্বাচলে আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে ৪৫% জমি উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। একইভাবে নতুন আরও দুটি শহর তুরাগ ও বসিলাতে ৭৫% জমিই জলাধার ও উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্য প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ. খান, আন্তর্জাতিক মেট্রোপলিটন সিটি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মি. ফিলিপ ভ্যান রেনেভেল্ড, বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ মি. জন রোম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের পরিচালক ড. মার্সি টেম্বন।
×