ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোপন সৌন্দর্যের গুহা

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

গোপন সৌন্দর্যের গুহা

আমাদের চারপাশে রয়েছে প্রকৃতির অসংখ্য সৌন্দর্য। পাহাড়, নদী, সাগর, গুহা ইত্যাদির অনেক অজানা সৌন্দর্য আমাদের চোখের আড়ালে রয়েছে। এমন কিছু গুহা রয়েছে, যা গোপনে থেকেও আমাদের মাঝে সৌন্দর্য বিলি করছে। লিখেছেনÑ প্রদীপ সাহা মার্বেল কেভ-প্যাটাগোনিয়া, চিলি : চিলির জেনারেল ক্যারেরা লেকের মাঝে রয়েছে নানা রঙের শ্বেত পাথরের তৈরি বেশ কয়েকটি গুহা। জলের প্রতিফলনে সূর্যের আলো পড়লে তা এতই আকর্ষণীয় হয় যে, এমন রঙের খেলা আর কোথাও দেখা যাবে না। দ্য রিড ফ্লুট কেভ-গুয়াংজি, চিন : মাটির নিচে তৈরি এ গুহায় বাতাসের খেলায় নানা সুরের মূর্ছনা তোলে। তাই এর নাম ‘ফ্লুট কেভ’ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে সূর্যের আলোতে স্ট্যালামাইট আর পাথরের পিলারগুলোকে হালকা নীল রঙের মনে হয়। দূর থেকে এ গুহাকে নীল রঙে আঁকা একটি ক্যানভাস বলে অনেকেরই ভুল হবে। ওননদাগা কেভ-লিসবার্গ, আমেরিকা : এ গুহাতে কোনভাবেই দিনের আলো পৌঁছাতে পারে না। আর দিনের আলো পৌঁছায় না বলে এখানে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তাতে এর সৌন্দর্য একটুও কমেনি। সম্পূর্ণ গুহাটি ঘুরে দেখতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে। গ্লো ওয়ার্ম কেভ-নর্থ আইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড : রাজস্থানের সোনার কেল্লা যে পাথরের তৈরি, সেই একই পাথরে তৈরি হয়েছে এ গুহাটি। এ গুহার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিউজিল্যান্ডে এক রকমের কেঁচো দেখা যায়, যা অন্ধকারে জ্বলে। গুহার মধ্যে এ ধরনের লাখ লাখ কেঁচো দেখা যায়। অন্ধকার দেয়ালের গায়ে বা গুহার ছাদে এরা এমনভাবে লেগে থাকে, দেখে মনে হবে উজ্জ্বল নক্ষত্র ভরা আকাশের নিচে আপনি বসে আছেন। ক্রিস্টাল এ্যান্ড ফ্যান্টাসি কেভ-হ্যামিল্টন পারিশ, বার্মুডা : বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গুহাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। গুহাটি প্রায় ৫শ’ মিটার লম্বা ও ৬২ মিটার গভীর। কিন্তু নৌকায় বসে এর তলদেশ স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলের জন্যই এ গুহার নাম ‘ক্রিস্টাল কেভ’ রাখা হয়েছে। গুহার ছাদ থেকে বটের ঝুরির মতো অসংখ্য স্ট্যালামাইটের ঝুরি নিচে নেমে এসেছে। প্রচলিত আছে, যদি ছাদ চুঁয়ে এক ফোঁটা জল কারও গায়ে পড়ে, তবে তিনি অসম্ভব ভাগ্যশালী। এ¯্রেিসনওয়েল্ট কেভ-সালজবার্গ, অস্ট্রিয়া : এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বরফের গুহা। গুহাতে এমনভাবে বরফ জমে থাকে, যা দেখে মনে হয় প্রকৃতি বড় বড় দরজা খুলে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। জার্মান ভাষায় ‘এ¯্রেিসনওয়েল্ট’ মানে বরফ-দৈত্যদের জগত। গুহার মাপ দেখলে একে অবশ্য দৈত্যই বলা যায়। প্রায় ৪২ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো রয়েছে এ গুহা। সঙ্গে রয়েছে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। ব্লু গ্রোতো কেভ-কাপ্রি, ইতালি : নামেই বোঝা যায় গুহার সব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। ইতালিতে ‘গ্রোতো’ মানে গুহা। সমুদ্রের মধ্যে ৫০ মিটার লম্বা এ গুহায় সূর্যের আলো জলের মধ্যে থেকে প্রবেশ করে গোটা গুহাটিকে নীল করে তুলে। এর সৌন্দর্য সত্যি অসাধারণ। সন দোঙ কেভ-কুয়াং বিন, ভিয়েতনাম : এ গুহাগুলো ২০০৯ সালে আবিষ্কৃত হয়। এখনও পর্যন্ত এটি বিশ্বের বৃহত্তম গুহা বলেই পরিচিত। ভিয়েতনামের ঘন অরণ্যের মধ্যে প্রায় একদিন চলার পর এ গুহার কাছে পৌঁছানো যায়। মাটি থেকে প্রায় ৮০ মিটার উঁচুতে গুহামুখ রয়েছে। গুহাতে চড়তে বেশ কষ্ট করতে হয়। কিন্তু একবার পৌঁছতে পারলে নৈসর্গিক দৃশ্যে মুগ্ধ হতেই হবে। ফিঙ্গালস কেভ-স্টাফা, স্কটল্যান্ড : স্কটল্যান্ডের স্টাফা আইল্যান্ডের গা ঘেঁষে রয়েছে গুহাটি। এর দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, সম্পূর্ণ গুহার প্রত্যেকটি পিলার ষড়ভূজ। দ্বিতীয়ত, গুহার মধ্যে একটা কথা বললে তার নানারকম প্রতিধ্বনি শোনা যায়। সত্যিই দারুণ অসাধারণ এ গুহাটি। কার্লসবাড কেভ-নিউ মেক্সিকো, আমেরিকা : এটি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম গুহা। আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি লোক দেখতে যান এ গুহাটি। এর মধ্যে একটি ঘর রয়েছে যা ৪ হাজার ফুট লম্বা, ৬২৫ ফুট চওড়া। এটি মাটি থেকে ছাদ পর্যন্ত প্রায় ২৫৫ ফুট উঁচু। গুহাটি প্রাকৃতিক আলোয় আলোকিত। কিন্তু নানা রঙের ক্যানভাস দেখলে তা মনে হবে না। বাতু কেভ-গোম্বাক, মালয়েশিয়া : রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এ গুহা। কথিত আছে, গুহাটি ৪০ কোটি বছরের পুরনো। গুহার সামনে হিন্দু দেবতা মুরুগানের বিশাল আকারের একটি মূর্তি রয়েছে। ২৭২টি সিঁড়ি অতিক্রম করে গুহা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক এবং তীর্থযাত্রী এখানে ভিড় করেন।
×